এ মাসের সেরা ১০ হলিউড সিনেমা

Looks like you've blocked notifications!

সিনেমাভক্তদের জন্য অসাধারণ এক মাস ছিল এ বছরের চলতি মাস সেপ্টেম্বর। এই মাসের প্রায় পুরোটা জুড়েই দুনিয়াজোড়া মুক্তি পেয়েছে দর্শকমহলে বহুল আকাঙ্ক্ষিত অনেক সিনেমা। মুক্তির তালিকায় ছিল ক্লিন্ট ইস্টউড আর রন হাওয়ার্ডদের মতো নির্মাতাদের সিনেমাও। অভিনেতা-অভিনেত্রীর তালিকায় ছিলেন টম হ্যাঙ্কস আর কলিন ফার্থের মতো তারকারা। ডিজনির অ্যানিমেশন তো ছিলই, সঙ্গে ‘ব্লেয়ার উইচ’-এর মতো হরর কিংবা ‘দ্য বিটলস’ নিয়ে ডকুমেন্টারি, সব ঘরানার দর্শকেরই মন জোগাতে মাসজুড়ে ছিল দারুণ সব সিনেমা।

সেপ্টেম্বরজুড়ে মুক্তি পাওয়া এ রকম সেরা ১০টি সিনেমা নিয়ে থাকছে এই আয়োজনে।

সসেজ পার্টি : প্রথম দর্শনে শিশুতোষ সিনেমা মনে হলেও ‘সসেজ পার্টি’র নির্মাতারা একে দেখেন ‘সর্বপ্রথম শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্মিত কম্পিউটার-জেনারেটেড সিনেমা’ হিসেবে। ‘সুপারব্যাড’ আর ‘পাইনঅ্যাপল এক্সপ্রেস’ সিনেমার গল্প লেখক সেথ রজেন, ক্রিস্টেন উইগ আর জেমস ফ্র্যাঙ্কো এখানে অভিনয় করেছেন হট ডগ আর অন্যান্য সুপারমার্কেট পণ্যের চরিত্রে, যেখানে তাঁরা সন্ধান করেন তাঁদের অস্তিত্বের অর্থ আর সার্থকতা।

লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের মার্ক ওলসেন সিনেমাটি নিয়ে বলেছেন, “আমাদের দৈনন্দিন বাস্তব জীবনের খবরগুলো যখন একেকটা হাস্যরসের উৎস বৈ আর কিছু নয়... ঠিক সেই সময়টাতে একটি ‘ব্যাগেল’ আর ‘একটি ‘ল্যাভাস’কে দেখা যায় যখন সব দূরত্ব ঘুচিয়ে নিজেদের মধ্যকার আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে... ভালোই লাগে তখন।” ২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড এবং ৮ তারিখে নেদারল্যান্ডস আর রাশিয়ায় মুক্তি পায় সিনেমাটি।

দ্য লাইট বিটুইন ওশানস : এমএল স্টেডম্যানের সর্বপ্রথম উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ১৯২০ সালের এই রোমান্টিক ড্রামা। সিনেমাটিতে যুদ্ধফেরত এক বাতিঘর রক্ষীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাইকেল ফ্যাসবেন্ডার আর তাঁর স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন অ্যালিসিয়া ভিক্যান্ডার। জলে ভেসে আসা এক শিশুকে নিজেদের ঘরে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এই দম্পতি, যে সিদ্ধান্তের জন্য তাঁদের শিকার হতে হয় একের পর এক মর্মান্তিক ঘটনার। ‘ব্লু ভ্যালেন্টাইন’ আর ‘আ প্লেস বিয়ন্ড দ্য পাইন্স’-এর নির্মাতা ডেরেক সিয়ানফ্র্যান্সের নির্মাণ ‘দ্য লাইট বিটুইন দ্য ওশানস’। সিনেমায় আবেগের জোয়ার বইয়ে দেওয়া যার স্বভাবজাত। নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিত্রায়িত এই সিনেমা। চলতি মাসের ২ তারিখে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র আর ৮ তারিখে আর্জেন্টিনা, সার্বিয়া ও জার্মানিতে মুক্তি পায় সিনেমাটি।

দ্য লাভার্স অ্যান্ড দ্য ডেস্পট : ‘সম্ভবত সিনেমায় সর্বকালের সবচেয়ে অদ্ভুত এবং সবচেয়ে উদ্ভট বাস্তব জীবন কাহিনী!’ বছরের শুরুর দিকে ‘সানড্যান্স’-এ প্রদর্শনীর সময় ‘দ্য লাভার্স অ্যান্ড দ্য ডেস্পট’ ডকুমেন্টারিটি নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন হলিউড রিপোর্টারের বিশ্লেষক টড ম্যাকার্থি।

