মাদক নিয়ে সতর্কবাণী কি ছবির সৌন্দর্যহানি করবে?
খলনায়কের এক হাতে সিগারেট, আরেক হাতে মদের গ্লাস। নায়কদেরও বিরহের সময় মদের বোতল হাতে নিয়ে গান গাইতে দেখা যায় ঢাকাই চলচ্চিত্রগুলোতে। বিশেষ ভঙ্গিতে নায়কের ধূমপান বা মদ্যপান অনেক সময়ই অনুপ্রাণিত করে ভক্তদের। এ কারণেই এ রকম দৃশ্যে বিশেষ বার্তাজুড়ে দেওয়ার নিয়ম রাখা হয়েছে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইনে। তবে এই আইনটি যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে সেন্সর বোর্ড। এই অভিযোগ নিয়েও তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নিজামুল কবীর এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘চলচ্চিত্রে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ও বিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে না মর্মে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। চলচ্চিত্রে ধূমপান ও তামাক সেবনের দৃশ্য পরিহার করতে হবে। তবে চলচ্চিত্রে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার দৃশ্যে একান্ত আবশ্যকতা থাকলে নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।’
আইনের ৫ (ক) নম্বর উপবিধিতে রয়েছে ‘তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রদর্শনকালে পর্দার মাঝখানে পর্দার আকারের অন্তত এক পঞ্চমাংশ স্থানজুড়ে কালো জমিনের উপর সাদা অক্ষরে বাংলা ভাষায় ‘ধূমপান/তামাক সেবন মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদর্শন করিতে হইবে এবং উক্তরূপ দৃশ্যে যতক্ষণ চলিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সতর্কবাণী প্রদর্শন অব্যাহত রাখিতে হইবে।’
উপবিধি ৫ (গ) তে রয়েছে : প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য রহিয়াছে এইরূপ সিনেমা আরম্ভ হইবার পূর্বে, বিরতির পূর্বে ও পরে এবং সিনেমা প্রদর্শনের শেষে অন্যূন ২০ (বিশ) সেকেন্ড সময় পর্যন্ত সম্পূর্ণ পর্দা জুড়িয়া প্রযোজিত ‘ধুমপান/তামাক সেবন মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক সতর্কবাণী বাংলা ভাষায় প্রদর্শন হইবে।’
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, এ দপ্তরে জমাকৃত চলচ্চিত্রে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০১৫-এর সংশ্রিষ্ট উপধারাসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালন হচ্ছে না।’
তবে অনেকেই মনে করছেন এমন নিয়মের ফলে চলচ্চিত্রের দৃশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পর্দার মাঝে এক পঞ্চমাংশজুড়ে কালোর জমিনে সাদা অক্ষরে বার্তা দিলে তা ছবির সৌন্দর্য নষ্ট করবে বলেই মনে করছেন চিত্রপরিচালক পরিচালক অপূর্ব রানা। তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষের জীবন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে থাকি। আমাদের সমাজের বড় একটা অংশ তামাক, মদ ব্যবহার করে থাকে। আমরাও সেটি গল্পের প্রয়োজনে চলচ্চিত্রে দেখিয়ে থাকি। তবে আমরা সবসময় সচেতনভাবে তামাক বা মদকে খারাপভাবে উপস্থাপন করি, যেন সেটা কাউকে অনুপ্রাণিত না করে। এখন এ সংক্রান্ত সতর্ক বার্তা দিলে, আমি একজন পরিচালক হিসেবে মনে করি, গল্পের মাঝখানে পর্দার ৫ ভাগের এক ভাগ জায়গা জুরে কালোর মধ্যে সাদা লেখা দেখা গেলে সিনেমার ক্ষতি হবে। কারণ মানুষ যখন গল্পের মধ্যে ঢুকে যায়, তখন এত বড় লেখা মানুষের মনোযোগ নষ্ট করবে। যে কারণে আমি মনে করি, আগে যতটুকু ব্যবহার করেছি, এখন আরো বড় করে দেওয়া যেতে পারে, তবে তা পর্দার মাঝখানে নয়।’
অপূর্ব রানার সঙ্গে একমত নন পরিচালক বদিউল আলম খোকন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন মনে করেন, সঠিক নিয়ম মেনে ছবি নির্মাণ করা হলে মানুষ সচেতন হবে। তিনি বলেন, ‘আসলে তামাক বা মদ মানুষের মৃত্যু ঘটায়, যে কারণে বিষয়টিতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা জরুরি। যে কারণে এই বিষয়গুলো চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে আরো বেশি সচেতন করা সম্ভব। আমার মনে হয় না এতে আমাদের চলচ্চিত্রের সৌন্দর্যহানি হবে।’