র্যাংকিংয়ে বিশ্বসেরা ৩০ টিভি সিরিজ
‘গেম অব থ্রোনস’-এর জন্য ভালোবাসা কিংবা ঘৃণা, যা-ই বরাদ্দ থাকুক না আপনার, এটি নিশ্চিত যে সাড়াজাগানো এই সিরিজটি নিয়ে কথা বলেননি এমন বিনোদনপ্রেমী খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
এই লেখায় আমরা টেলিভিশন সিরিজ দেখার অভিজ্ঞতাকে পাল্টে দেওয়া সিরিজগুলো নিয়ে কথা বলব। এমন কিছু সিরিজের কথা আমরা উল্লেখ করব, যা আমাদের আনন্দ দিয়েছে, কখনো বা ভাসিয়েছে উন্মাদনায়।
টেলিভিশন শোর কারণে ডেলন টি-শার্ট কেনা কিংবা পুরোনো ফ্যাশনকে আঁকড়ে ধরে থাকা মানুষকে এই লেখা করে তুলবে স্মৃতিকাতর। এতে আমরা বিগত কয়েক দশকে সাড়াজাগানো টেলিভিশন শোর নামগুলো ক্রমান্বয়ে তুলে ধরব। জনপ্রিয় মার্কিন ওয়েবসাইট সি-নেট ডটকম সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জনপ্রিয় টিভি সিরিজগুলোর র্যাংকিং প্রকাশ করেছে :
৩০. স্যাটারডে নাইট লাইভ (১৯৭৫-বর্তমান)
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা আমেরিকান এই টেলিভিশন শো স্যাটায়ার, কার্টুনসহ বিভিন্ন মজার অনুষঙ্গের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করে আসছে। এই শোর বিভিন্ন স্কেচ, পর্ব প্রায়ই পরের দিন সকালে ভাইরাল হয়ে যায়।
২৯. কি ও পিলে (২০১২-২০১৫)
নবাগত কিগান মাইকেল ও জর্ডান পিলে ৩০ মিনিট ব্যাপ্তির আমেরিকান এই স্কেচ কমেডি সিরিজে অভিনয় করেন। জটিল সব বিষয় নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত মজা করার অনুষ্ঠানটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পায়।
২৮. থার্টিন রিজনস হোয়াই (২০১৭-বর্তমান)
বয়ঃসন্ধিকালের নানা জটিলতাকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে জনপ্রিয় এই সিরিজটি। তরুণদের মানসিক-পেশাগত সমস্যা ও পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব নিয়ে গড়ে ওঠা সিরিজের প্রথম পর্ব ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ প্রকাশিত হয়। আজও চলছে।
২৭. সিলিকন ভ্যালি (২০১৪-বর্তমান)
প্রযুক্তি প্রতিনিয়তই আমাদের জীবনে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আর প্রযুক্তিকে ঘিরে বিভিন্ন মজার ঘটনা নিয়েই নির্মিত হয়ে চলেছে এই টেলিভিশন শো। এর প্রথম পর্ব ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল প্রচারিত হয়।
২৬. ব্ল্যাক-ইশ (২০১৪-বর্তমান)
মার্কিন এই টেলিভিশন শো একটি পরিবারের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বিভিন্ন সংকট নিয়ে নির্মিত হয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় সবকিছু থাকার পরও মানুষকে কেমন জটিলতায় পড়তে হতে পারে, তা এতে তুলে ধরা হয়েছে। আফ্রিকান-আমেরিকানদের জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয় এই শোতে।
২৫. ভিপ (২০১২-২০১৯)
দুর্দান্ত মজার সব দৃশ্যের জন্য ‘ভিপ’ নামের মার্কিন টেলিভিশন শো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। রাজনীতিবিদদের নিয়ে দারুণ সব স্যাটায়ারের মাধ্যমে এটি অনেকের প্রিয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়।
২৪. অ্যারো (২০১২-বর্তমান)
মৃত বলে ধরে নেওয়া এক কোটিপতি ব্যক্তি পাঁচ বছর পর ফিরে আসেন। তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে মার্কিন এই টেলিভিশন সিরিজ।
২৩. ডেয়ারডেভিল (২০১৫-২০১৮)
চলতি দশককে বলা হয় বিনোদন জগতে সুপারহিরোদের যুগ। নেটফ্লিক্সের মতে, ডেয়ারডেভিলে থাকা সুপারহিরোরাই এই তালিকায় প্রথম ও সবার চেয়ে এগিয়ে।
নয় বছরের এক কিশোর একজন বৃদ্ধকে দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে চোখে কেমিক্যাল পড়ে অন্ধ হয়ে যায়। অন্ধ হয়ে যাওয়ার পরপরই তার অন্য সব সেন্সের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়, যা তাকে অতিমানবে রূপান্তরিত করে। তার এই সুপার পাওয়ার কাজে লাগিয়ে সাহায্য করতে থাকে ‘হেলস কিচেন’ নামে নিজের শহরকে।
২২. চেরনোবিল (২০১৯)
টেলিভিশন চ্যানেল এইচবিওর অন্যতম সিরিজ ‘চেরনোবিল’-এর কাহিনী গড়ে উঠেছে ১৯৮৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এই দুর্ঘটনার নেপথ্যের কিছু রহস্যকে তুলে আনা হয় এই সিরিজে।
২১. স্টার ট্রেক : ডিসকভারি (২০১৭- বর্তমান)
মার্কিন এই ওয়েব সিরিজের কাহিনী গড়ে উঠেছে নগরায়ণ ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পাল্টে যাওয়া নতুন বিশ্বের নানা সমস্যা-সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া সিরিজটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়ে এখনো প্রচারিত হচ্ছে।
২০. দি এক্সপান্স (২০১৫- বর্তমান)
একজন নারীর নিখোঁজ হওয়ার রহস্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই টেলিভিশন সিরিজের কাহিনী। এতে বদলে যাওয়া বিশ্ব ও মঙ্গলগ্রহের বিভিন্ন রহস্যও তুলে ধরা হয়েছে।
১৯. ট্রান্সপারেন্ট (২০১৪-বর্তমান)
সম্মানিত, মজার ও নাটুকে একটি পরিবারের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে মার্কিন কমেডি ড্রামা সিরিজটি। সিরিজটি অসাধারণ নির্মাণশৈলী ও দারুণ অভিনয়ের কারণে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
১৮. রিক অ্যান্ড মর্টি (২০১৩-বর্তমান)
হারিয়ে যাওয়ার প্রায় ২০ বছর পর রিক সানচেজ তাঁর মেয়ে বেথের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন এবং মেয়ের পরিবারের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। বাবার এই ফিরে আসায় মেয়ে খুশি হলেও তাঁর স্বামী মোটেই খুশি হতে পারেননি। আর এ নিয়েই এগোতে থাকে গল্প। অ্যানিমেটেড কমেডিভিত্তিক এই টেলিভিশন সিরিজটি ব্যাপক জনপ্রিতা পেয়েছে।
১৭. ট্রু ডিটেক্টিভ (২০১৪-২০১৯)
জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজ ‘ট্রু ডিটেক্টিভ’-এর প্রতিটি পর্বে চমক থাকে, কিন্তু এর প্রথম পর্ব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। চলচ্চিত্র তারকা ম্যাথিউ ম্যাককোনাগে ও উডি হ্যারেলসনকে এটি ছোটপর্দায় হাজির করেছে।
১৬. ওয়েস্টওয়ার্ল্ড (২০১৬-বর্তমান)
তরুণদের কাছে তুমুল আকর্ষণীয় এই টেলিভিশন সিরিজ। কিছু দর্শক পরিচালককে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিলেও অনেকেই এর দুর্দান্ত সব দৃশ্য ও বিশেষ ইফেক্ট বেশ পছন্দ করছেন।
১৫. বোজ্যাক হর্সম্যান (২০১৪-বর্তমান)
ঘোড়াসদৃশ এক ব্যক্তি সমুদ্রে হারিয়ে যান। নব্বই দশকের সিনেমাজগতের তারকা বোজ্যাক হর্সম্যান নামের ওই ব্যক্তি ফিরেও আসেন। তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হতে থাকে এর কাহিনী।
১৪. ব্ল্যাক মিরর (২০১১-বর্তমান)
ব্রিটিশ সাহিত্যবিষয়ক এই শোতে প্রযুক্তি কীভাবে আমাদের জীবনধারাতে প্রভাব ফেলেছে, তা দেখানো হয়। এতে বলা হয়, প্রযুক্তি ভালো-মন্দ দুভাবেই আমাদের পাশে থাকছে, তবে এর মন্দ দিক বেশি।
১৩. মডার্ন ফ্যামিলি (২০০৯-বর্তমান)
আজকালকার পরিবারগুলো কেমন? দর্শকদের এই প্রশ্নের উত্তর বেশ ভালোভাবেই দেওয়া হয়েছে ‘মডার্ন ফ্যামিলি’ নামের মার্কিন টেলিভিশন সিরিজে। দারুণ নির্মাণশৈলী ও অসামান্য অভিনয়ের কারণে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়।
১২. দ্য হ্যান্ডমেড’স টেইল (২০১৭-বর্তমান)
সমাজ ও রাজনীতির কিছু হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই টেলিভিশন শোতে। এটি মানুষকে আক্ষরিক অর্থেই সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে।
১১. টুইন পিকস : দ্য রিটার্ন (২০১৭)
নব্বইয়ের দশকে সাড়াজাগানো টেলিভিশন শো ‘টুইন পিকস’-এর তৃতীয় পর্ব ‘টুইন পিকস : দ্য রিটার্ন’ ব্যাপক চমক নিয়ে হাজির হয়। একজন ছাত্রীর মৃত্যুকে ঘিরে এগোতে থাকে এর গল্প।
১০. বোর্ড সিটি (২০১৪-২০১৯)
অল্প কিছু অর্থ হাতে নিয়ে বেশ কয়েকজন নারীর নিউইয়র্কে জীবনযাপনের গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে মার্কিন এই টেলিভিশন সিরিজ। গল্পে তাঁদের প্রায়ই বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। সমস্যা মোকাবিলায় বুদ্ধিদীপ্ত নানা পন্থাও অবলম্বন করতে দেখা যায় তাঁদের।
০৯. অরেঞ্জ ইজ দ্য নিউ ব্ল্যাক (২০১৩-২০১৯)
একজন নারী বারে বসে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন। জীবনের যত জটিল হিসাব, প্রতিযোগিতা, ব্যক্তিগত সমস্যা সবকিছু পেছনে ফেলে এসেছেন তিনি। তাঁকে ঘিরে ঘটছে মজার সব ঘটনা এমনই চাঞ্চল্যকর গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে মর্কিন কমেডি ড্রামা সিরিজটি।
০৮. গ্লি (২০০৯-২০১৫)
একদল স্কুল শিক্ষার্থী হাসি-আনন্দে তাদের দিনগুলো পার করছে, এমনটিই দেখানো হয়েছে এই মার্কিন টেলিভিশন শোতে। উচ্ছ্ল এই জীবনের সন্ধান পেতে তাদের সহায়তা করেন এক শিক্ষক। মজার এই টেলিভিশন শো দেখে আপনার নাচতে ইচ্ছে হবে, গেয়ে উঠবেন মনের অজান্তে।
৭. হাউস অব কার্ডস (২০১৩-২০১৮)
তুমুল জনপ্রিয় পলিটিক্যাল ড্রামা সিরিজ ‘হাউস অব কার্ডস’ এরই মধ্যে বিশাল একটি ভক্তশ্রেণি তৈরি করেছে। টিভি সিরিজ বলা হলেও ‘হাউস অব কার্ডস’ কিন্তু কোনো টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হয় না। মূলত নেটফ্লিক্সের সাবস্ক্রাইবাররা ইন্টারনেটে স্ট্রিমিং করে দেখে থাকেন এটি।
মাইকেল ডবস ছিলেন একজন ব্রিটিশ রাজনীতিক। তিনি মার্গারেট থ্যাচারের প্রশাসনে চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মূল পেশা রাজনীতির পাশাপাশি তিনি তাঁর সাহিত্যপ্রতিভার ঝলক দেখান ‘হাউস অব কার্ডস’ নামের বই লিখে। ১৯৯০ সালে বিবিসি সেই বই অবলম্বনে একটি টিভি সিরিজ বানায়। পরে নেটফ্লিক্স ২০১৩ সালে সিরিজটি রিমেক করে। দুটো সিরিজের নামই ‘হাউস অব কার্ডস’।
৬. স্ট্রেঞ্জার থিংস (২০১৬-বর্তমান)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের কাল্পনিক শহর হকিন্সকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে এই টেলিভিশন শোর গল্প। রহস্যজনক এক ঘটনায় সেখানকার এক বালক নিখোঁজ হয়। আর এই রহস্যজনক ঘটনাই কাহিনীর মূল উপজীব্য।
৫. ডাউনটন অ্যাবে ( ২০১০-২০১৫)
ব্রিটিশ একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে টিভি সিরিজটি। তাঁদের জীবনের নানা উত্থান-পতনকে উপজীব্যকে করে এগিয়ে গেছে গল্প।
৪. দ্য ওয়াকিং ডেড (২০১০-বর্তমান)
ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া এই টেলিভিশন শো বরাবরই থেকেছে আলোচনার শীর্ষে। এতে দেখা যায়, একদল মানুষ নিরাপত্তার সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে থাকেন। কিন্তু একসময় তাঁরা টের পান যে বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন।
৩. ম্যাড মেন (২০০৭-২০১৫)
মর্কিন ড্রামা সিরিজ ‘ম্যাড মেন’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ষাটের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞাপনী সংস্থা, জীবনধারা ও বদলে যাওয়া সমাজের নানা অস্থিরতার গল্প উঠে এসেছে এখানে।
২. ব্রেকিং ব্যাড (২০০৮-২০১৩)
অপরাধকে উপজীব্য করে গড়ে উঠেছে মার্কিন এই টিভি সিরিজটির কাহিনী। এতে দেখা যায়, একজন স্কুলশিক্ষক পরিবারের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, ছাত্রকে নিয়ে অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
১. গেম অব থ্রোনস (২০১১-২০১৯)
হালের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি সিরিজ এটি। দুনিয়া কাঁপানো এই সিরিজের একেকটি পর্ব দেখার জন্য ভক্তদের প্রতীক্ষা করে থাকতে দেখা যায়। আর এই ব্যাপক জনপ্রিয়তার নেপথ্যে রয়েছে এর দুর্দান্ত কাহিনী, অসাধারণ প্রযোজনা এবং দারুণ সব কাল্পনিক চরিত্র ও উপাদান। র্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানে এ সিরিজ।