এক বছর পার করল ‘ম্যাড থেটার’

Looks like you've blocked notifications!

বাংলাদেশে নিরন্তর থিয়েটার চর্চায় সংযুক্ত নতুন এক নাম ম্যাড থেটার। গত বছর অক্টোবরে ‘নদ্দিউ নতিম’ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ম্যাড থেটারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। বছর পেরিয়ে আরেকটি অক্টোবর অতিক্রম করছে ম্যাড থেটার। প্রথম বর্ষপূর্তিকে উদযাপন করতে তারা শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে এক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে আগামী ১৫ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ ম্যাড থেটারের প্রথম প্রযোজনা ‘নদ্দিউ নতিম’ নাটকের প্রদর্শনী হবে। প্রদর্শনী শেষে গত এক বছর যাদের সাহচর্য ও ভালোবাসায় ম্যাড থেটার সিক্ত হয়েছে, তাদের সঙ্গে পুনর্মিলনীও হবে এ সময়।

কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘কে কথা কয়’ উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘নদ্দিউ নতিম’। নাটকটি রূপান্তর ও নির্দেশনা দিয়েছেন আসাদুল ইসলাম। সহযোগী নির্দেশক আনিসুল হক বরুণ, সেট ও লাইট ডিজাইন ফয়েজ জহির, পোশাক সোনিয়া হাসান এবং আবহ সংগীত আর্য মেঘদূত। গত এক বছরে ম্যাড থেটার ঢাকার বাইরে দুটি নাট্যোৎসবে অংশগ্রহণ করে, রাজশাহী থিয়েটার আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধ-মৈত্রী সাংসদ নাট্যোৎসব’ ও মণিপুরি থিয়েটার আয়োজিত ‘বিষু উৎসব’। এ ছাড়া এ বছর ১৯ জুলাই ‘ম্যাড থেটার’ হুমায়ূন আহমেদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে স্মৃতিচারণ ও ‘নদ্দিউ নতিম’ নাটকের দ্বাদশ রজনী উৎসর্গের মধ্য দিয়ে।

মঞ্চনাটকটির কাহিনী সংক্ষেপ এমন : মতিন একজন কবি। মনে মনে নিজেকে কল্পনা করে নেয়, সে একজন উজবেক কবি। নিজেই সে নিজেকে স্বপ্ন দেখে—ধবধবে ফর্সা গায়ের রং, পরনে জোব্বার মতো একটা পোশাক, লম্বাটে মুখ, চোখ তীক্ষ্ণ। মতিনের মধ্যে বাস করে অন্য এক মতিন। দিনে দিনে মতিন উদ্দিন হয়ে ওঠে নদ্দিউ নতিম। মতিনের হৃদয়ের সবটুকু দখল করে থাকে সহপাঠিণী নিশু। ভাবের ভেলায় ভেসে বেড়ালেও ভাবাবেগে মতিন ডুবে যায় না, সে বুঝতে পারে নিশুর মতো স্কলার মেয়ের যোগ্য সে নয়। মতিনের একদিন চোখে পড়ে পত্রিকার পাতায় তিন লাইনের ছোট্ট একটা বিজ্ঞাপন, একজন সার্বক্ষণিক টিউটর প্রয়োজন, টিউটরের সৃজনশীলতা ব্যক্তিগত যোগ্যতা হিসেবে ধরা হবে, বেতন আকর্ষণীয়।

বেতনের আকর্ষণীয় ক্ষমতায় মতিন তার কবিসত্তাকে সাময়িক স্তিমিত রেখে কমল নামের একজন মানসিক প্রতিবন্ধী বাচ্চার টিউটর পদে অভিষিক্ত হয়। মতিনের কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হওয়ায় তাকে টিউটর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু প্রতিবন্ধী বাচ্চাটি কবিকে ভোলে না। বাচ্চাটি কবির সঙ্গে কথা বলতে চায়, কিন্তু সে সুযোগ তো আর নেই। কবি চলে গেছে। বাচ্চাটি জেদ ধরে, সে কথা বলবেই বলবে। একপর্যায়ে সুযোগ হয় কবির সঙ্গে কথা বলার। কমল মতিনের সঙ্গে তার জীবনের একটি সিক্রেট শেয়ার করে, যে সিক্রেটের জন্য মতিনকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়াতে হয়। হাসপাতালের এক হিমশীতল ঘরে সে শুয়ে থাকে। তার কাছে মনে হয়, সে যেন অনন্তকাল এভাবেই শুয়ে ছিল।

কী সেই সিক্রেট, যার জন্য কবিকে জীবন দিতে হলো? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে খুঁজতে নাটক এগিয়ে চলে।

মানুষের অবচেতনে এক ধরনের সূক্ষ্ম পাগলামি কাজ করে। এই পাগলামি ব্যবহার করে কেউ কেউ প্রথাগত যুক্তি-বুদ্ধির দেয়াল ভেঙে নতুন সমীকরণ আমাদের সামনে দাঁড় করায়। যারা এই পাগলামি ব্যবহার করতে পারে, তারা প্রচলিত ধারার বাইরে নতুন কিছু করার সম্ভাবনা তৈরি করে। সেই সম্ভাবনাকে থিয়েটারের মাধ্যমে প্রকাশ করাই ম্যাড থেটারের লক্ষ্য।