মঞ্চে আসছে হুমায়ূন আহমেদের ‘নদ্দিউ নতিম’
পত্রিকার পাতায় তিন লাইনের ছোট্ট একটা বিজ্ঞাপন- একজন সার্বক্ষণিক টিউটর প্রয়োজন, টিউটরের সৃজনশীলতা ব্যক্তিগত যোগ্যতা হিসেবে ধরা হবে, বেতন আকর্ষণীয়। বেতনের আকর্ষণীয় ক্ষমতায় একজন কবি তাঁর কবি সত্তাকে সাময়িক স্তিমিত করে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী বাচ্চার টিউটর পদে অভিসিক্ত হলেন। টিউটরশিপের কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্টি হেতু কবিকে বরখাস্ত করা হলো। কিন্তু প্রতিবন্ধী বাচ্চাটি কবিকে ভুলতে পারলেন না। বাচ্চাটি কবির সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী, কিন্তু সে সুযোগ তো আর নেই। কবি চলে গেছেন। বাচ্চাটি জেদ ধরে- সে কথা বলবেই বলবে। একপর্যায়ে সুযোগ হয় কবির সঙ্গে কথা বলার। বাচ্চাটি কবির সঙ্গে তাঁর জীবনের একটি গোপন বিষয় ভাগাভাগি করে, যে গোপন বিষয়টির জন্য কবিকে শেষ পর্যন্ত জীবন দিতে হয়।
কী সেই গোপন বিষয় যার জন্য কবিকে জীবন দিতে হলো? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে খুঁজতে এগিয়ে যায় ম্যাড থেটারের প্রথম প্রযোজনা ‘নদ্দিউ নতিম’-এর কাহিনী।
‘নদ্দিউ নতিম’ হুমায়ূন আহমেদের একটি উপন্যাসের নাট্যরূপ। এই নাটকের নাট্যরূপ রচয়িতা ও নির্দেশক আসাদুল ইসলাম।
‘ম্যাড থেটার’-এর প্রতিষ্ঠাতা আসাদুল ইসলাম জানালেন, তাঁর মেয়ে মেঘদূত হুমায়ূনভক্ত। এই ভক্তি সে পিতৃসূত্রে প্রাপ্ত। ওর বয়স এখন ১১। মেয়েকে নিয়ে মঞ্চে কাজ করার ইচ্ছে থেকেই ‘নদ্দিউ নতিম’-এর নাট্যরূপ দেওয়া। নাটকে একজন কাল্পনিক উজবেক কবি ও একজন মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর মনোজাগতিক বিশ্লেষণ দেওয়া হয়েছে। নাটকে বেশির ভাগ সময় তারা নিজে নিজে কথা বলে। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলা, এটা জটিল একটা ক্রিয়া। এটা অভিনয়ে ফুটিয়ে তোলা দুরূহ। তবে সেটা ফুটিয়ে তুলতে সব চেষ্টাই করেছেন নির্দেশক।
কোন ভাবনা থেকে ম্যাড থেটার করা কিংবা এই ‘নদ্দিউ নতিম’-এর কাজ শুরু?-এমন প্রশ্নের উত্তরে আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সুবচনে কাজ করছি দুই যুগ ধরে, এখনো করে যাচ্ছি। নাটকের সব ভাবনা সুবচনের কাছ থেকে পাওয়া। সুবচনের প্রশ্রয়ে আমার ভেতরের পাগলামিটাকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছি। আমার পাগলামির প্রথম সংস্করণ ‘দ্য ম্যাড’- একটি পথনাটক। আমার সব পথনাটক নিয়ে একটি নাট্য সংকলন বের করেছি ঐতিহ্য থেকে, যেটি লন্ডনে মোড়ক উন্মোচন হয়েছিল, সেটিরও নাম ‘দ্য ম্যাড’। এরপর ফটোগ্রাফির পাগলামি থেকে একটা ফেসবুক আইডি ক্রিয়েট করি, নাম ‘ম্যাড ফটু’। সেই পাগলামির হালনাগাদ সংস্করণ ‘ম্যাড থেটার’।
রিপার্টরি ধারণা থেকে ম্যাড থেটারের কল্পনা আমার মাথায় সুপ্ত অবস্থায় থাকে। এত দিন ম্যাড থেটারের যে কল্পনা সুপ্ত ছিল, ‘নদ্দিউ নতিম’ মঞ্চে আনার পরিকল্পনা, সেই কল্পনাকে বাস্তবে দাঁড় করাতে সহায়তা করেছে ওই ধারণা। ’
আগামী ৩০ অক্টোবর শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে, সন্ধ্যা ৭টায় আসছে ম্যাড থেটারের ‘নদ্দিউ নতিম’। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন আসাদুল ইসলাম, সেট ও লাইট ডিজাইন করেছেন ফয়েজ জহির আর কোরিওগ্রাফিতে আছেন আনিসুল হক বরুণ।