সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে ইফতার করলেন তানিন সুবহা

Looks like you've blocked notifications!

‘ঘরে বসে আমি শাড়িতে সুতোর কাজ করছিলাম। এমন সময় দুটি মেয়ে ও একটি ছেলে এসে আমার কাছে আমার মেহরিমাকে চাইল, তারা নাকি পড়াবে। প্রথমে আমার মনে সন্দেহ হলো। তারপর শুনলাম, পাশের বাসার জেসমিনও নাকি তাদের স্কুলে পড়তে যায়। মনে সাহস হলো। পরে তারা জানাল, এখানে পড়তে কোনো টাকা লাগবে না। বই খাতা কলম, মাঝে মাঝে কাপড়ও নাকি দেবে। শুনে চোখে পানি চলে এলো। মেহরিমার বাবা মারা গেছে দুই বছর হলো। মেয়ের পড়ার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়েছিলাম। এখন আমার মেহরিমা পড়তে পারবে।’ গতকাল সোমবার ইফতার করতে এসে নিজের মেয়েকে নিয়ে এভাবেই এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন ঠাকুরগাঁও থেকে আসা মেহরিমার মা ইসরাত জাহান।

গতকাল ১১ জুন সোমবার মিরপুরের এক কমিউনিটি সেন্টারে ৩০০ ছিন্নমূল শিশুকে ঈদের নতুন জামা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে ‘প্রবর্তন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন’। সমাজের পিছিয়ে পড়া ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে সংগঠনটি কাজ করছে। গতকাল ছিন্নমূল শিশুদের সঙ্গে উপস্থিত হন মায়েরাও। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চিত্রনায়িকা তানিন সুবহা। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ গনি মিয়া। আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ঢাকা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম।

সংগঠনের শুরুটা জানতে চাইলে ‘প্রবর্তন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন’-এর সায়মুম আক্তার সায়লা বলেন, ‘একদিন আমরা বন্ধুরা পার্কে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এমন সময় ছোট শিশুরা এসে টাকা চাইল। তখন আমাদের মনে হলো, এদের সবাই টাকা দেয়, কিন্তু কতটা আসলে উপকার হয়? বন্ধুরা মিলে একজন শিশুর বস্তিতে যাই। তারপর আমরা সবাই মিলে তার বাবাকে একটা রিকশা কিনে দিই। কিছু শিশুকে চিকিৎসা করাই। এই করতে করতে ২০১৫ সালে এই সংগঠন তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের কাছে এত মানুষ সাহায্য চাইতে থাকে যে আমরা চিন্তায় পড়ে যাই। এত মানুষের পাশে আমরা কীভাবে দাঁড়াব? তারপর আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই যে আমরা একেকটা শিশুকে যদি শিক্ষিত করতে পারি, তা হলে তারা শুধু পরিবার নয়, দেশের হালও ধরতে পারবে। এই চিন্তা থেকে আমরা মিরপুর ১০ নম্বরে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করি গত জানুয়ারিতে। এখানে ৭০টি শিশু পড়ছে, আগামীতে আমরা আরো বাড়াব।’

কীভাবে চলছে এই সংগঠন জানতে চাইলে সায়লা বলেন, ‘আমরা মোট ৫০ জনের মতো সদস্য আছি এই সংগঠনে। দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ আছে এখানে। আমরা নিজেদের টাকায় চালাচ্ছি স্কুলটি। মাসে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। যদি টাকা কম পড়ে তা হলে আমরা গ্রুপ করে ভিক্ষা করতে বের হই। আবার আজকের এই ইফতারে নায়িকা তানিন আপু আমাদের সাহায্য করেছেন। এমনভাবে যাঁরা সাহায্য করতে চান, তাঁদের সাহায্য নিই। আমরা আপাতত একটা রুম নিয়ে স্কুলটি করছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

কাজী রোজী বলেন, ‘আমি অনেকবার শুনেছি এদের কথা, কিন্তু আজ নিজে না এলে বুঝতে পারতাম না, এদের এই এত বড় আয়োজন। এখানে কিছু শিশু বয়সী ছেলেমেয়ে সংগঠনটি চালাচ্ছে। যদি সমাজের বড় মানুষরা পাশে দাঁড়ায়, তাহলে এই বাংলাদেশ আরো সুন্দর হবে।’

নায়িকা তানিন সুবহা বলেন, ‘আমি এমন একটি অনুষ্ঠানে এসে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এখানে শিশুদের সঙ্গে ইফতার করেছি, সেটিও জীবনের অনেক বড় পাওয়া। শিল্পী হিসেবে অনেক অনুষ্ঠানে যেতে হয়, আবার অনেককে দাওয়াত করে খাওয়াতে হয়। কিন্তু এই সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে একদিন ইফতার করতে পেরে নিজের কাছে অনেক ভালো লাগছে।’