এলভিসের প্রেমিকারা
১৯৩৫ থেকে ১৯৭৭, এই ছিল এলভিস প্রিসলির সময়। মাত্র ৪২ বছর। তাঁকে গণ্য করা হয় বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে। ভক্তরা এলভিসকে বলে ‘দ্য কিং অব রক অ্যান্ড রোল’ বা ‘দ্য কিং’। যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপির তুপেলোতে জন্মেছিলেন এলভিস প্রিসলি। এলভিসের বয়স যখন ১৩ বছর, তখন তাঁদের পরিবার টেনিসির মেমফিসে চলে যায়। ১৯৫৪ সালে নিজের প্রথম গান রেকর্ড করেন এলভিস।
প্রিসলির প্রথম সিঙ্গেল ‘হার্টব্রেক হোটেল’ মুক্তি পায় ১৯৫৬ সালের জানুয়ারিতে। মুক্তি পাওয়ার পরই যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে যায় গানটি। সুদর্শন এই গায়ক পা রেখেছিলেন অভিনয়ের রঙিন জগতেও। একই বছরের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এলভিস অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘লাভ মি টেন্ডার’।
১৯৫৮ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে জার্মানিতে চলে যান তিনি। ১৯৬০-এর দশকজুড়েই গান ও অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এলভিস। জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। ১৯৭৭ সালের ১৬ আগস্ট মারা যান এলভিস। আজ তাঁর ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।
কিশোর বয়স থেকেই নারীদের ভালোবাসা পেয়েছেন এলভিস। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীরা যেমন তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন তেমনি এলভিসও নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গ পাওয়ার জন্য ছিলেন উদগ্রীব। এলভিসের মতো তাঁর প্রেমিকারাও ছিলেন আলোচনায়। এখনোও এলভিসভক্তদের কাছে তাঁর ব্যক্তিজীবন অন্যতম আকর্ষণের বিষয়।
এলভিস প্রিসলি ও তাঁর প্রেমিকাদের নিয়ে মার্কিন পত্রিকা ‘দৈনিক ইউএসএ টুডে’তে একটি লেখা লিখেছেন এলিসা গার্ডনার। সেটারই ভাবানুবাদ দেওয়া হলো এখানে।
প্রিসিলা বলিয়্যু
এলভিস জীবনে একবারই বিয়ে করেছিলেন। ১৯৫৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রিসিলা বলিয়্যুর সঙ্গে এলভিসের দেখা হয়েছিল জার্মানিতে। তখন এলভিস সেনাবাহিনীতে কর্মরত। এলভিসের বাসাতেই ছিল পার্টি। সেখানেই ১৪ বছরের কিশোরী প্রিসিলার সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। প্রথম দেখাতেই প্রিসিলার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন এলভিস। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত জার্মানিতে ছিলেন এলভিস। ততদিন তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। এরপর এলভিস ফিরে যান যুক্তরাষ্ট্রে। কয়েক বছর পরে প্রিসিলাও চলে আসেন যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৬৭ সালের পয়লা মে বিয়ে করেন তাঁরা। ভালোই চলছিল তাঁদের। তবে একসময় কারাতে প্রশিক্ষক মাইক স্টোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন প্রিসিলা। এই নিয়ে এলভিস আর প্রিসিলার সংসারে শুরু হয় অশান্তি। ১৯৭৩ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের। এলভিস আর প্রিসিলার সংসারে রয়েছে লিসা মেরি প্রিসলি নামের একটি মেয়েসন্তান।
অ্যান-মার্গারেট
সুইডিশ এই অভিনেত্রীর সঙ্গে পর্দায় যেমন প্রেম ছিল এলভিসের, তেমনি প্রেম ছিল পর্দার বাইরেও। দুজনে একসঙ্গে ১৯৬৪ সালের মিউজিক্যাল ফিল্ম ‘ভিভা লাস ভেগাস’–এ অভিনয় করেছিলেন। এলভিসের স্ত্রী প্রিসিলা তাঁর আত্মজীবনী ‘এলভিস অ্যান্ড মি’-তে লিখেছিলেন, অ্যান-মার্গারেটের সঙ্গে এলভিসের সখ্য নিয়ে তিনি সব সময়ই শঙ্কিত ছিলেন। যদিও এলভিস তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে মার্গারেট শুধুই তাঁর ভালো বন্ধু।
