টেলি সামাদের জানাজায় নিজের মৃত্যু চাইলেন নাসরিন

Looks like you've blocked notifications!

‘শিল্পী হিসেবে আমরা এফডিসি বা শিল্পী সমিতিতে সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছি না। অনেক সময় অপমানিতও হতে হয়। এটা নিয়ে নিজের মধ্যে হতাশা কাজ করে। যে কারণে মানসিক ও শারীরিকভাবে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছি। একই হতাশা টেলি ভাইয়ের মধ্যেও ছিল, যে কারণে তিনি এত তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমি কেন মারা যাচ্ছি না? আল্লাহ যেন আমাকে তুলে নেন।’ বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদের তৃতীয় জানাজায় এসে এসব কথা বলেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নাসরিন।

আজ রোববার এফডিসিতে দুপুর সাড়ে ১২টায় টেলি সামাদের জানাজা সম্পন্ন হয়। এর আগে ফুল দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থলের শিল্পী ও কলাকুশলীরা।

এনটিভি অনলাইনের কাছে হতাশা প্রকাশ করে নাসরিন বলেন, ‘এখন এফডিসিতে কোনো অনুষ্ঠান হলে আমরা দাওয়াত পাই না। জানাজা বা দোয়া হলে দাওয়াত ছাড়া আসা যায় এবং সব সময় আসি। কিন্তু অনুষ্ঠানে আসতে লজ্জা করে। তারপরও এই এফডিসিতে সারা জীবন কাজ করেছি। যে কারণে স্বামী-সন্তান নিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠানে এসেছিলাম। সেখানে যেভাবে অপমান করা হলো, তখনই মরে যেতে ইচ্ছে করেছিল।’

গত ৪ এপ্রিল এফডিসিতে চলচ্চিত্র দিবসের অনুষ্ঠানে ঘটে যাওয়ার ঘটনাটি বলেন নাসরিন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন স্বামী-সন্তান নিয়ে অনুষ্ঠান দেখার জন্য চেয়ারে বসেছি, তখন শিল্পী সমিতির এক নেতা সিকিউরিটিকে ইশারা করে আমাকে তুলে দিতে বলেন। সিকিউরিটি মনে হয় আমাকে চিনেছে, তাই তিনি আমাকে আরেকটু পেছনে বসতে বলেন। আমি তিন নম্বর সিরিয়ালে গিয়ে বসি। তার কিছুক্ষণ পর আবার সেই নেতা আবারও আরেকজন সিকিউরিটিকে আমাকে দেখিয়ে কিছু বলেন। তারপর সিকিউরিটি এসে আমাকে দর্শক সারিতে বসতে বলেন। সেখানে উঠে গিয়ে দেখি কোনো সিট খালি নেই। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বেরিয়ে যাই।’

নাসরিন আরো বলেন, ‘চলচ্চিত্র দিবসে যাঁরা মঞ্চে নাচ করেছেন, আমি নাসরিন এঁদের অনেকের চেয়ে বেশি ছবিতে কাজ করেছি। সারা দেশে অনেক অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র শিল্পী হিসেবে দাওয়াত পাই, সেখানে গেলে সম্মানও পাই। অথচ এফডিসি বা শিল্পী সমিতিতে এলে মনে হয় আমরা কেউ না। তখন আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না।’ 

টেলি সামাদের জানাজায় এসে স্মৃতিকাতর নাসরিন বলেন, “‘রূপনগরের রাজকন্যা’ ছবিতে আমি প্রথম কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করি। এই ছবিতে আমি জুটি বেঁধে অভিনয় করেছি টেলি ভাইয়ের সঙ্গে। আর এই ছবিতে আমাদের একটি গানও ছিল। এরপর আমি জুটি বাঁধি দিলদার ভাইয়ের সঙ্গে। টেলি ভাই যেমন গুণী অভিনেতা ছিলেন, তেমনি ছিলেন ভালো মানুষ।’

এফডিসির আজকের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য সচিব আবদুল মালেক, এনটিভির পরিচালক আলহাজ্ব নুরুদ্দিন আহমেদ, অভিনেতা আলমগীর, ফারুক, অমিত হাসান, জায়েদ খান, সম্রাট, প্রযোজক মুশফিকুর রহমান গুলজার, প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু, গায়ক ফকির আলমগীর, পরিচালক দেলওয়ার জাহান ঝন্টু, শাহ আলম কিরণ প্রমুখ ব্যক্তি।

গতকাল শনিবার দুপুর দেড়টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে টেলি সামাদ মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন।