হলিউডের ব্যয়বহুল ১০ সিনেমা
হলিউডি সিনেমার জগতে বিগ বাজেট সিনেমা হর-হামেশাই দেখা যায়। যত বড় বাজেটের ছবি, ততই যেন বেশি সম্ভাবনা! চলচ্চিত্রকে বৈশ্বিক রূপ দিতে হলিউডি প্রযোজকদের জুড়ি নেই। প্রতিযোগিতা যেমন চলে সিনেমার সাফল্য নিয়ে, তেমনি চলে বাজেট নিয়েও। বেশি বাজেটের চলচ্চিত্রগুলো পুরোনো নয়, প্রায় সবই সাম্প্রতিককালের। আসুন জেনে নিই এ সময়ে সবচেয়ে বেশি খরচাপাতি করে বানানো হলিউডি ছবিগুলোর কথা।
পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান : ডেড ম্যান’স চেস্ট (২২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)
‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ মুভির প্রথমটি ছিল ‘কার্স অব দ্য ব্ল্যাক পার্ল’। এটা একটা বড় বাজেটের সিনেমা ছিল। দুর্দান্ত সফলতা পায় ছবিটি। তাই ডিজনি মনে করল যদি এর সিক্যুয়ালগুলোতে আরো পয়সা খরচ করা যায়, তবে আরো লাভ উঠে আসবে। তারা ঠিক এটিই করল। ২২৫ মিলিয়ন, অর্থাৎ প্রায় ২৩ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান : ডেড ম্যানস চেস্ট’। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এটি সেই ছবি যা সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে এক বিলিয়ন ডলার আয় করে।
ম্যান অব স্টিল (২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)
২০০৬-এ ‘সুপারম্যান রিটার্নস’ ছিল সুপারম্যান ফ্র্যাঞ্চাইজির পুনরুত্থানের একটা চেষ্টা। স্পষ্টত ব্রেন্ডন রথ, কেট বসওয়ার্থ, কেভিন স্পেসির মতো তারকারা সুপারম্যান ফ্র্যাঞ্চাইজির সুপার পাওয়ার ধরে রাখতে সমর্থ হননি। তাই তাঁরা সমস্ত কিছু বন্ধ করে দেন এবং ২০১৩ সালে ফিরে আসেন ২২ কোটি মার্কিন ডলারের ‘ম্যান অব স্টিল’ নিয়ে। ছবিটি নিয়ে মিশ্র মতামত থাকলেও এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৬৭ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে। তাই ‘ম্যান অব স্টিল’কে সফলই বলতে হবে।
দ্য ক্রনিকলস অব নার্নিয়া : প্রিন্স কাসপিয়ান (২২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)
তালিকার অন্য চলচ্চিত্রগুলোর মতো এটিও একটি সিক্যুয়াল। সিরিজের প্রথমটি (‘The Lion, The Witch and The Wardrobe’) তেমন ব্যবসা সফলতা না পেলেও শেষে এসে সাফল্যের মুখ দেখে। ‘প্রিন্স কাসপিয়ান’ বিশ্বব্যাপী ৪২ কোটি মার্কিন ডলারের ব্যবসা করে।
দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস (২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)
ব্যাটম্যান ট্রিলজি ছিল সবার জন্য এক অসাধারণ উপহার। সিরিজের প্রথম ছবি ‘ব্যাটম্যান বিগিনস’-এর পরে ব্যাটম্যান এক অর্থে পুনর্জীবন লাভ করে। সিরিজের দ্বিতীয় ‘দ্য ডার্ক নাইট’ প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয় যেখানে হিথ লেজার ‘জোকার’ চরিত্রে অবিস্মরণীয় অভিনয় করেন। ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’ বক্স অফিসে প্রায় ১১০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছিল।
অ্যাভাটার (২৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)
চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র বলা হয় একে। এই ছবির পরিচালক জেমস ক্যামেরন ‘টাইটানিক’-এর পরপরই এই ছবির নির্মাণে হাত লাগান। ১৯৯৯ সালে এই ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও সিনেমার চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি তখনো না থাকায় ক্যামেরন ১০ বছর অপেক্ষা করেন! ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটি বিশ্বব্যাপী পৌনে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি ব্যবসা করে।
জন কার্টার (২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)
কখনো কখনো ছবি ফ্লপ খায় তা সে যত বড় বাজেটেরই হোক না কেন। তেমনই একটি ডিজনির ‘জন কার্টার’। আড়াইশ মিলিয়ন ডলারের ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রচণ্ড ধাক্কা খায়। মাত্র ৭৩ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যান্য দেশ মিলিয়ে মোট ২০ কোটি ডলারের মতো আয় করেছিল ছবিটি, যা নির্মাণ খরচই সেভাবে তুলতে পারেনি!
হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ-ব্লাড প্রিন্স (২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)
মোট আটটি চলচ্চিত্রে সমাপ্ত এই জনপ্রিয় সিরিজের এটি হলো ষষ্ঠ। জে কে রাউলিংয়ের লেখা ষষ্ঠ উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে তৈরি করা হয় ছবিটি। ২০০৯-এ বক্স অফিস কাঁপিয়ে দেওয়া এই ছবি আয় করে প্রায় ৯৪ কোটি মার্কিন ডলার। প্রথম পাঁচদিনে প্রায় ৪০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করে ছবিটি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেয় এবং ওয়ার্নার ব্রাদার্সের বড় বাজেটের সবচেয়ে সফল চলচ্চিত্র হিসেবে স্থান পায়।
ট্যাঙ্গলড (২৬ কোটি মার্কিন ডলার)
২৫৮ মিলিয়ন ডলারের ডিজনির এই অ্যানিমেটেড মুভিটি তালিকার ৩ নম্বর স্থান দখল করে নিয়েছে। একটি অ্যানিমেটেড ছবি এত ব্যয়বহুল হতে পারে, তার প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ‘ট্যাঙ্গলড’। রাপুনজেলের কাহিনী অবলম্বনে তৈরি করা এ ছবিটি বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬০ কোটি মার্কিন ডলারের ব্যবসা করেছিল।
স্পাইডারম্যান ৩ (২৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)
একবিংশ শতাব্দীতে ‘স্পাইডার ম্যান’ সিক্যুয়াল খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাই ২৬০ মিলিয়ন ডলার বাজেট নিয়ে ‘স্পাইডার ম্যান ৩’ তালিকার দুই নম্বর স্থানে আসাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। সুপারহিরো মুভিগুলোর মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়তা পায় এই ফ্র্যাঞ্চাইজি। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯০ কোটি মার্কিন ডলারের ব্যবসা করে এই ছবিটি। ২০০৭ এর গ্রীষ্মে মুক্তি পাওয়া ‘স্পাইডারম্যান ৩’ বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি। একই সঙ্গে স্পাইডার ম্যান ট্রিলজির সবচেয়ে সফল ছবি হিসেবেও স্বীকৃত এটি।
পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান : অ্যাট দ্য ওয়ার্ল্ডস এন্ড (৩১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)
এখনো পর্যন্ত এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচ্চিত্রের নাম। তালিকায় বিভিন্ন চলচ্চিত্রের সিক্যুয়াল স্থান পেলেও ‘পাইরেটস অব দি ক্যারিবিয়ান’ হচ্ছে একমাত্র সিরিজ যার দুটি ছবি এই তালিকায় স্থান দখল করেছে। ৩১ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই ছবিটি সিরিজের তৃতীয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি ২০০৭ এর সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি হয়ে ওঠে। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯৪ কোটি মার্কিন ডলারের ব্যবসা করেছিল ছবিটি।