দ্রোহে আর আনন্দে নাট্য দিবস

Looks like you've blocked notifications!

ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) বাংলাদেশ কেন্দ্র, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের উদ্যোগে বিশ্বনাট্য দিবস উদযাপিত হলো বাংলাদেশে।

গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্বনাট্য দিবসের র‍্যালি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে মহিলা সমিতিতে গিয়ে শেষ হলো।  নাট্যকর্মীরা একে একে এসে যোগ দিয়েছিলেন এ আনন্দ শোভাযাত্রায়। তবে সবার পক্ষ থেকে বুকে ধারণ করা হয়েছিল কালো ব্যাজ। নাট্যশিল্পী সোহাগী জাহান তনু হত্যা এবং ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতেই এ ব্যাজ ধারণ করা হয়।

মহিলা সমিলিতে এরপর অনুষ্ঠিত হয় প্রীতি সম্মিলনী। আড্ডা আর একের সাথে অপরের দেখা হয়ে যাওয়া। এভাবেই সন্ধ্যার দিকে গড়ায় সময়। মঞ্চে সাড়ে ৬টার দিকে শুরু হয় পূর্ব নির্ধারিত আনুষ্ঠানিকতার পর্ব। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হলো সন্ধ্যাটা। গতকালের ঝলমলে সন্ধ্যায় মঞ্চের আলো বাড়িয়ে দেওয়া হলো অনেকখানি। আর তারপরই সম্মাননা পর্ব, সম্মাননা দেওয়া হলো দেশের অন্যতম প্রিয় মুখ, মঞ্চ সম্রাজ্ঞী ফেরদৌসী মজুমদারকে। ফেরদৌসী মজুমদার সম্পর্কে বলা হলো কিছু কথা, উঠে এলো ‘একা’ আর ‘কোকিলারা’ নাটকের কথা। একুশে পদক, প্রথম জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার, ভারতের উইলিয়াম কেরি পদকসহ নানা পদক ও পুরস্কারের কথাও বলা হলো তাঁর সম্পর্কে। এরপর উঠে এলেন তিনি মঞ্চে, সেই সাথে করতালি, উচ্ছ্বাসে আবেগে উঠে দাঁড়ালো দর্শক। সে এক দুর্দান্ত মুহূর্ত। তাঁর হাতে পদক তুলে দেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।

নাট্যব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী মজুমদার তাঁর বক্তব্যে বলেন – ‘আজ বোঝা যাচ্ছে- দেখা যায় এমন কিছুতেই সম্মান নয়। সম্মান হাসি-হাততালি আর উচ্ছ্বাসে। এটাই আমার সবচে বড় প্রাপ্য। বিশ্বনাট্য দিবস সারা বিশ্বের জন্য আনন্দের। তবে এবার কোথায় যেন একটা বেদনা বোধ আছে। দিনে দিনে বিশ্ব পঙ্কিল হয়ে যাচ্ছে। এই যে তনু হত্যা। এটা সত্যি আমাদের ব্যথিত করেছে এবং করছে। প্রতিরোধ, প্রতিবাদ যেন থেমে না যায়। আমাদের দোষ হলো আমরা খুব রেগে যাই, আন্দোলন করি। কিন্তু কদিন পর ভুলে যাই। এটা মনে রাখতে হবে এ ক্ষেত্রে ‘রক্ষকই ভক্ষক’ হয়েছে। আমি পুরস্কার পেয়েছি কিন্তু কোথায় যেন হতাশ বোধ করছি। চলুন সবাই মিলে চাই যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধীর শাস্তি না হয় আমরা থামব না।’

এ বছর বিশ্বনাট্য দিবসের বাণী দিয়েছেন রাশিয়ার খ্যাতিমান নির্দেশক মস্কোর স্কুল অব ড্রামাটিক আর্টসের প্রতিষ্ঠাতা আনাতোলি ভাসিলিয়েভ। মফিদুল হকের অনুবাদে আনাতোলি ভাসিলিয়েভের বাণী পড়ে শোনান অভিনেত্রী লাকী ইনাম।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব আইটি আই বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রসাদ দেবনাথ, নাট্যব্যক্তিত্ব ডা. ইনামুল হক, ঝুনা চৌধুরী, কামরুন নূর চৌধুরী, মোহাম্মদ বারী, মান্নান হীরাসহ বিভিন্ন নাট্যদলের কর্মীরা।

বিশ্বনাট্য দিবস স্মারক বক্তৃতা দিয়েছেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সম্মানিত চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সবশেষে ইসলাম উদ্দিন পালাকারের পালাগান ‘কমলা রঙের সাগরদীঘি’তে মগ্ন হয়ে ওঠে দর্শক।

মহিলা সমিতি মঞ্চ আবার জেগে উঠেছে ‘ভাঙা গড়া নাট্যোৎসব’-এর মধ্য দিয়ে, যা এখনো চলছে। মহিলা সমিতি মঞ্চে সেই প্রাণ ফিরিয়ে আনতেই যেন নাট্য দিবসে সবাই জড়ো হয়েছিলেন সেখানে। এভাবে আড্ডায় আর অনুষ্ঠানের রঙে, রঙিন কাগজ কেটে সাজিয়ে দেওয়া প্রাঙ্গণে রাত নেমে আসে ধীরে ধীরে। একে একে আয়োজন ফুরিয়ে এলেও একতাবদ্ধ হওয়ার রেশটুকু থেকে যায় শেষ অবধি।