‘লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন প্যারিস’-এর ধর্ষণ দৃশ্য নিয়ে সমালোচনার ঝড়

Looks like you've blocked notifications!

১৯৭২ সালের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন প্যারিস’। এতে অভিনয় করেছিলেন মার্লোন ব্র্যান্ডো ও মারিয়া স্নেইদার। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন বার্নার্দো বের্তোলুচ্চি। ইতালি ও স্পেনে ছবিটির প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

চলচ্চিত্রটিতে বেশ কিছু উগ্র যৌন দৃশ্য রয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে সে সময়। আবার অনেক সমালোচকই ছবিটিকে অন্যতম সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ছবি বলে অভিহিত করেন। সব সময়ই আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে ছবিটি।

তবে এত বছর পর এসে আবারও ছবিটি সমালোচনার ঝড় তুলেছে। অভিযোগের তীর পরিচালক বার্নার্দো বের্তোলুচ্চি ও অভিনেতা মার্লোন ব্র্যান্ডোর দিকে। ছবিতে পল চরিত্রে অভিনয় করেন মার্লোন ব্র্যান্ডো, জেন চরিত্রে অভিনয় করেন মারিয়া স্নেইদার।

ছবিটির অন্যতম আলোচিত দৃশ্যটি হলো যেখানে জেনকে ধর্ষণ করেন পল। ‘বাটার রেপ সিন’ নামে পরিচিত সেই দৃশ্যটি নিয়েই আবার সমালোচনার ঝড় উঠেছে হলিউডে। দ্য গার্ডিয়ান, ভ্যারাইটি, হাফিংটন পোস্ট, এনডিটিভিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও খবরটি এখন ছড়িয়ে পড়েছে দাবানলের মতো।

২০১৩ সালে ধারণ করা একটি ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে পরিচালক বের্তোলুচ্চি স্বীকার করেছেন, ধর্ষণ দৃশ্যটির বিষয়ে আগে থেকেই কিছুই জানতেন না অভিনেত্রী মারিয়া। তবে মার্লোন ব্র্যান্ডো এবং বের্তোলুচ্চি এই দৃশ্য সম্পর্কে আগেই পরিকল্পনা করেছিলেন।

২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ৫৮ বছর বয়সে প্যারিসে মারা যান অভিনেত্রী স্নেইদার। ছবিটির শুটিংয়ের সময় মারিয়ার বয়স ছিল ১৯ বছর এবং তিনি ছিলেন কুমারী। ছবিটির শুটিং শেষ করার পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন মারিয়া। তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন, বেশ কয়েকবার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন। বেশি কিছুদিন মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাও নিয়েছিলেন মারিয়া।

মারিয়ার মৃত্যুর দুই বছর পর এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বের্তোলুচ্চি বলেন, ‘ছবিটির শুটিংয়ের পর মারিয়া আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেনি। একদিক থেকে মারিয়ার প্রতি আমি অবিচার করেছি। কারণ দৃশ্যটি ধারণের আগে আমি তাকে কিছুই বলিনি। কারণ আমি তার প্রতিক্রিয়া তুলে ধরতে চেয়েছিলাম একজন মেয়ে হিসেবে, অভিনেত্রী হিসেবে নয়। ধর্ষণ দৃশ্যটির ব্যাপারে অবশ্য মার্লোন আগে থেকেই জানতেন। আমি চেয়েছিলাম মারিয়ার যেন সত্যিকার অর্থেই নিজেকে ধর্ষিতা মনে হয়। এবং সে জন্য আমি নিজেকে দোষী মনে করি। তবে এর জন্য আমার মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। কারণ আমি চেয়েছিলাম মারিয়া অভিনয় না করে বাস্তবে ধর্ষিতার কষ্ট অনুভব করুক। হয়তো সে সময় আমি ছবিটি নিয়ে প্রচণ্ড খামখেয়ালিপনা করেছিলাম।’

এল ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মারিয়া স্নেইদার বলেছিলেন, ‘আমি অপদস্থ হয়েছিলাম দৃশ্যটি করতে গিয়ে, সত্যি বলতে নিজেকে ধর্ষিতাই মনে হয়েছিল। দৃশ্যটি নেওয়ার পর মার্লোন আমার কাছে ক্ষমা চাননি বা সহানুভূতিও প্রকাশ করেননি।’

এ নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন হলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। মার্কিন অভিনেত্রী জেসিকা চাসটেইন টুইটারে লিখেছেন, ‘৪৮ বছরের এক লোক ১৯ বছরের এক মেয়েকে ধর্ষণ করছেন, এই দৃশ্যটি অনেকেই উপভোগ করেছেন, ছবিটি অনেকেরই পছন্দের ছবির তালিকায় রয়েছে। অথচ এই দৃশ্যটি সম্পর্কে নাকি সেই অভিনেত্রী জানতেনই না। এটা জানার পর থেকে ভীষণ অস্বস্তিবোধ হচ্ছে আমার।’ 

হলিউড অভিনেতা ক্রিস ইভান্স লিখেছেন, ‘আমি আর কখনো এই ছবিটা দেখব না। বের্তোলুচ্চি অথবা ব্র্যান্ডোর ভূমিকা মেনে নিতে পারছি না। ঘটনাটা ন্যক্কারজনক। আমি ক্রুদ্ধ।’

‘সেলমা’ ছবির পরিচালক আভা দুভেরনে টুইটারে লিখেছেন, ‘একজন পরিচালক হিসেবে আমি এটাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। একজন নারী হিসেবে আমি শঙ্কিত, বিধ্বস্ত এবং ক্রুদ্ধ।’