তারায় তারায় লড়াই
এফডিসির সামনে সব সময়েই ভিড় থাকে। কিন্তু আজ শুক্রবার (৩০ জানুয়ারি) ভিড় একটু বেশি। কারণ, এফডিসিতে চলছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। তারকারা উপস্থিত থেকে চালাচ্ছেন প্রচারণা, দিচ্ছেন ভোট। শাকিব-মিশা প্যানেলের পক্ষ থেকে বর্তমান সভাপতি শাকিব খান ঘুরে ঘুরে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তারকা ভোটারদের। আর বসে নেই স্বতন্ত্র প্রার্থী অমিত হাসান। তিনিও চেষ্টা করছেন তারকা ভোটারদের নজরকাড়ার। অমিত হাসান নির্বাচন করছেন সাধারণ সম্পাদক পদে। তাঁর পক্ষে জনপ্রিয় নায়ক আমিন খান দলবল নিয়ে সকাল থেকেই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন শিল্পীদের সঙ্গে। নায়ক আমিন খান বলেন, ‘শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে রদবদল এখন সময়ের দাবি। তা ছাড়া অমিত আমার ভায়রা ভাই। এ কারণে প্রকাশ্যেই মাঠে নেমেছি।’
এফডিসির ভেতরে এদিন শিল্পী সমিতির সামনে দেখা যায় প্রচণ্ড ভিড়। এই ভিড়ের মধ্যে ঘুরেফিরে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন সভাপতি পদপ্রার্থী আহমেদ শরীফ। তিনি বলেন, ‘এফডিসির শিল্পী ছাড়া এখানে অন্য কেউ নির্বাচন করছে না। সুতরাং শুভেচ্ছা বিনিময়ই এখানে মূল উদ্দেশ্য।’ শিল্পী সমিতির অফিসে মূল বুথ রাখা হয়। এখানে ভোটাররা একে একে কেন্দ্রে ভোট দেন সকাল থেকে। দুই পাশে তারার ব্যারিকেড তৈরি করেন তারারাই। ব্যারিকেডে দেখা যায়, দুই প্যানেলের তারকা প্রার্থীরা দাঁড়িয়ে অক্লান্তভাবে শুভেচ্ছা বিনিময় করে চলেছেন। শাকিব খান, মৌসুমি, অমিত হাসান, ডন, মিশা সওদাগর, কাবিলা, ওমর সানী, রীনা খান—কে নেই এই শুভেচ্ছা বিনিময়ে! এ সময় এনটিভিকে শাকিব খান বলেন, ‘আমরা আসলে শুভেচ্ছা বিনিময় করছি। কে কাকে ভোট দেবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করে এখানে এসেছেন সবাই। আমরা তাঁদের ভোট দিতে উৎসাহ দিচ্ছি।’
৫৮৩ ভোটারের এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে দুটি প্যানেল। শাকিব খান-মিশা সওদাগর সম্পূর্ণ প্যানেল দিতে পারলেও প্রতিদ্বন্দ্বী আহমেদ শরীফ পুরো প্যানেলে প্রার্থী দিতে পারেননি। এমনকি সাধারণ সম্পাদক পদেও কোনো প্রার্থী নেই। তিনি স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অমিত হাসানকে সমর্থন করেন। শাকিব খানের সঙ্গে রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিশা সওদাগর। তিনি একই পদে নির্বাচন করছেন। সমিতির এবারের নির্বাচনে দুটি পূর্ণ প্যানেল না হওয়ায় নির্বাচন তেমন উত্তাপ ছড়াচ্ছে না। এর আগে মান্নার মতো তারকার বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অল্প ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন অমিত হাসান। ফলে সাধারণ সম্পাদক পদে মিশা সওদাগর ও অমিত হাসানের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে সবাই ধারণা করছেন।
সভাপতি পদে শাকিব খানের সঙ্গে আহমেদ শরীফের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তেমন জমজমাট হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা, তবে সহসভাপতি পদে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এ দুই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন—শাকিব-মিশা পরিষদের নাদের খান ও ওমর সানী এবং আহমেদ শরীফ পরিষদের দিলারা ও আবদুল্লাহ সাকি। সহসাধারণ সম্পাদক পদে আহমেদ শরীফ কোনো প্রার্থী দিতে না পারায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন শাকিব-মিশা পরিষদের প্রার্থী মোহম্মদ আরমান।
অন্যান্য পদের মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সুব্রতের সঙ্গে হরবোলা, প্রচার-প্রকাশনা ও দপ্তর সম্পাদক পদে জ্যাকি আলমগীরের সঙ্গে মিজান, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে ডনের সঙ্গে রীনা খান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে শিবা শানুর সঙ্গে সাইফুল এবং কোষাধ্যক্ষ পদে আতিকুর রহমান চুন্নুর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী কমল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যপদে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন শাকিব-মিশা পরিষদের যাদু আজাদ। এ জায়গায় প্রবেশ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেসমিন। কার্যনির্বাহী সদস্যপদে শাকিব খান-মিশা সওদাগর পরিষদের হয়ে আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুই চিত্রনায়িকা মৌসুমী ও ববি এবং আলীরাজ, আফজাল শরীফ, ফরহাদ, রাকিব খান, রতন খান ও শহীদুল আলম সাচ্চু। আহমেদ শরীফ পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য প্রার্থী হচ্ছেন আমির সিরাজী, নুরুল ইসলাম, সুশান্ত, সারোয়ার হোসেন ও সোহরাব। এ পদে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. এজাজ। চলচ্চিত্র শিল্পীদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির মতো একটি সংগঠনের নির্বাচনে প্রার্থীর অভাব। প্রার্থী কম থাকায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়া অন্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে কোনো আলোচনাই হচ্ছে না। আজ বিকেল ৫টায় নির্বাচন শেষ হবে এবং আজ রাতেই ভোট গণনা শেষে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচনের নির্বাহী দেলোয়ার জাহান ঝন্টু।