অন্য দেশকে গালি দেওয়া দেশপ্রেম নয়, শাফিনকে রূপম

Looks like you've blocked notifications!

শাফিন আহমেদের ভিডিওবার্তার জবাব দিয়েছেন কলকাতার ব্যান্ড ফসিলসের ভোকাল রূপম ইসলাম। শাফিন আহমেদের বক্তব্যের বিরোধিতা এবং পাল্টা যুক্তি দেখিয়েছেন তিনি। শাফিনের কথার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, ‘অন্য দেশকে গালি দেওয়া দেশপ্রেম নয়।’

শাফিনের যুক্তি ছিল, ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে প্রকাশ করা কথা নিয়ে একটি ব্যান্ডের গানের বা পারফরম্যান্সের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটা দুর্ভাগ্যজনক। আর ফেসবুকে ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে তিনি যা লিখেছেন, তা বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এবং তাঁর নাগরিক অধিকারের প্রেক্ষিত থেকে লিখেছেন। এসব বিষয়টিই ছিল তাঁর দেশপ্রেমের জায়গা থেকে, মোটেও কোনো জাতি বা দেশগত বিদ্বেষের পরিপ্রেক্ষিতে নয়।

রূপম ইসলাম অবশ্য শাফিনের এই যুক্তি মেনে নেননি। তিনি বলেন, ‘চেকপোস্ট গুলিতে সতর্কতা বাড়ানো দরকার ছাড়া ভারতকে নিয়ে আরো অনেক কিছু মন্তব্য করেছেন হামিন আহমেদ ও শাফিন আহমদে। ভারতকে অত্যন্ত কটু করে মন্তব্য করে সম্বোধন করেছেন হামিন ও শাফিন ভাই। এ বিষয়গুলো বোঝার জন্য আমার যথেষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে বলে আমি মনে করি। আর দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে অনেকে আমাকে বলেছেন, এই লাইনআপ ব্যান্ডের সঙ্গে তোমরা কীভাবে পারফর্ম করতে পারো? দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে আমি এক ধরনের অস্থিরতা দেখতে পেয়েছি। এই কনসার্টটি যদি মাইলস পারফর্ম করত এবং পাশাপাশি আমরা পারফর্ম করতাম, তাহলে সেটা সংগীত আসর না হয়ে গণ্ডগোল হওয়ার আশঙ্কা থাকত। কারণ, শ্রোতা-ভ্ক্তরা প্রশ্ন তুলতেন। আজাদি কনসার্টের আয়োজকরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরই আমরা সিদ্ধান্ত বদলাই। মূলত আমরা গণ্ডগোলের আশঙ্কা থেকেই কনসার্ট না করার কথা বলি।’

রূপম ইসলাম যোগ করেন, “আপনি আপনার দেশের প্রতি প্রেম ব্যক্ত করলেন বা অন্য দেশের আপনার প্রতি অত্যাচারের জন্য যুক্তিসংগতভাবে প্রশ্ন তুললেন। এটা নিশ্চয় স্বাগত। প্রত্যেকটা দেশেই কিন্তু ভালো আছে, খারাপ আছে। বেছে বেছে একটা দেশের খারাপ জিনিসগুলো ক্রমাগতভাবে তুলে ধরতে থাকেন, তাহলে সেটাকে আপনার নিজের দেশের প্রতি দেশপ্রেম বলা যায় কি না, সেই বিষয়গুলো থেকে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে দাঁড়িয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এই সন্দেহ আমার নিজে থেকে তৈরি হয়নি। যাঁরা এই অনুষ্ঠাগুলোতে অংশগ্রহণ করেন এবং যাঁরা এই অনুষ্ঠানগুলো দেখে আমাদের বাঁচিয়ে রাখেন, তাঁরা করেছেন। মাইসলের পেজ থেকে আর একটা কথা বলা হয়েছে, ‘আমরা এই মুভমেন্টগুলো তৈরি করেছি।’ আমাদের কী লাভ এটা করে? এটা কিন্তু আমরা তৈরি করিনি। এটা যুক্তি ও তথ্যের চাপে আমরা করেছি। প্রথমে আমরা অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলাম। যুক্তির সামনে আমরা অসহায়।”

শাফিন আহমেদ এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্বায়নের যুগে সংগীত আমরা সব জায়গায় করছি। কলকাতায় আমাদের ভক্ত রয়েছে। আজকে এ ঘটনার পর থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো ভক্ত-শ্রোতারা, যাঁরা দেখতে পেল না, শুনতে পেল না আমাদের গান। একটা ছোট বিষয়কে কেন্দ্র করে এ রকম হবে, এটা আশা করা যায় না।’

ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘আজাদি কনসার্টে’ গান পরিবেশনের কথা ছিল মাইলসের। সেখানে রূপম ইসলামের ‘ফসিলস’ ব্যান্ডটিরও পারফর্ম করার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই মাইলসকে বয়কট করতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফসিলস ও দলটির ভক্তরা একটি প্রচারণা শুরু করে। এই প্রচারণাকে পরে শাফিন আহমেদ ‘হেট ক্যাম্পেইন’বা ঘৃণা প্রচার হিসেবে জানান। মাইলসের অন্যতম সদস্য মানাম আহমেদ বলেন, ‘আমি জানি না রূপমের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী? তাঁর চিন্তাভাবনার বিষয় কী রকম। সে যদি দেশপ্রেমের বিষয়টা ভারত-বিদ্বেষের সঙ্গে মেলায়, তাহলে তার জ্ঞানের অভাব রয়েছে।’