বাড়ির নম্বর যখন ৪৪
গোছানো ডাইনিং টেবিল। কিন্তু টেবিলে কোনো খাবার নেই। ডাইনিং টেবিলে চলছে বিচারকার্য। অভিনেতা আবুল হায়াত, মনিরা মিঠু, মাজনুন মিজান, অপর্ণা ঘোষ, শবনম ফারিয়া, সাবিলা নূর ও শিশুশিল্পী সামির চুপচাপ বসে আছেন। বলছিলাম নতুন ধারাবাহিক নাটক ‘হাউজ # ৪৪’ এর প্রথম দিনের শুটিং দৃশ্যের কথা। শুটিং হচ্ছিল মিরপুরের এক ভাড়া করা বাড়িতে।
পরিচালক মাবরুর রশিদ বান্নাহ্ খুব যত্ন নিয়ে শট নিচ্ছেন। একবারে তিনি শট ‘ওকে’ করতে পারলেন না। বারবার শট এনজি হচ্ছিল। সাতবার শট নেওয়ার পরে ওকে হলো। এরপর স্বস্তি।
শেষ দৃশ্যে অভিনেতা মাজনুন মিজান বলে উঠলেন, ‘বিচারক আমি কিন্তো রায় দেওয়ার আগে বিচার শেষ হয়ে গেল! এ হতে পারে না। ভাবী....!’ ভাবী ডাকতে ডাকতে রুমে প্রবেশ করলেন তিনি। নাটকে মাজনুন মিজানের ভাবীর চরিত্রে অভিনয় করছেন মনিরা মিঠু।
এ প্রসঙ্গে মাজনুন মিজান বলেন, ‘এই নাটকে আমি মিঠু আপার দেবর। আরেকটি নাটকে মিঠু আপু আমার মা। দুটি চরিত্র দুই রকম। এই নাটকে আমি সব সময় মিঠু আপার পক্ষ নেই।’
বাস্তবেও কি তাই! এমন প্রশ্নে শুনে অভিনেত্রী মনিরা মিঠু বললেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমাদের দুজনের বোঝাপড়া চমৎকার। এটাই তো অভিনয়ের দক্ষতা কখনো আমরা মা-ছেলে, কখনো ভাবী-দেবর। দুটি চরিত্রের সমন্বয়ই অসাধারণ।’
মিঠু আরো বললেন, ‘শুটিংয়ের শুরু থেকে আমি নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছি। ফাহমির হাউসফুল নাটকটির কথা খুব মনে পড়ছে। তখন বান্নাহ্ নাটকটির শিক্ষানবিশ পরিচালক ছিল। আর এখন তো ও অনেক বড় হয়েছে। দুটি নাটক কখনো এক হয় না। হাউসফুল নাটকটি অনেক হিট ছিল। এই নাটকটিও অনেক জনপ্রিয়তা পাবে বলে আমার বিশ্বাস।’
মনিরা মিঠুর মতোই কথা বললেন অভিনেত্রী অপর্ণা। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই হাউসফুল নাটকটির কথা মনে পড়ছে। তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম। শুটিংয়ের প্রথমদিন চুপচাপ বসে ছিলাম। অনেক আড্ডা হতো। আর এখন তো বড় হয়েছি।’
‘হাউজ # ৪৪’ নাটকটির চরিত্র নিয়ে অপর্ণা জানালেন তাঁর চরিত্রের নাম তোহা, তিনি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন।
চরিত্রটি উপভোগ করছেন কিনা জানতে চাইলে অপর্ণা বলেন, ‘বাস্তবে আমি অভিনেত্রী না হলে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করতাম। তাই চরিত্রটাকে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছি। নাটকে আমার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। পরিবারের অনেক সিদ্ধান্ত আমাকে নিতে হয়। আমার ছোট দুই বোন জোহা ও মোহা আর এক ছোট ভাই মাহিন আছে।’
জোহা ও মোহা চরিত্রে অভিনয় করছেন শবনম ফারিয়া ও সাবিলা নূর। মাহিন চরিত্রে অভিনয় করছে শিশুশিল্পী সামির।
শবনম ফারিয়া বলেন, ‘আমরা বাস্তবে তিন বোন। এই নাটকেও তিন বোন। শুধু পার্থক্য একটাই, নাটকে আমি মেজো বোন। বাস্তবে আমি সবার ছোট। অপর্ণা আপুর সঙ্গে প্রথম কাজ করছি। অনেক ভালো লাগছে। আমার তো নিজের বড় বোনের মতোই লাগছে।’ ফারিয়ার সঙ্গে সুর মিলিয়ে সাবিলাও জানালেন তারও একই রকম মনে হচ্ছে। নাটকের সেট পরিবারের মতোই লাগছে বলে জানান সাবিলা।
সাবিলা প্রসঙ্গে ফারিয়া জানালেন, ‘আমরা একসঙ্গে মাংকি বিজনেস টেলিফিল্মে কাজ করেছি। কিন্তু আমাদের ওই সেটে দেখা হয়নি। সাবিলা অনেক মিষ্টি মেয়ে।’
সাবিলা এটা শুনে খুব খুশি হলেন। জড়তা কাটিয়ে তিনি ফারিয়াকে বললেন, ‘আপু তুমি তো ফ্রঞ্চ বেণী অনেক ভালো করে করো। আমাকে একটু করে দাও না!’
ছোটবোনের আবদার বলে কথা। ফারিয়া চিরুণি নিয়ে সাবিলার চুল বেণী করতে শুরু করলেন। পরিবারে তাঁদের ছোট ভাই মাহিন তাঁদের সামনে এসে হাজির। খুব আদুরে গলায় বলে উঠল, ‘আমি তোহা আপুকে অনেক পছন্দ করি। তোহা আপু আমাকে অনেক আদর করে।’ নাটকের তোহা, অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ এই কথা শুনে তৃপ্তি নিয়ে হাসলেন। তারপর সামির তাকে প্রশ্ন করল, ‘আচ্ছা আপু তোমার আসল নাম কী?’
অপর্ণা বললেন, ‘আমার আসল নাম অপর্ণা, সামির।’ এটা বলে অপর্ণা মেকাপ নেওয়া শুরু করলেন।
কিছুক্ষণ পরেই আরেকটি দৃশ্যের শুটিং। পরিচালক খুব মনোযোগী হয়ে চিত্রনাট্য দেখছেন। কেমন লাগছে প্রথম ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করতে? এমন প্রশ্ন শুনে বান্নাহ্ জানালেন, ‘এনটিভিতে নাটকটি প্রচার হবে তাই আমি অনেক বেশি আনন্দিত। কারণ এনটিভির নাটক সবাই দেখে। তবে কষ্ট একটাই, দিনে ১৪-১৫টা দৃশ্য করতে হচ্ছে। আমি আসলে এত দৃশ্যের শট একদিনে করতে চাই না। কারণ অনেক চাপ পড়ে। সকাল থেকে একেবারেই দম ফেলার সময় পাচ্ছি না।’
লাইট-ক্যামেরা রেডি। পরিচালক সবাইকে ডাক দিলেন। এক ডাকে সব ডাইনিং টেবিলে এসে উপস্থিত। সবাই বেশ সিরিয়াস। কিন্তু একটু পর দেখা গেল শুটিং শুরু হচ্ছে না। সবাই আবার গল্পে ডুবে গেল। অন্যদিকে গানও ধরল কেউ। গানের রেশ নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়ি শুটিং স্পট থেকে।