সাক্ষাৎকার

পরিশ্রমের ফল পেতে শুরু করেছি : কুসুম শিকদার

Looks like you've blocked notifications!

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘শঙ্খচিল’। গৌতম ঘোষ পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পেয়েছে গত ১৪ এপ্রিল।

ছবিতে ভারতের প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যয়ের বিপরীতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কুসুম শিকদার। ছবিটি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন কুসুম।

প্রশ্ন : শুনেছি ‘শঙ্খচিল’ ছবির অডিশন দেওয়ার সময় আপনি খুব ভয় পেয়েছিলেন। এর কারণ কী ছিল?

উত্তর : আসলে সে‌ই সময় ভয় পেয়েছিলাম পরিস্থিতির জন্য। যখন শুনলাম গৌতম ঘোষ আমার অডিশন নেবেন, তখন খুব ভয় কাজ করেছিল। এর কারণ তাঁর মতো বড় মাপের একজন পরিচালকের সামনে দাঁড়ানোর শক্তি আমি পাচ্ছিলাম না। শাবানা আজমি, রেখা, রূপা গাঙ্গুলীর মতো শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছেন গৌতম ঘোষ। গ্লোবাল স্টারদের নিয়েই তাঁর কাজের পরিমাণ অনেক বেশি। এই কারণে মূলত আমার মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। মনে মনে বলেছিলাম, ‘আমি কীভাবে পারব?’

প্রশ্ন : তাহলে অডিশনের জন্য রাজি হয়েছিলেন কেন?

উত্তর : ছবিতে কাজ না হোক তবু গৌতম ঘোষের মতো একজন গুণী পরিচালকের সঙ্গে আমি পাঁচ মিনিট সময় কাটাতে পারব-এই ভাবনায় মূলত অডিশন দিতে রাজি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তাঁর সঙ্গে পাঁচ মিনিট আলাপ অথবা অডিশন দেওয়ার সময়েই হবে আমার জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন। এটা সত্যি যে শঙ্খচিলের অডিশনের আগে আমি কোনো স্বপ্ন দেখিনি। আমার মনে হয়নি যে আমিই শঙ্খচিলের একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত হব। প্রথমেই আমি ধরে নিয়েছিলাম আমাকে দিয়ে এটা হবে না। আসলে সবটাই আমার সৌভাগ্য।

প্রশ্ন : ‘শঙ্খচিল’ ছবির জন্য আপনার প্রস্তুতি কেমন ছিল?

উত্তর : যেহেতু ছবিতে দেখানো হয়েছে আমার কিশোরী এক মেয়ে রয়েছে। তাই আমাকে ওজন বাড়াতে হয়েছিল। শঙ্খচিলের জন্য আমাকে সাত কেজি ওজন বাড়াতে হয়েছিল। শুটিংয়ের সময় আমার ওজন ছিল ৫৭ কেজি আর আমার স্বাভাবিক ওজন সব সময় থাকে ৫০।

প্রশ্ন : ছবিটিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

উত্তর : নতুন ইউনিটে কাজ করেছি এটা কখনোই আমার মনে হয়নি। এর পেছনে বড় অবদান ছিল প্রসেনজিৎ দাদার। ওনার ম্যাজিকের কারণ বেশ আরাম ও স্বস্তি নিয়ে আমি কাজ শেষ করেছি। আসলে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যয়ের মতো শিল্পীর কাছে আমি নস্যি। কিন্তু এই বিষয়গুলো শুটিংয়ের সময় আমাকে তিনি বুঝতে দেননি। তিনি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। শুটিংয়ের সময় আমরা এক পরিবার হয়ে গিয়েছিলাম। মনেই হয়নি অভিনয় করেছি। ছবিতে আমার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছে সাঁঝবাতি। বাস্তবে ও শহরে বেড়ে ওঠা একটি মেয়ে কিন্তু শঙ্খচিলে গ্রামের এক কিশোরী মেয়ের চরিত্র অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। ওর অভিনয় ছিল খুব ন্যাচারাল।

প্রশ্ন : শুনেছি ছবির ডাবিংয়ের সময় আপনি নাকি খুব কান্নাকাটি করেছিলেন?

উত্তর : ডাবিং করার সময় শুধু আমার চরিত্র নয়, পুরো গল্পের মধ্যে মূলত আমি ঢুকে গিয়েছিলাম। তাই মনের অজান্তে ডাবিং করার সময় চোখে পানি চলে এসেছিল।

প্রশ্ন : ছবি মুক্তির আগেই ভারতের ৬৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র সেরা বাংলা ছবির পুরস্কার জিতেছে ‘শঙ্খচিল’ । আপনার অনুভূতি কেমন?

উত্তর : প্রথমে আমি বলব গৌতম ঘোষ ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করা ছিল আমার জীবনের বড় অর্জন। আর জাতীয় পুরস্কারের কথা যদি বলি এটা আমাদের প্রাপ্তি। অনুভূতি তো অবশ্যই সুখের। পরিশ্রমের ফল আমরা পেতে শুরু করেছি পুরস্কার পাওয়ার মাধ্যমে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ ও ভারতের চলচ্চিত্রের কাজের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য চোখে পড়েছে কি?

উত্তর : বাংলাদেশ ও ভারতের চলচ্চিত্র মাধ্যমে যারা কাজ করছেন, আমি বলব তারা সমপরিমাণ ট্যালেন্টেড। কিন্তু আমাদের মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। টেকনিক্যাল দিক দিয়ে এগিয়ে আছে ভারত। ভারতের শিল্পীরা অনেক বেশি প্রফেশনাল এবং অ্যাকটিভ।

প্রশ্ন : নাটক কিংবা চলচ্চিত্রে আপনাকে বেশির ভাগ সময়ই নন-গ্ল্যামারাস চরিত্রে বেশি দেখা গেছে। এর কারণ কী?

উত্তর : সত্যি কথা বলতে নন-গ্ল্যামারাস চরিত্র ফুটিয়ে তোলা আমার জন্য সহজ। গ্ল্যামারাস চরিত্র করতে গেলে অভিনয়ের জন্য আমাকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু নন-গ্ল্যামারাস চরিত্রে আমি দ্রুত ঢুকে যেতে পারি।

প্রশ্ন : আপনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আপনার বিয়ের খবর অনেকেই জানেন না। এর পেছনে বিশেষ কোনো ব্যাপার আছে কি?

উত্তর : আমি বিয়ে করেছি ১০ বছর আগে। খুব আয়োজন করে আমার গায়ে হলুদ ও বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল। বিয়ের অনুষ্ঠানে মিডিয়ার অনেকেই অতিথি হয়ে এসেছিলেন। যেহেতু অনেক আগে আমার বিয়ে হয়েছিল, তাই তরুণ প্রজন্মের অনেকের কাছেই বিষয়টি অজানা। তাঁর মানে এই নয় যে আমি গোপনে বিয়ে করেছি।

প্রশ্ন : ‘শঙ্খচিল’-এর পর নতুন চলচ্চিত্রে আবার কবে আপনাকে দেখা যাবে?

উত্তর : আমি খুব বেছে বেছে কাজ করি। ‘গহীনে শব্দ’-এর পর ‘লাল টিপ’ করেছিলাম। এবার ‘শঙ্খচিল’ করলাম। এর মাঝে অনেক ছবির প্রস্তাব পেয়েছি কিন্তু চিত্রনাট্য আমার পছন্দ হয়নি। ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা করছি।