রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটালেন আঁখি
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েছেন আঁখি আলমগীর গতকাল সোমবার। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন তিনি। রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ ভালো সময় কাটিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় এই গায়িকা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার পেছনের গল্প ও অন্যান্য অনেক বিষয় নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন আঁখি আলমগীর।
আঁখি লিখেছেন, “গত ১৩ মে ম্যানচেস্টারে ইকবাল ব্রাদার্স ফাউন্ডেশন রোহিঙ্গাদের জন্য ফান্ড রেইজিং করতে একটি অনুষ্ঠানে আমাকে গান গাইতে আমন্ত্রণ করে। আমরা রাজি হই, সফল একটি প্রোগ্রাম হয়। চ্যারিটি শো আগেও করেছি, তবে ফান্ড রেইজিং ব্যাপারটা ভিন্ন যা এই প্রথম দেখলাম। উচ্চবিত্তরা প্রোগ্রামে আসেন এবং ইচ্ছেমত ডোনেশন ঘোষণা করেন সর্বসম্মুখে, পশ্চিমি দেশগুলোতে বিত্তবানরা এভাবেই ‘good cause’ গুলোয় এগিয়ে আসে। তো যে অনুষ্ঠানে আমি গান করলাম এবং অবশ্যই সবাইকে সাহায্যের হাত বাড়াতে উৎসাহিত করলাম, সেখানে বেশ মোটা অঙ্কের অর্থ জমা হলো। আমার কাজ এখানেই শেষ করা যেত। কিন্তু শেষ হলো না, বরং শুরু হলো। ফাউন্ডেশনটি চাইলো এই কাজে আমাকে সাথে রাখতে। (এখানে বলে রাখি এটি কিন্তু UK based একটি সংগঠন) দিন ক্ষণ অনেক আগেই বুক করা ছিলো কারণ উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে এখন বাংলাদেশ আর্মি নিয়োজিত, কাজেই তাদের সহযোগিতা ছাড়া কারো পক্ষে ওখানে যাওয়া সম্ভব না।”
রোহিঙ্গাদের মধ্যে চাল, ডাল, শুকনা খাবার বিতরণ করেছেন বলে জানিয়েছেন আঁখি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু মিটিং, পরিকল্পনা শেষে আমরা আজ ভোরে উখিয়া যাই, ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ইকবাল আহমেদ, উনার পরিবার, আর্মি অফিসার্স, দোভাষী, আমিসহ আরো অনেকে। চাল, ডাল, শুকনা খাবার শান্তিপূর্ণভাবে বিতরণ করা হয়। আরো কয়েক দফা করা হবে। রোজা রেখে রোদের নিচে ৪/৫ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আমরা কাজ শেষ করি। আমরা তাদের ঘরগুলো ঘুরে দেখি। কথা বলি, বাচ্চাদের আদর করি। তারা কিন্তু মূলত চাটগাঁর ভাষায় কথা বলে যা আমাকে অবাক করেছে।’
রোহিঙ্গাদের ওপরে বর্বরোচিত হামলার কথা জানিয়ে আঁখি বলেন, ‘এবার আসি আসল প্রসঙ্গে। রোহিঙ্গাদের ওপরে বর্বরোচিত হামলার কথা আমরা সবাই জানি। ছোট ছোট শিশুদের সামনে তাদের বাবাকে পুড়িয়ে হত্যার ভিডিও কমবেশি সবাই দেখেছি। আমরা জানি ওদের মা-বোনদের ওদের সামনেই ধর্ষণ করা হয়েছে। কেউ মৃত কেউ জীবন্মৃত। চারদিকে অনেক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা দেখেছি আজ। মাইলের পর মাইল হেঁটে এসেছে একটু চাল-ডালের জন্য। ডায়রিয়া, চর্মরোগ হচ্ছে অনেকেরই। মেডিসিন দেওয়া হয়, কিন্তু কত? আর মিয়ানমারে বাচ্চাগুলো নৃশংসতা তো দেখেছেই, সেই সাথে যোগ হচ্ছে অশিক্ষা। মানে আমাদের দেশে আবস্থানরত ১২ লক্ষ (আর্মিদের দেওয়া তথ্য) রোহিঙ্গার প্রায় সাড়ে ছয় লাখ শিশু বেড়ে উঠছে ভয়ংকর এক মনস্তত্ত্ব নিয়ে যারা কিনা চেনে শুধুমাত্র নৃশংসতা, যারা কোন কাজ বা পড়াশোনার কিছুই শিখতে পারছে না। আর এই সংখ্যা তো বাড়বেই আরো। আমার বা আমাদের মূল লক্ষ সেখানেই। খাদ্য বা মাথা গোঁজার ঠাঁই এখন তাদের দেওয়া হলেও মূল সমস্যার সমাধান করতে হবে তাদেরকে পুনর্বাসন করে। এই জনবহুল দেশে তাদের আসলে আমরা কিছুই দিতে পারব না।’
আঁখি আরো বলেন, ‘আমাদের নিজেদেরও অনেক সমস্যা আছে। তবে অনেক পশ্চিমা দেশ আছে, যাদের আয়তনের এবং resource এর চেয়ে জনসংখ্যা কম। সেই দেশগুলোর প্রতি আবেদন করা, সবাইকে সচেতন করা এবং সমাধানের আগ পর্যন্ত সাহায্য করাই আমাদের সবার দায়িত্ব। awareness জাগানোটা জরুরি কারণ এটি একটি বড় থেকে গুরুতর সমস্যা হতে পারে ভবিষ্যতে।’
‘খুব গুছিয়ে লিখতে পারলাম না হয়তো। ৫ মিনিটের একটা ভিডিও শেয়ার করলাম। সেখানেও গুছিয়ে বলতে পারিনি কারণ রোদের তাপ, তৃষ্ণা আর পাহাড়ে উঠে সব দেখে বড় ক্লান্ত ছিলাম। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ বর্তমানের কষ্টের সাথে ভবিষ্যতের অজানা ভয় আমাকে নাড়া দিয়েছে, কারণ সবার ঊর্ধ্বে আমি আমার দেশকেই ভালোবাসি। রোহিঙ্গাদের শীঘ্রই পুনর্বাসন বা স্থানান্তর করা হোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন। উনাকে স্যালুট জানাই। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর এগিয়ে আসা এখন সময়ের চাহিদা মাত্র। সোচ্চার হতেই হবে। সর্বশেষে আমি আল্লাহতায়ালাকে শুকরিয়া জানাই ভালো কাজটিতে আমাকে কাজ করার তৌফিক দেওয়ার জন্য এবং ইকবাল ব্রাদার্স ফাউন্ডেশনকে অসংখ্য ধন্যবাদ, সব সময়ই কোনো না কোনো ইস্যুতে বিদেশে থেকেও দেশকে স্মরণ করার জন্য।’