বাংলা ছবিকে ভালোবেসে এগিয়ে যেতে চান অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায়

Looks like you've blocked notifications!

ভারতীয় রেলের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। অভিনয় জগতে ঢুকতে গিয়ে অনেক চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে তবেই সাফল্য পেয়েছেন। আজ অভিনয় জগতের হোল টাইমার তিনি। নতুন প্রজন্মের প্রতি তাঁর পরামর্শ, যারা কাজ খুঁজছেন তাঁরা ১০০ বার ‘না’ শোনার পরও লেগে থাকুন। ১০১ বারে নিশ্চয়ই ‘হ্যাঁ’ শুনবেন।

বলতে গেলে জীবনে রীতিমতো লড়াই করে সাফল্য ছিনিয়ে নেওয়া এই টলিউড অভিনেতার নাম খরাজ মুখোপাধ্যায়। ভারতীয় রেলের চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসে দীর্ঘ ১৩ বছর চাকরি করার পর পাকাপাকিভাবে সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন অভিনয় জগতে।

কাঁধের ওপর সংসারের বোঝা নিয়েও সরকারি চাকরি ছেড়ে সাহস দেখান অভিনয় করে জীবিকা নির্বাহ করার। প্রথমে অভিনেতা রমাপ্রসাদ বনিকের দলে নাটক, তারপর থিয়েটার করতে করতে পা রাখেন ছোট পর্দায়। প্রথম ধারাবাহিকে অভিনয় করেন ‘রাজেশ্বরী’তে। তারপর ‘শ্রীরামকৃষ্ণ’।

বড় পর্দায় তখন কেউই চেনেন না খরাজ মুখোপাধ্যায়কে। খরাজ বললেন, ‘বড় পর্দায় কাজের জন্য প্রথমে যাই পরিচালক স্বপন সাহার কাছে। কিন্ত তিনি প্রথম দিনেই মুখের ওপর বলে দেন, কাজ নেই ভাই। তবুও হাল না ছেড়ে প্রতিদিন স্বপন সাহার অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়াতাম। বারবার স্বপন সাহা ফিরিয়ে দিয়েছেন, তবু হাল ছাড়িনি। এভাবেই একদিন স্বপন সাহার ছবিতে কাজ পাই। এরপর স্বপন সাহার পরপর সাতটি ছবিতে অভিনয় করি।’

অভিনয়ের আইকন হিসেবে খরাজ বরাবর দিকপাল অভিনেতা তুলসি চক্রবর্তী ও রবি ঘোষকে অনুসরণ করেছেন। তাঁদের অভিনয়ের ওপর আধুনিকতার মোড়ক লাগিয়ে আজ নিজের এক নিজস্ব অভিনয় ঘরানা তৈরি করেছেন তিনি। আজ নিজেই স্বীকার করেন, তাঁর মধ্যে একটা দ্বৈত সত্ত্বা কাজ করে। একটা খরাজ, শহরের শিক্ষিত দর্শকদের কাছে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি অন্য খরাজকে গ্রামের হাজার হাজার মানুষ মাথায় করে রেখেছেন।

খরাজ মুখোপাধ্যায় আজ শুধু অভিনেতাই নন, একদিকে গীতিকার আবার অন্যদিকে গায়ক। আর পেশাগতভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফল তিনি। আর অভিনয় বলুন, গান লেখা বলুন, কিংবা গান গাওয়া বলুন- সব কিছুকেই নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসেন তিনি।

খরাজের বিখ্যাত গানের মধ্যে অন্যতম ‘হায় বাঙালি হায়...’। এই জনপ্রিয় গান সম্পর্কে খরাজ মনে করেন, বাঙালি আজ নিজেদের ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে বিদেশের খারাপ জিনিসটাকেও মাথায় নিয়ে নাচে। হিন্দি-ইংরেজি মিলিয়ে মিশিয়ে এক অদ্ভুত ভাষায় কথা বলে।

পায়েস, লুচি, আলু চচ্চড়ির বদলে কেক, স্যান্ডউইচ খায়। এসব বিষয়কে মাথায় রেখেই এই গান রচনা করেন তিনি। বরাবরই গানের সুরে নিজের গায়কি নিজস্বতা দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছেন খরাজ। তবে ‘জাতিস্মর’ ছবিতে গান গাইতে গিয়ে  এই খরাজ মুখোপাধ্যায়কেই গায়ক কবির সুমন বলেছিলেন, ‘সুরের মধ্যে একদম গিটকিরি মারতে যাবে না। বেশি গিটকিরি দেখাতে গিয়ে মহম্মদ রফি আর মান্না দের আর গায়ক হয়ে ওঠা হয়নি’। অবশ্য এই প্রসঙ্গে খরাজ মুখোপাধ্যায় বিস্ময় প্রকাশ করা ছাড়া আর কোনো মন্তব্য করতে চান না।

বাংলা বলয় ছেড়ে হিন্দি বলয়ে পা রাখবেন কি না সেই প্রসঙ্গে খরাজ বেশ রসিয়ে বলেন, “পরিচালক মহেশ ভাট বাংলা ‘বেলাশেষে’ ছবিটিকে হিন্দি করতে চান।” তিনি নাকি ফোন করে খরাজকে বলেছেন, ‘আপনি এত বাজে অভিনেতা যে আপনার অভিনীত চরিত্রের জন্য অনেক খুঁজেও অভিনেতা পেলাম না। তাই ওটা আপনাকেই করতে হবে।’

তবে মুম্বাইতে গিয়ে অভিনয় করার ইচ্ছে খরাজের একেবারেই নেই বলে জানালেন। বললেন, ‘আমি বাংলাতেই থাকতে চাই।’  বর্তমানে অভিনয় নিয়ে চূড়ান্ত ব্যস্ততা থাকলেও নিজের প্ল্যাটফর্মকে কিন্ত একদমই ভুলতে চান না তিনি। তাই তো ব্যস্ততার মধ্যেও অভিনয় করছেন নাটকে। ‘প্রথম পাঠ’ এবং ‘ভুষণ্ডির মাঠ’ নামে দুটো নাটকে অভিনয় করছেন তিনি।

আজ খরাজ মুখোপাধ্যায়ের জীবনে আফসোস বলতে কিছুই নেই। নিজেই স্বীকার করেন, প্রয়াত রবি ঘোষ জেনে যেতে পারেননি আমি তাঁর শিষ্য। তবে তার জন্য আমার আফসোস নেই। কারণ রবি ঘোষ জীবিত থাকাকালীন বলেছিলেন, ‘খরাজ জীবনে কখনো আফসোস করবি না। আফসোস করলে দুই পা পিছিয়ে যেতে হয়।’

তাই রবি ঘোষের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন খরাজ। বলেন, ‘আমার জীবনে কোনো আফসোস নেই। আমি শুধু বাংলা ছবিকে ভালোবেসে এগিয়ে যেতে চাই।’