‘আলতা বানু’ নিয়ে যা বললেন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির পরিচালক

Looks like you've blocked notifications!

‘আলতা বানু’ ছবিটি সারা দেশের পাঁচটি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে গতকাল শুক্রবার। ছবিটি দেখে  সামাজিক যোগাযোগ  মাধ্যম ফেসবুকে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ খ্যাত ছবির পরিচালক দীপঙ্কর দীপন গতকাল  একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

প্রথমেই তিনি লিখেছেন, ‘প্রসঙ্গ : আলতাবানু। আমার বিশ্বাস ছিল, অরুনদা ভাল করবেন কিন্তু এতটা ভাল করবেন আর এতটা আধুনিক সিনেমা বানাবেন, আমি সত্যিই আশা করিনি। কারণ আমি জানতাম কতটা কম বাজেট, কতটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে তাকে কাজটা করতে হয়েছে। স্যালুট অরুন দা।শহরের সাথে খুব পাল্লা দিয়ে বদলাচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামগুলো। পাল্টাচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি, হচ্ছে নতুন ও পুরনো বিশ্বাসগুলোর মিশ্রন। তাই আজকের সিনেমায় বদলে যেতেই হবে চরিত্র , চরিত্রের ঘটনা এবং পরিণতিগুলো । সেই পরিবর্তনের হাওয়াটা অনুভব করা যায় জালালের গল্পে, মাটির প্রজার দেশে আর আলতাবানুতে। বদলে যাওয়া বাংলাদেশের মাটি আর মানুষের নতুন গল্প।’

দীপঙ্কর দীপন  জানান, আলতা বানু আমার কাছে আজকের দিনের শেষের কবিতা। তিনি বলেন, ‘শেষের কবিতার মূল উপজীব্য ছিল যুগসন্ধিক্ষণ, সেটার একটা ২০১৮ সালের রূপ আছে আলতা বানুতে। কুসংস্কার, সাইবার ক্রাইম, নারীবাদ, ওমেন ট্রাফিকিং, ছাত্রনেতা, ভাল-খারাপ দু ধরণের পুলিশিং, গার্মেন্টস, সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্ট অন ওয়ারকিং এরিয়া, ভায়োলেন্ট দিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ- তাও আবার ভিকটিম নারীর, দুটো ভিন্ন চেহারার দুটি আধুনিক নারী, জঙ্গীবাদের ইঙ্গিত, প্রতারণা, অব্যক্ত প্রেম- সমসাময়িক অনেক কিছু এসেছে আলতা বানুতে- কিন্তু সবচেয়ে অভাবনীয় বিষয় হচ্ছে এত সব কিছুতে ফোকাস সরেনি- বড়বোনের ছোট বোনকে খুঁজে বেড়ানোর জার্নিটার পরতে পরতে মিশে গেছে কনটেমপরারি কনন্টেন্ট গুলো।’

দীপঙ্কর দীপনের  মতে দর্শককে ধরে রাখার ক্ষমতা রেখেছে ‘আলতা বানু’। তিনি বলেন, ‘আমার দুপুর ১ টায় একটা জরুরী কাজ ছিল, যেখানে ছবি শেষ হতে হতে পোনে দুটা। আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম, ঘন্টা খানের আগে বেরিয়ে যাব, পারিনি, অরুনদা বসিয়ে রেখেছেন, কাজের বারোটা বাজিয়েছেন।তাতেও অনাবিল সুখ একটা দেশী চলচ্চিত্রই তো আটকে রেখেছে। বাংলাদেশের এক একটা ভাল সিনেমা আমার বুকের ছাতি আরেক ধাপ বড় করে দেয়।’

ছবির অভিনয়শিল্পীদের  প্রসঙ্গে দীপঙ্কর দীপন বলেন, ‘মমর অভিনয়ের ক্ষমতার সাথে আমি পরিচিত। ‘ছুঁয়ে দিল মন’ ছবিতে তাঁর ছিটে ফোটাই পেয়েছি। এখানে অনেকটা। স্যালুট করার মত পারফরমেন্স,গর্ব করার মত শিল্পী। মিলন ভাই - আহা । বিদেশের ওমেন ট্রাফিকিং এর সাথে যুক্ত ভালমানুষের মুখোশ পড়ে থাকা নায়ক চরিত্রের পরিণতিতে হয়ে উঠে প্রেমিক-ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে মার খেয়ে ভুত হয়ে যায় কিন্তু ভেতরের মানুষটা জেগে উঠে। কী সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে চরিত্রটি। আহা মিলন ভাই অনেকদিন পর তোমাকে পেলাম। রিক্তা, রমিজ রাজু, অন্তু, সাবেরী আপা, দিলারা মা  কাকে বাদ দিয়ে কার কথা বলি । ভাল অভিনয়ের মেলা বসেছে আলতা বানুতে। যারা বলে আমাদের ভাল অভিনয় শিল্পী  তাদের বলি আসেন আলতা বানু দেখেন। স্বপ্নজাল দেখেন। আয়না বাজি দেখেন, নিজের দেশের প্রতিভাকে মূল্যায়ন করতে শেখেন। তবে এর পেছনে একজন অরুন চৌধুরী, একজন গিয়াস উদ্দীন সেলিম লাগে, একজন অমিতাভ রেজা চৌধুরী লাগে তাও আমাদের আছে । আছে আরো অনেক নাম। অনেক মেধাবী নির্মাতা।’