অদ্ভুত এই ডকুমেন্টারি মূলত দক্ষিণ কোরিয়ান সাবেক চলচ্চিত্র তারকা চই ইউন-হির সাক্ষাৎকারের ওপর গড়ে উঠেছে, যাকে তাঁর স্বামীসহ অপহরণ করা হয় দ্বিতীয় কিম জং-উনের এজেন্টদের দিয়ে। কিন্তু কেন? পরে জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার সিনেমাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দিকনির্দেশনা দিতেই অপহরণ করা হয় তাঁদের। বহুল প্রশংসিত এই ডকুমেন্টারি ২৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ২৪ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় জাপানে।

থিংস টু কাম : ইসাবেল হাপার্ট ও আন্দ্রে মার্কোনের অভিনয়ে ‘থিংস টু কাম’ (লা’অ্যাভেনির) নির্মাণ করেন মিয়া হ্যানসেন। স্বামী ছেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবন পাল্টে যায় মধ্যবয়স্ক এক দর্শন শিক্ষিকার। তাঁর এই পরিবর্তিত জীবনের নানান টানাপড়েনের গল্প বলা হয়েছে সিনেমাজুড়ে।

বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রথম দেখানো এই সিনেমা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে সবখানে। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর হেনরি বার্নেস যাকে বলেছেন, ‘একটি বুদ্ধিদীপ্ত এবং সত্যিকারের প্রতিশ্রুতিশীল নির্মাণ।’ সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে সিনেমাটি মুক্তি পায় আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে এবং ২৩ তারিখে স্পেনে এসেছে ‘থিংস টু কাম’।

ব্রিজেট জোন’স বেইবি : ‘ব্রিজেট জোন’স ডায়েরি’ আর ‘ব্রিজেট জোন’স : দ্য এজ অব রিজন’-এর পর দীর্ঘ ১২ বছর পর এলো ‘ব্রিজেট জোন’স বেইবি’। সিনেমাটির কল্যাণে আবারও হিউ গ্রান্টকে সঙ্গে নিয়ে পর্দায় একসঙ্গে দেখা যায় রেনে জিলওয়েজার ও কলিন ফার্থকে। ১৯৯০-এর হেলেন ফিল্ডিংয়ের পত্রিকায় নিয়মিত কলামের ওপর অনুসরণে সহকারী হিসেবে চিত্রনাট্য তৈরি করেন ফিল্ডিং, এমা থম্পসন এবং ড্যান মেজার।

চল্লিশে পা দিয়ে ব্রিজেট আবিষ্কার করেন যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা, কিন্তু জানেন না এই অনাগতের পিতৃপরিচয়! শেষ অবধি তার এই অনুসন্ধান ঘিরেই এগোয় সিনেমার গল্প। কে আসলে এই সন্তানের পিতা—মার্ক নাকি জ্যাক? সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখে সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে সিঙ্গাপুর, সার্বিয়া ও পর্তুগালে এবং ২২ তারিখে ব্রাজিল, ইতালি আর থাইল্যান্ডে।

সালি : ২০০৯ সালের জানুয়ারির ১৫ তারিখে ক্যাপ্টেন চেসলি ‘সালি’ সুলেনবার্গার ছিলেন ইউএস এয়ারওয়েজের ফ্লাইট ১৫৪৯-এর নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু লা গার্ডিয়া এয়ারপোর্ট থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লেনের পাখায় আটকায় একপাল পাখি, যার কারণে বন্ধ হয়ে যায় বাহনটির দুটি ইঞ্জিনই। আশপাশে কোনো এয়ারপোর্ট না থাকায় সুলেনবার্গার বাধ্য হয়ে প্লেনটি নিয়ে অবতরণ করেন হাডসন নদীতে এবং সে যাত্রায় বাঁচান ১১৫ যাত্রী আর প্লেনের ক্রুদের প্রাণ। সুলেনবার্গারের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমা তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনার বিবরণ আর তার পরের বিস্ময়কর ঘটনাপ্রবাহকে তুলে ধরে পর্দায়। কিংবদন্তি নির্মাতা ক্লিন্ট ইস্টউডের পরিচালনায় সিনেমাটিতে সালির চরিত্রে অভিনয় করেন টম হ্যাঙ্কস। ছবিটি দর্শক-সমালোচক মহলে প্রশংসার পাশাপাশি জিতে নিয়েছে বেশ কয়েকটি পুরস্কার। সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখে ডেনমার্ক, হাঙ্গারি, ইসরায়েল এবং ৯ তারিখে যুক্তরাষ্ট্র আর ফিনল্যান্ডে মুক্তি পায় সিনেমাটি।

