নাটকের সব টাকা নিয়ে যাচ্ছে দুই চরিত্র

Looks like you've blocked notifications!

এখন আর আগের মতো নাটক নির্মাণ হয় না। বেশিরভাগ নাটকেই কোনো পরিবার থাকে না। শুধু নায়ক-নায়িকার ওপর ভর করেই নির্মাণ হচ্ছে নাটক। নাটকের সব টাকা নিয়ে যাচ্ছে এই দুটি চরিত্র, যে কারণে পরিবার ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে নাটক।

বর্ষীয়ান অভিনেতা ও নাট্যনির্দেশক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি এখন আর নাটক নির্মাণ করছি না। এর কারণ দুটা চরিত্র যদি সব টাকা নিয়ে যায় তাহলে আমরা কীভাবে বাকি শিল্পীদের টাকা দেব? আর মাত্র দুজন শিল্পী নিয়ে অনেকেই নাটক নির্মাণ করছেন। কিন্তু আমি তো তা পারি না। আমি গল্প চিন্তা করলেই দেখি একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে কিছু ছেলেমেয়ে। নাটকে যারা অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন তারা যেমন অন্যায় করছেন, তেমতি যারা বেশি টাকা দিয়ে নিচ্ছেন তারাও অন্যায় করছেন।’ 

বিষয়টি নিয়ে অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু বলেন, ‘আসলে ছোট শিল্পীরা টাকা পান না এমনটা ঠিক নয়। কারণ এখন শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালকদের আলাদা সংগঠন আছে। যে কারণে টাকা না দিয়ে কাজ করালে জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি হয়েছে। দেখা যায় যে পরিচালক তার ড্রাইভারকে দিয়ে শট নেন, পাশের পরিচিত জনকে দিয়ে অভিনয় করান। কারণ শিল্পী দিয়ে অভিনয় করার বাজেট নেই। এতে নাটকের মান খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক। আমি মনে করি বিষয়টির সমাধান হওয়া প্রয়োজন। আর টেলিভিশন ও এজেন্সিগুলোকে এসব দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।’

নাট্য নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টর গিল্ডসের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে অনেকের সাথেই কথা বলেছি। আমরা খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করব। তবে আমরা একা কাজটি করতে পারব না। আমাদের নাটকের শিল্পী, প্রযোজকদের সংগঠনও আছে। আমরা তাদের সাথে বলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। এরই মধ্যে আমাদের মৌখিকভাবে কথা হয়েছে। আশা করি তিন সংগঠন মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’

নাট্যকার আকাশ আহমেদ বলেন, ‘আমরা যখন নাটক লিখি তখন পরিচালক বলে দেন যে দুটি চরিত্রের ওপর ভর করে গল্প শেষ করতে হবে। লোকেশন যেন বেশি না হয়। এক লোকেশনে গিয়ে পুরো কাজটি শেষ করতে হবে। আর নায়ক নায়িকার কোনো পরিবার দেখানোর প্রয়োজন নেই। তখন আমাদেরও কিছু করার থাকে না। কৌতুকনির্ভর গল্প দিয়ে কোনোভাবে গল্প শেষ করি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক বলেন, ‘আমাদের আসলে কিছু করার নেই। কারণ টিভি থেকে বলে দেওয়া হয় এই গল্পের জন্য কাকে দিয়ে কাজ করাতে হবে। আমরা যখন সেই শিল্পীর কাছে শিডিউলের জন্য যাই তিনি নাটকের অর্ধেক টাকা দাবি করেন। এখন একটা নাটকে যে বাজেট থাকে তার থেকে ৭০ ভাগ টাকা নিয়ে নেন নায়ক ও নায়িকা। আমরা কীভাবে পরিবার নিয়ে সুন্দর একটি নাটক নির্মাণ করব। এখন যদি আমি আমার নাম প্রকাশ করে কথাগুলো বলি তাহলে আমাকে আর শিল্পীরা শিডিউলই দেবেন না। তখন বেশি টাকা দিয়েও শিল্পী পাব না।’ 

অভিনেতা তমাল মাহবুব বলেন, ‘আসলে আমরা যারা ছোট শিল্পী আছি তারা এই কারণে অনেক সময় টাকা কম পাই। নাটকের মূল শিল্পী যে টাকা নেন, আমরা তার দশ শতাংশ পেয়ে থাকি। আর অনেক শিল্পী আছেন, যাঁরা টাকাই পান না। এই বিষয়ে কিছু বলারও থাকে না। কারণ আমরা জানি কোন শিল্পী কত টাকা নিচ্ছেন আর নাটকের বাজেট কত।’

টেলিভিশন নাটকে নায়ক ও নায়িকা এই দুই চরিত্রের জন্য কয়েকজন শিল্পীই ঘুরেফিরে অভিনয় করেন, এই অবস্থারও পরিবর্তন দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।