নাটালিয়া উড
ধারণা করা হয়, ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝিতে মার্কিন টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নাটালিয়া উডের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন এলভিস। আবার অনেকে বলে থাকেন সেটা ছিল এলভিসের ‘পাবলিসিটি স্টান্ট’। তবে নাটালিয়ার বোন লানা উড ১৯৮৫ সালে এক স্মৃতিকথায় লিখেছিলেন, নাটালিয়ার প্রতি এলভিসের আগ্রহই ছিল বেশি। ১৯৮১ সালে ৪৩ বছর বয়সে মারা যান নাটালিয়া।
আনিতা উড
আনিতা উড ছিলেন জনপ্রিয় মার্কিন টিভি অভিনেত্রী। ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি আনিতার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এলভিস। তখনো সেনাবাহিনীতে যোগ দেননি এলভিস। জার্মানিতে গিয়েও আনিতার সঙ্গে চিঠি চালাচালি করেন এলভিস। এমনকি এক সাক্ষাৎকারে আনিতা জানিয়েছিলেন, শুধুমাত্র এলভিসের অনুরোধে প্যারামাউন্ট পিকচার্সের এক ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে মেমফিসে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। জার্মানিতে গিয়ে প্রিসিলার সঙ্গে দেখা হয় এলভিসের। এর পরই যোগাযোগ কমতে থাকে আনিতার সঙ্গে। পরে বাস্কেটবল খেলোয়াড় জনি ব্রুয়ারকে বিয়ে করেছিলেন আনিতা।
সাইবিল শেফার্ড
১৯৭০-এর দশকে মডেল, অভিনেত্রী ও গায়িকা সাইবিল শেফার্ডের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এলভিসের। তবে পরবর্তী সময়ে সাইবিল জানিয়েছেন, এলভিসের মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি তিনি, তাই সরে গিয়েছিলেন। তবে সাইবিল স্বীকার করেন এলভিস ছিলেন মজার মানুষ, বিশাল হৃদয়ের অধিকারী ও মেধাবী।
লিন্ডা থম্পসন
প্রিসিলার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর লিন্ডার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এলভিস। লিন্ডা ছিলেন গায়িকা ও অভিনেত্রী। ২০০২ সালে ল্যারি কিং-কে দেওয়া এক টিভি সাক্ষাৎকারে এলভিস সম্পর্কে লিন্ডা বলেছিলেন, ‘এলভিসের সঙ্গে কাটানো সময়গুলোতে প্রতিদিন মনে হতো আমি যেন কোনো ঋষি, রাজপুত্র বা সান্তা ক্লজের সঙ্গে আছি।’
জিঞ্জার এলডেন
এলভিসের ‘শেষ প্রেম’ বলা হয় জিঞ্জার এলডেনকে। বাগদানও করেছিলেন তাঁরা। ১৯৭৬ সালে এলভিসের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর। তখন জিঞ্জারের বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর। জিঞ্জারের বোন ছিল তখনকার মিস টেনেসি। এলভিসের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তাঁর বোন। আর সেখানেই জিঞ্জারের সঙ্গে পরিচয় হয় এলভিসের। ১৯৭৭ সালের ১৬ আগস্ট মারা যান এলভিস। মৃত্যুর সময়ে এলভিসের সঙ্গেই ছিলেন জিঞ্জার।
বারবারা গ্রে
বহুদিন এলভিসের সঙ্গে বারবার গ্রের নামটি জড়ায়নি। কারণ বারবারা ছিলেন ‘রহস্যময়ী’ এক নারী, যাঁকে ২১ বছর বয়সী এলভিসের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল ১৯৫৬ সালে তোলা এক ছবিতে। যে ছবিটি পরিচিতি পায় ‘দ্য কিস’ নামে। ছবিটিতে এলভিসের চেহারা স্পষ্ট বোঝা গেলেও অস্পষ্ট ছিল নারীটির চেহারা। কানসাস সিটিতে প্রিসলির অগোচরে ছবিটি তুলেছিলেন ফটো সাংবাদিক আলফ্রেড ওয়েরথেইমের। ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের রহস্য ভেঙে অবশেষে ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’ ও ‘ইউএসও টুডে’-এর কাছে ২০১১ সালে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন বারবারা গ্রে। জানান, এলভিসের সঙ্গে থাকা নারীটি ছিলেন তিনি। যদিও এলভিসের সঙ্গে তাঁর প্রেম বা যোগাযোগ যা কিছু ছিল সেই একদিনের জন্যই।