মিস পেরেগ্রিন’স হোম ফর পিক্যুলিয়ার চিলড্রেন : র‍্যানসম রিগসের ২০১১ সালের বেস্টসেলার উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমা গল্প বলে এক বালকের। এই বালক ঘটনাক্রমে সন্ধান পায় অদ্ভুত এক অনাথাশ্রমের, যেখানকার প্রত্যেক বাসিন্দারই আছে কোনো না কোনো অতিমানবীয় ক্ষমতা। ‘কিকঅ্যাস’-এর চিত্রনাট্য লেখক জেইন গোল্ডম্যানের অসাধারণ রচনা আর টিম বার্টনের নান্দনিক পরিচালনার নৈপুণ্য সঙ্গে রহস্যময় কেন্দ্রীয় চরিত্রে এভা গ্রিনের অভিনয়, সব মিলিয়ে অনন্য এক সিনেমা ‘মিস পেরেগ্রিন’স হোম ফর পিক্যুলিয়ার চিলড্রেন’। ডেনমার্ক, হংকং আর কম্বোডিয়ায় সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখে মুক্তি পাবে সিনেমাটি এবং পরে ৩০ তারিখে মুক্তি দেওয়া হবে স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সুইডেনে।

কুইন অব ক্যাটওয়ে : টিম ক্রোথার্সের ২০১২ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনী অবলম্বনে নির্মিত ডিজনির ‘কুইন অব ক্যাটওয়ে’ গল্প বলে ফিওনা মুতেসির। উগান্ডার রাস্তায় ভুট্টা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা যে বালিকা একসময় হয়ে ওঠে দাবা চ্যাম্পিয়ন।

‘মুনসুন ওয়েডিং’-খ্যাত নির্মাতা মিরা নায়ারের এই সিনেমাটির প্রদর্শন হবে ‘টরন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন ডেভিড ওয়েলোয়ো ও লুপিতা নিয়োনজো। ২৩ সেপ্টেম্বর ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পায় ‘কুইন অব ক্যাটওয়ে’।

ব্লেয়ার উইচ : প্রথমবার বেশ সফলভাবে দুনিয়াজোড়া দর্শকদের ভয় দেখানোর দীর্ঘ ১৭ বছর পর আবারও নতুন আতঙ্ক নিয়ে ফিরেছে জনপ্রিয় এই হরর ফ্র্যাঞ্চাইজ। সঙ্গে থাকছে নতুন চার মুখ আর সেই একই ভয়-জাগানিয়া গল্প। ইন্ডিওয়্যাইরের বেন ট্রাভার্স সিনেমাটিকে আখ্যা দেন ‘জুতসই উৎসাহমূলক’, আবার স্ল্যাশফিল্মের ফ্রেড টোপেল একে দেখেন ‘হরর জ্বরের জন্ম দেওয়া সিনেমাটির প্রতি একটি প্রেমপত্র’ হিসেবে। ১৬ সেপ্টেম্বর সিনেমাটি মুক্তি পায় কানাডা, নরওয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রে।

দ্য বিটলস : এইট ডেইজ আ উইক—দ্য ট্যুরিং ইয়ার্স : ১৯৬৪ সালের ‘এড সুলিভান শো’র সাড়াজাগানো পারফরম্যান্সের পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি ‘দ্য বিটলস’কে। পরের পথটুকু ছিল শুধুই দুনিয়া জয়ের। বিটলস জয় করতে বের হয় দুনিয়া। নিজেদের অসাধারণ সব সৃষ্টি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় পুরো দুটি বছর। ‘রাশ’, ‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’ সিনেমার নির্মাতা রন হাওয়ার্ডের পরিচালনায় এই সিনেমা দর্শকদের ঘুরিয়ে এনেছে সেই মাতাল সময়টিতে, যখন ‘বিটলস’ অংশগ্রহণ করে ১৫ দেশের ৯০টি শহরের ১৬৬টি কনসার্টে। পল ম্যাকার্টনি, রিঙ্গো স্টার, ইয়োকো অনো লেনন ও অলিভিয়া হ্যারিসনের জবানিতে পুনরায় উন্মোচিত হয়েছে গল্পগুলো। ডকুমেন্টারিটি মূলত ‘বিটলস’ ও এর সদস্যদের ওপর এই ট্যুর, বাঁধভাঙা জনপ্রিয়তা আর খ্যাতির প্রভাবকে তুলে ধরেছে। ১৫ সেপ্টেম্বর জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া এবং ২২ সেপ্টেম্বর জাপানে মুক্তি পায় ‘দ্য বিটলস : এইট ডেইজ আ উইক—দ্য ট্যুরিং ইয়ার্স’।