চলচ্চিত্রে ‘বাবা’ চরিত্রে শিল্পী কম পাওয়া যায়

Looks like you've blocked notifications!

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শুধু নায়ক বা নায়িকা নয়, সংকট রয়েছে অন্যান্য চরিত্রাভিনেতারও। বয়স্ক চরিত্রের মানুষ বা নায়ক-নায়িকার বাবা অথবা চাচার চরিত্র করার মতো শিল্পী হাতেগোনা কয়েকজন রয়েছেন। এমন শিল্পী সংকটে অনেক টানাটানি করে কাজ করতে হয় নির্মাতাদের।

পরিচালক মিজানুর রহমান মিজান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তোলপাড় ও রাগী নামে আমি দুটি চলচ্চিত্র এখন নির্মাণ করছি। কিন্তু কোনো ছবিতে আমি কোনো বাবার চরিত্র রাখিনি। কারণ বাবার চরিত্র নিয়ে কাজ করার মতো শিল্পী এখন আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নেই বললেই চলে। দু-একজন বাবার চরিত্রে কাজ করছেন, কিন্তু তাঁদের শিডিউল পাওয়া কঠিন। কারণ এক-দুজন বাবা তো আর ইন্ডাস্ট্রির পঞ্চাশটি ছবি করতে পারবে না।’

নায়ক ফারুক, আলমগীর, সোহেল রানা, আলী রাজ, সাদেক বাচ্চু, প্রবীর মিত্র, সুব্রতদের মতো শিল্পী থাকতে কেন এই সংকট জানতে চাইলে পরিচালক সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য পরিচালক অপূর্ব রানা বলেন, ‘আসলে আলমগীর ভাই নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। তারপরও উনাকে দিয়ে বাবা চরিত্র করানো যাবে। আবার সব ধরনের বাবার চরিত্রে তিনি অভিনয় করবেন না। আর ফারুক ভাই তো আপাতত কোনো ছবিতেই অভিনয় করছেন না। সোহেল রানা ভাই এখন কিছুটা অসুস্থ। অন্যদের আরো অন্য ব্যস্ততা থাকে। বাবা চরিত্রে শিল্পী খুঁজে পাওয়ার কষ্টকর আসলে।’

আলী রাজ ও সাদেক বাচ্চুকে নিয়ে অপূর্ব রানা বলেন, ‘আলী রাজ ভাই আমার একটি ছবিতে বাবার চরিত্রে কাজ করেছিলেন এবং সেই ছবির জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন। বছরে পঞ্চাশটি সিনেমা নির্মাণ হলে তার মধ্যে তিনি হয়তো ১২টা ছবিতে বাবার চরিত্র করতে পারবেন। কারণ চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গেলে একটু বেশি সময় প্রয়োজন হয়। সাদেক বাচ্চু ভাই দীর্ঘদিন ধরেই খল চরিত্রে কাজ করছেন, যে কারণে উনাকে দিয়ে বাবার চরিত্র হবে না।’

ছোট পর্দার আবুল হায়াৎ, মাসুম আজিজ, তারিক এনাম খানকে নিয়ে অপূর্ব রানা বলেন, ‘ছোট পর্দার শিল্পীরা একসময় চলচ্চিত্র কাজ করলেও এখন আর তেমন আগ্রহ দেখান না। কারণ এতগুলো টিভিতে কাজ করার পর তাদের পক্ষে আর শিডিউল দেওয়ার মতো সময় থাকে না। উনারা দু-তিন দিন শুটিং করে একটি নাটক শেষ করেন, সেখানে চলচ্চিত্রের জন্য টানা এক মাস শিডিউল তারা দিতে পারেন না। এর মধ্যে মাসুম আজিজ ভাইকে দিয়ে গরিবের বাবা হয়, আর তারিক এনাম খানকে দিয়ে করানো যায় বড়লোকের বাবা। কিন্তু এক-দুজন শিল্পী নিয়ে চিন্তা করা যায় না। শিডিউল মেলানো যায় না।’

সম্প্রতি ‘দাগ’ শিরোনামে একটি ছবির কাজ শেষ করেছেন পরিচালক তারেক শিকদার। তিনি বলেন, “আমি সারা জীবন চাষী (চাষী নজরুল ইসলাম) ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। তখন আমরা গল্প নির্বাচন করতাম পারিবারিক। এখন আর তা হয় না। কারণ শিল্পী নেই। আমি কিছুদিন আগে ‘দাগ’ শিরোনামে একটি ছবি শেষ করেছি। সেখানে বাবার চরিত্র নিয়ে আমাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। শেষে সেলিম আহম্মেদ নামের এক ভদ্রলোক আছেন, তিনি শখের বশে অভিনয় করেন। একসময় নাটক ও মঞ্চে কাজ করতেন। বেশ কিছু সিনেমায়ও কাজ করেছেন। উনাকে দিয়ে বাবার চরিত্র করিয়েছি। আমাদের বেশ কিছু তারকা শিল্পী আছে, তাদের কাছে গিয়েছিলাম। উনারা নিজের ওপর গল্প টেনে নিতে চান। আরে ভাই, আমি একটা গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র বানাচ্ছি, সেখানে শিল্পী দরকার। আমি তো কোনো একজন শিল্পীকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য চলচ্চিত্র করছি না। আর শুধু বাবা নয়, আমাদের এখানে মা, বাবা, ভাই, বোন সব চরিত্রেরই কমতি রয়েছে।”

অবশ্য পরিচালক মিজানুর রহমান মিজান মনে করেন, যাঁরা একদিন নায়ক ছিলেন, তাঁরা যদি বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন, তাহলে চলচ্চিত্রের দর্শক তাঁদের ভালোভাবে গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, ‘আসলে বাবা-মা চরিত্রগুলোতে চাই তারকা শিল্পী। যাঁরা একসময় নায়ক ছিলেন, এখন বয়স হয়েছে তাঁরা যদি বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন, তা হলে দর্শক তা সুন্দরভাবে গ্রহণ করবেন। রাজ্জাক সাহেব যত দিন বেঁচেছিলেন, বাবার চরিত্র কাজ করেছেন। উনাদের সাথে দু-একজন নতুন শিল্পী থাকলেও সমস্যা হয় না। একেবারে নতুন শিল্পীকে দিয়ে বাবা বা মায়ের চরিত্রে অভিনয় করালে তা দর্শক গ্রহণ করতে চায় না।’  

চলচ্চিত্রের এই শিল্পী সংকট নিরসনে আবারও ‘নতুন মুখের সন্ধানে ২০১৮’ প্রতিযোগিতাটি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির তরফ থেকে শুরু হচ্ছে আগামী মাসের শুরুতেই। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির উদ্যোগে এবং বিএফডিসির সহযোগিতায় ‘অফট্র্যাক ইভেন্টস অ্যান্ড অ্যাডভারটাইজিং’ এবং ‘টিম ইঞ্জিন’-এর ব্যবস্থাপনায় শুরু হতে যাচ্ছে এই প্রতিযোগিতা। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হবে প্রতিযোগীদের নিবন্ধন। প্রতিযোগিতাটি রিয়েলিটি শো হিসেবে সম্প্রচার করবে এশিয়ান টিভি।

মান্না, সোহেল চৌধুরী, দিতি, অমিত হাসান, আমিন খান, মিশা সওদাগরসহ জনপ্রিয় অনেক শিল্পী চলচ্চিত্রে এসেছেন ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে।  বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে এর আগে ১৯৮৪, ১৯৮৮ ও ১৯৯০ সালে মোট তিনবার ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল।