সিনেমা হল বাঁচিয়ে রেখেছে ‘ডিজিটাল ময়ূরী’
ঢাকাই চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা খুব একটা ভালো না। গত এক বছরে কোনো ছবিই লগ্নিকৃত টাকা তুলে আনতে পারেনি। প্রতিষ্ঠিত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো ছবি নির্মাণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। নতুন যাঁরা প্রযোজনায় আসছেন, তাঁরাও একটা ছবি বানিয়ে আর নতুন কোনো ছবির কাজে হাত দিচ্ছেন না।
নতুন ছবির বাজার ভালো না, তাহলে সিনেমা হলগুলো চলছে কীভাবে? জানতে চাইলে হল মালিকরা জানান, ডিজিটাল ময়ূরীর ছবির চাহিদাই বেশি। এই ছবিগুলোই বাঁচিয়ে রেখেছে সিনেমা হলগুলোকে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হল মালিক মিয়া আলাউদ্দি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ছবির অবস্থা ভালো না, এটা তো সবাই জানে। আমাদের সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। দেশের বাইরে থেকে ছবি আনতে পারছি না, দেশে ভালো ছবি হচ্ছে না, ভালো ছবি যদিও বা হয়, তিন দিনের মাথায় তা পাইরেসি হয়ে যাচ্ছে। ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। সিনেমা হলগুলো চলবে কীভাবে? নতুন ছবি মুক্তি পেলে দেখবেন মাত্র ৪০-৫০টা সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে। বাংলাদেশে সিনেমা হল আছে দুই শতাধিক। বাকি সিনেমা হলগুলো কীভাবে চলছে তাহলে? দর্শকের কাছে চলচ্চিত্র বিনোদনের খোরাক হলেও আমাদের কাছে এটা থাকা-খাওয়ার একমাত্র অবলম্বন।’
বাংলাদেশে প্রতি মাসে গড়ে দুটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। গড়ে মাসের দুই শুক্রবার কোনো নতুন ছবি মুক্তি পায় না। আবার দেখা যায়, নতুন ছবি মুক্তি পেলেও তা ৫০টার বেশি হলে চলে না। পরের সপ্তাহে হলের সংখ্যা আরো কমে যায়। বাংলাদেশে একসময় এক হাজার ২০০ সিনেমা হল থাকলেও এখন আছে মাত্র ২৫০টি।
নতুন ছবি চলছে না, তাহলে সিনেমা হলে কী চলছে? জানতে চাইলে মিয়া আলাউদ্দি বলেন, ‘আমাদের সিনেমা হলে যে পরিমাণ দর্শক আসে, তাতে বিদ্যুৎ বিল দেওয়াটাই আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। প্রযোজককে টাকা দেওয়ার মতো অবস্থা আমাদের নেই। নতুন ছবি বেশি টাকা দিয়ে আনলে যে দর্শক আসে, পুরোনো ছবি চালালেও একই দর্শক আসে; বরং এখনো ময়ূরী-মুনমুনের ছবিই বেশি দেখে দর্শক। পুরোনো সব ছবিই এখন ডিজিটাল করা হয়েছে। সেগুলোই এখন চলছে।’
মিয়া আলাউদ্দি আরো বলেন, ‘ময়ূরীকে দর্শক যেমন চেনে, নতুন শিল্পীদের সেভাবে চেনে না। গল্পের দিক দিয়েও ওই সব ছবিই দর্শককে টানে। কেন টানে, জানি না। তবে এখনকার সময়ে সুপারহিট বলতে কেউ নেই; বরং ময়ূরী এখনো সুপারহিট নায়িকা। কারণ, বাংলাদেশের আড়াইশ সিনেমা হলের বেশির ভাগ হলেই চলছে ডিজিটাল ময়ূরীর ছবি। তারাই এখন সিনেমা হল বাঁচিয়ে রেখেছে।’