এবার পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ
সাবেক মিস ইন্ডিয়া তনুশ্রী দত্তর পর এবার আরেক অভিনেত্রী যৌন নিপীড়ন বিষয়ে মুখ খুললেন। তিনি বলেছেন, ২০ বছর বয়সে তাঁর প্রথম ছবিতে তিনি পরিচালকের দ্বারা নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন।
এদিকে বর্ষীয়ান জনপ্রিয় অভিনেতা নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পর বলিউডপাড়া নড়েচড়ে বসেছে। মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন ও আমির খানও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। তবে নানা অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, তনুশ্রীর বিরুদ্ধে তিনি আইনি পদক্ষেপ নেবেন।
পরিচালকের বিরুদ্ধে যিনি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন, তিনি কলকাতার অভিনেত্রী। ২০১৬ সালে তিনি পরিচালকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করেছিলেন। তখন তাঁর বয়স ২০ বছর ছিল। প্রথম ছবিতে কাজ করছিলেন তিনি। পাঁচ বছর আগে এ ঘটনা ঘটে। গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম ডিএনএকে ওই ঘটনার বিস্তারিত জানান এ অভিনেত্রী।
২৫ বছর বয়সী এ অভিনেত্রী বলেন, ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর পরিচালক প্রেমাংশু রায়ের বিরুদ্ধে পর্ণশ্রী পুলিশ স্টেশনে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। অভিযোগে তিনি বলেন, বেশ কয়েকবার তাঁর সঙ্গে বাজে আচরণ করেছেন প্রেমাংশু।
“২০১৩ সালের ১৮ জুন ‘গন্ধ’ সিনেমার জন্য অডিশন দিতে গিয়েছিলাম, তখন আমার বয়স কুড়ি ছিল। নির্বাচিত হওয়ার পর রাফি আহমেদ কিরাই রোডের একটি অফিসে আয়োজিত কর্মশালায় যাই, সেখানে প্রেমাংশু রায় যৌন নিপীড়ন করেন।”
বাঙালি এ অভিনেত্রীর অভিযোগ, ক্যারিয়ার শেষ করে দেবে, এমন হুমকি দিয়ে তাঁকে ‘যৌন-অন্তরঙ্গ দৃশ্যের’ মহড়া দিতে বাধ্য করে পরিচালক।
‘যদিও চিত্রনাট্যে সামান্য অন্তরঙ্গ দৃশ্য ছিল, কিন্তু কর্মশালা চলাকালে মি. রায় জোর করে আমাকে সম্পূর্ণ ন্যুড হতে বাধ্য করেন, সেখানে একজনও উপস্থিত ছিলেন না।’
এ অভিনেত্রী বলেন, পুরুলিয়া জেলায় তাঁদের শুটিং চলছিল। ‘প্রতিদিন শুটিং শেষে প্রেমাংশু রায় তাঁর রুমে ডেকে প্রতিজ্ঞা করাতেন,’ বলেন তিনি।
তিন বছর বছর পর কেন তিনি থানায় অভিযোগ করলেন? উত্তরে এ বাঙালি অভিনেত্রী বলেন, ‘যদি এ ব্যাপারে মুখ খুলি, তবে তিনি আমার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। অল্প বয়স ছিল, ভয় পেয়েছিলাম। ছবিটি আর আলোর মুখ দেখেনি এবং তিনি উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। পরে দেখলাম, একটি নতুন ছবি করছেন তিনি। ভাবলাম, এ বিষয়ে মুখ খোলা দরকার।’
প্রেমাংশুর বিরুদ্ধে আইপিসি সেকশনস ৩৫৪-এ, ৫০৬ ও ৫০৯ ধারায় মামলা করা হয়। মামলার তদন্তের ভার দেওয়া হয় পার্ক স্ট্রিট পুলিশ স্টেশনকে। পরিচালক প্রেমাংশু রায়কে তখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এতে তদন্তে বিলম্ব হয়।
পার্ক স্ট্রিট পুলিশ বলেছে, পরে প্রেমাংশু রায়কে পাওয়া যায় এবং তাঁকে নোটিশ পাঠানো হয়। ‘মামলার ধারা জামিনযোগ্য হওয়ায় তিনি জামিন পান। আর কিছুদিন পরই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য আছে,’ একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেন।
ছবিটির প্রযোজক হরিৎ রানা বলেন, এ বিষয়ে তিনি অনেক পরে জেনেছেন। ‘মেয়েটিকে বলেছিলাম, আমাকে তখন বলা উচিত ছিল। আমি নিজেই পুলিশের কাছে অভিযোগ করতাম। সে আমার তহবিল তছরুপ করেছিল, তাই তাঁকে প্রকল্প থেকে বের করে দিয়েছিলাম। পুলিশকে সব সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। দোষীর শাস্তি হওয়া উচিত,’ বলেন হরিৎ।
মৌখিক প্রতিবাদ
তনুশ্রী দত্তর অভিযোগের জবাব দিয়েছেন নানা পাটেকার। গতকাল বর্ষীয়ান এ অভিনেতা বলেন, ‘যৌন নিপীড়ন বলতে সে কী বোঝে? আমার সঙ্গে ৫০ থেকে ১০০ জন মানুষ তখন শুটিং সেটে ছিল।’
ছবির পরিচালক রাকেশ সারেং বলেন, ‘সে (তনুশ্রী) তাঁকে (নানা) ভুল বুঝেছে। কেউ যদি কিছু করতে চায়, তবে সবার সামনে কেন করবে?’