নাসরিন স্মরণ করলেন দিলদারকে
বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা দিলদার। শুধু কৌতুক অভিনয় দিয়েই মানুষের মন জয় করেছিলেন তিনি। আজ থেকে ১৫ বছর আগে তিনি মারা যান। ১৯৭২ সালে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন তিনি। ‘তুমি শুধু আমার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ২০০৩ সালে।
অভিনেত্রী নাসরিনের শুরুটা দিলদারের সঙ্গে জুটি বেঁধে। তাঁরা শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন একসঙ্গে। দিলদারে স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নাসরিন বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই দিলদার ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। রাস্তায় বেরোলে সবাই আমাকে দিলদারের নায়িকা বলে ডাকত। তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম, অনেক কিছুই বোঝার বয়স হয়নি। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়েছি। পর্দায় আমরা নায়ক-নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছি। কিন্তু পর্দার বাইরে আমরা ছিলাম বাবা-মেয়ের মতো। দিলদার ভাই আমাকে মেয়ের মতো আদর করতেন। আমি তাঁকে বাবার মতো সম্মান করেছি। দিলদার ভাইয়ের জন্ম ও মৃত্যুর দিনটি এলে তাঁর কথা ভেবে চোখে পানি চলে আসে। মনে হয় বাবার মতো একটি বন্ধুকে হারিয়েছি।’
দিলদারকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নাসরিন বলেন, ‘শুটিং ইউনিটে আমাদের সবাই পাগলা-পাগলি বলে ডাকত। তার কারণ আমি দিলদার ভাইকে পাগল বলে ডাকতাম। উনিও আমাকে পাগলি বলে ডাকতেন। আমিও সব সময় দুষ্টু মেয়ের মতো তার পিছু লেগে থাকতাম। তবে শুটিংয়ের সময় আগে ও পরে তিনি আমাকে সিক্যুয়েন্স বুঝিয়ে দিতেন। কোন জায়গাটা কেমন করতে হবে, কেন করতে হবে, ক্যামেরার সামনে গেলে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সবকিছু তিনি আমাকে বুঝিয়ে বলতেন। তখন আমার বয়স ১২ বছর। আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম।’
নাসরিন আরো বলেন, ‘আসলে শুধু দিলদার ভাইয়ের কথা কেন, আমরা যখন কাজ করেছি তখন সবাইকে নিজের মনে হতো। আমরা প্রত্যকে প্রত্যেকের বাসার খবর জানতাম। কার বাচ্চার স্কুলে ভর্তি হবে, কার বাচ্চা স্কুলে পাশ করেছে। কার বাসায় কে অসুস্থ। শুধু জানতাম তা নয়, আমরা এই বিষয়গুলোতে একে অপরের পাশে দাঁড়াতাম। আমাদের মধ্যে ছিল মনের সেতুবন্ধন। এখন একজন মৃত্যুর ১৫ বছর পরও আমরা চোখের পানি ফেলছি। কিন্তু আমরা মারা গেলে হয়তো কেউ মনেও রাখবে না। সবার কাছে দোয়া চাই দিলদার ভাইয়ের জন্য। অনেক সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন তিনি। তিনি যেন পরকালে সুন্দরভাবে থাকেন।’
১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন দিলদার। ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে মারা যান তিনি। ১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ নামের চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন দিলদার। শুধু কৌতুক অভিনেতা নয়, নায়ক হিসেবে কাজ করেছেন ‘আব্দুল্লাহ’ ছবিতে। নায়িকা নূতনের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করা এই ছবিটিও জনপ্রিয়তা পায়।