‘আলতা বানু’ ছবির গল্প মানবিক বলে জানান দীপঙ্কর দীপন। তিনি বলেন, ‘আলতা বানু ছবির শেষে গিয়ে আর দুটি বোনের গল্পে হয়ে থাকে না। মানবতার গল্প হয়ে উঠে। স্পয়লারের কারণে ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না। আর সেখানেই আলতাবানু একটি মহৎ সিনেমা হয়ে উঠে। আহা। বন্ধুরা আমাকে বলে আমি নাকি কোন সিনেমাকে ভাল বলতে শুরু করলে অনেক বেশি ভাল বলে ফেলি, ভুল ক্রটি গুলো আমার চোখে পড়ে না। চোখে পড়ে, কিন্তু সেগুলো আমার কাছে বড় হয়ে উঠেনা। কারণ আমিতো জানি সীমাবদ্ধতা গুলো কোথায়? অন্যকে টেনে নামানোর দৌড়ে আমি নেই। সম্ভাবনা দেখলে চাতকের মত তাকিয়ে থাকি। একটা ভাল সিনেমার আশায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সম্ভাবনাময় দিকগুলো তুলে ধরতে ধরতে আমরা একটি সারা বিশ্বের কাছে সম্ভাবনাময় চলচ্চিত্রের দেশ হয়ে উঠবো।’

দীপঙ্কর দীপন আরও বলেন, ‘আপনার পছন্দ নাও হতে পারে এরকম কিছু কিছু বিষয় আছে আলতা বানুতে- তবে পজেটিভ মন দিয়ে দেখলে সেগুলো আপনি ইগনোর করতে পারবেন অনেক অনেক ভাল বিষয়ের ভীড়ে। ইনফ্যাক্ট সেগুলো নিয়ে কথা বলার সময়ই পাবেন না। তবে একটা বিষয় অরুনদা চাইলে পারতেন গানে একটু জোর দিতে। তাহলে আমরা পুরনো কিছু গানের নতুন রুপ না পেয়ে নতুন কিছু গান পেতাম, সেটা বেশি আবেদনও রাখতো হয়তো। সম্পাদনা খুব ভাল, ব্যাক গ্রাউন্ড স্কোর ঠিক মানিয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় আলতা চরিত্রের অস্থিরতা খানিকটা সিনেমাটাকে সংক্রমণ করেছে আর তাতেই জাস্টিফিকেশন হয়েছে অস্থিরতাটা, তবে দু একবার থিতু হয়ে বসলে কাঁদলে  কাঁদালে খারাপ লাগতো না হয়তো।

আমাদের কাজটা কী এবার? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এটা। আলতা বানুর প্রচার এত কম কেন, এত কম হল কেন? এরকম ভাল অনেক ছবি এক সপ্তাহ পরে হল থেকে নেমে গেছে আসুন না আলতা বানুর পাশে দাঁড়াই। অরুন দা নিভৃতচারী মানুষ তাঁর পাশে গিয়ে না দাঁড়ালে তিনি হয়তো একলাই যতটা পারবেন লড়ে যাবেন। আলতা বানুর কথা ছড়িয়ে দেই। আলতা বানু হলে গিয়ে দেখি। অন্যকে দেখতে বলি। আলতাবানুর পাশে দাঁড়ান। একবারে খাঁটি একটি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের পাশে দাঁড়ান।বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ান। দেশটা আমাদের। চলচ্চিত্র আমাদের।ভালবাসা আমাদের। তাই পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। আর আলতা বানু সেটা ভালমতই ডিসার্ভ করে।’

অরুণ চৌধুরী পরিচালিত ‘আলতা বানু’ ছবিটি ফরিদুর রেজা সাগরের গল্প অবলম্বনে সংলাপ লিখেছেন বৃন্দাবন দাস।ছবির প্রধান দুই চরিত্রে আলতা ও বানু হয়েছেন যথাক্রমে জাকিয়া বারী মম ও ফারজানা রিক্তা। তাঁদের বিপরীতে আছেন আনিসুর রহমান মিলন। ছবিটি প্রযোজনা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম।