২৫ বছর পূর্তি

নাটকে সমাজের কথা বলে বিবর্তন যশোর

Looks like you've blocked notifications!
১৯৮৯ সালে যাত্রা শুরু করে বিবর্তন যশোর। ছবি : সংগৃহীত

জীবনের কথা বলে নাটক। সেই জীবনের কথা সমাজে তুলে ধরতে ২৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে নাট্য সংগঠন বিবর্তন যশোর। এ সময়ে নাটকের মাধ্যমে বিবর্তনের শতাধিক কর্মী সমাজের শোষকদের বিরুদ্ধে ও শোষিতদের পক্ষে নানা বার্তা তুলে ধরেছেন।

এ ছাড়া সমাজের অবক্ষয়ের দিকগুলো তাঁদের নিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছেন। ফলে দেশে বিদেশে বিবর্তন পেয়েছে লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসা ও প্রেরণা। কর্মীদের একের প্রতি অন্যের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জুগিয়েছে তাঁদের নতুন নতুন সৃজনশীল কাজের উৎসাহ।

যশোর শহরের ব্যস্ততম কেশবলাল সড়কে (সঙ্গীতপাড়া) সংগঠনটির কার্যালয়। ভিতরে প্রবেশ করলে ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলে যেতে হয় শহরের কোলাহলময় পরিবেশ। বকুল আর জামগাছের ছায়ায় ছেয়ে আছে সংগঠনটির ছোট্ট ছিমছাম অঙ্গন।

আঙিনায় আছে একটি মুক্ত মঞ্চ। মঞ্চটি বিবর্তনের কর্মীরা নিজ হাতে তৈরি করেন। বিবর্তনের প্রতিটি কাজে আছে নাট্যকর্মীদের হাতের ছোঁয়া। বিবর্তনের কর্মীরা দিনের কর্মব্যস্ততা শেষে সন্ধ্যায় হাজির হন তাঁদের প্রাণের সংগঠনে। নাটকের সংলাপ মুখস্থ করতে তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। চলে তাঁদের নাটকের মহড়া। নিমেষে হারিয়ে যায় সারাদিনের ক্লান্তির ছাপ। মনে হয় নাটকই তাঁদের প্রাণ।

‘সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে নাটক’- এ স্লোগানকে ধারণ করে ১৯৮৯ সালের ১২ অক্টোবর বিবর্তন যশোর আত্মপ্রকাশ করে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা, শোষণ, দুর্নীতি, মৌলবাদের আগ্রাসনে দেশ যখন আক্রান্ত, গণতন্ত্র ও অধিকার আদায়ের দাবিতে চারদিক যখন উত্তপ্ত সেই সময় সৌন্দর্য চেতনায় পরিশীলিত একটি সুস্থ সমাজ সংস্কৃতির অঙ্গীকার নিয়েই বিবর্তন তার পথ চলা শুরু করে। বিবর্তন একটি আন্দোলন, একটি সমাজ চেতনা, খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের সমাজ সংস্কৃতির অভিব্যক্তি।

১৯৮৯ সালে ‘ইতিহাসের পাতা থেকে’ নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে বিবর্তনের নাট্যচর্চা শুরু হয়। এ পর্যন্ত বিবর্তনের ৭৩টি নাটকের তিন সহস্রাধিক প্রদর্শনী হয়েছে দেশে এবং দেশের বাইরে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো যুদ্ধ, ইতিহাসের পাতা, পাইচো চোরের কেচ্ছা, পুরস্কার, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, মহাবিদ্যা, বিসর্জন, মনের আয়না, বিবাহ প্রস্তাব, রাজা প্রতাপাদিত্য, সিসিফাস, কৈবর্ত গাঁথা।

এ পর্যন্ত স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে ৩০টি নাট্য উৎসব এবং শতাধিক পথনাট্য উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে বির্বতন। সংগঠনটির কর্মপরিধি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের মুর্শিদাবাদ, কলকাতা, নদিয়াসহ পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন স্থানে বির্বতন এ পর্যন্ত ৯ বার আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে অংশগ্রহণ করে সুনাম কুঁড়িয়েছে। ১৯৯৭ সাল  থেকে শুরু হয় দেশের বাইরে নাট্য উৎসবে অংশগ্রহণ।

যশোর সরকারি এম এম কলেজে রয়েছে বিবর্তনের একটি শাখা। যা শিক্ষার পাশাপাশি কলেজের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটিয়ে চলেছে। ‘মাদক মুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়ি, সুস্থ সংস্কৃতি দিয়ে সমাজের অন্ধকার দূর করি’- এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শাখাটি দীর্ঘ ১৭ বছর কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।