অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল, তানজিন তিশা ও নাজিফা তুষির সঙ্গে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ক্লিপ গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে আপলোড করা হয় চিত্রনায়ক শরিফুল রাজের ফেসবুক আইডি থেকে। যদিও কিছুক্ষণ পরই সেগুলো  মুছে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় গত দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন সুনেরাহ, তানজিন তিশা ও তুষি।

এ বিষয়ে বুধবার (৩১ মে) দীর্ঘ এক বিবৃতিতে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেছেন চিত্রনায়ক শরিফুল রাজ। তার আগে ফাঁস হওয়া ভিডিও বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল। মঙ্গলবার (৩০ মে) এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই কথা জানান সুনেরাহ।

এবার এ ঘটনা নিয়ে সরব হলেন অভিনেত্রী তানজিন তিশা। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাই দেশে এসে এ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান এই অভিনেত্রী। আজ বৃহস্পতিবার (০১ জুন) দিবাগত রাতে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে তানজিন তিশা লেখেন, ‘‘দুটি শো-তে অ্যাটেন্ড করার কারণে বেশ কিছুদিন ধরে আমি আমেরিকাতে আছি। বাংলাদেশে যখন সকাল তখন এখানে গভীর  রাত। এজন্য বাংলাদেশের খবরাখবর খুব বেশি জানি না আমি ৷ আমাকে জড়িয়ে যে ঘটনাটা ঘটে গেছে, সেটি পরে আমি দেখেছি, জানতে পেরেছি।’’

দর্শক ও অনুরাগীদের উদ্দেশ্য তিশা লেখেন, ‘‘বিষয়টি দুঃখজনক। এটা নিয়ে আমি বলতে চাই, স্যোশাল মিডিয়াতে আমার যে ভিডিও আপ করা হয়েছে, সেটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত ভিডিও। ৬-৭ বছর আগে আমরা বন্ধুরা ফান করে ভিডিওটি করেছিলাম। যেহেতু এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ভিডিও, তাই এটার ব্যাখ্যা দেওয়ার কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব জীবন আছে, ব্যক্তিত্ব আছে, ব্যক্তিগত ব্যাপার আছে, যেটাকে জাজ করার অধিকার অন্য কাউকে আমি দিতেও চাইনা। তাই আমার দর্শক ও অনুরাগীদের উদ্দেশ্য এতটুকুই বলব ৬-৭ বছর আগের সামান্য একটা ক্লিপ দিয়ে ব্যক্তি তানজিন তিশাকে জাজ করে ফেলবেন না, প্লিজ। আপনাদের ভালবাসা আর দোয়ায় আমি আজ এই পর্যন্ত এসেছি। তাই আমার অভিনয় আর ব্যক্তিগত জীবনকে আলাদা রাখবেন, আমি আমার অভিনয় দিয়েই আপনাদের কাছে বেঁচে থাকতে চাই সবসময়, প্রিয় হয়ে থাকতে চাই। যদিও আমি বলেছি আমার এই ঘটনা নিয়ে কাউকে ব্যাখ্যা দিতে চাই না, তবে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী আর দর্শকদের যদি এই ঘটনা বিব্রত করে, কষ্ট দেয় আমি মন থেকেই দুঃখ প্রকাশ করছি।’’

‘আপত্তিকর বা গোপন ভিডিও ফাঁস’ শব্দগুলো কারেকশন করা উচিত উল্লেখ করে অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘‘এই ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন চ্যানেল,পত্রিকা, অনলাইন নিউজে, ফেসবুক গ্রুপে, কমেন্টে বলা হচ্ছে/লেখা হচ্ছে ‘শরীফুল রাজের সঙ্গে তিশার আপত্তিকর বা গোপন  ভিডিও ফাঁস।’ যথাযথ সম্মান নিয়েই আপনাদের বলছি, এই ভিডিওর মধ্যে শরীফুল রাজ কোথা থেকে এলো? কী গোপনীয়তা এখানে? তার ফেসবুক আইডি থেকে এটি প্রকাশ পেয়েছে বলেই কেন ভাবছেন সেখানে আমি তার সাথে আছি। ভিডিওতে আমি একা এবং সেটা কোনো আপত্তিকর বা গোপন ভিডিও না। বরং সেটা আমার ব্যক্তিগত মুহূর্তের ৷ সুতরাং ‘আপত্তিকর বা গোপন ভিডিও ফাঁস’ শব্দগুলো কারেকশন করা উচিত। এটা বিব্রতকর এবং অসম্মানজনক।’’

ফাঁস হওয়া ভিডিও বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে তানজিন তিশা লেখেন, ‘‘একজন মানুষের গোপনীয়তা, ব্যাহত করা , হয়রানি করা  বা ব্যক্তিগত ভিডিও অনুমতি ছাড়া প্রকাশ্যে প্রকাশ করা, এটা বড় অপরাধ। তাই যার আইডি বা যিনি এটি আপ করেছেন বাংলাদেশে ফিরে আমি তাঁর বিরুদ্ধে আইনি উদ্যোগ নেব। তবে, ইতোমধ্যেই অনেকেই ধারণা করতে পারছেন,অনেকের মুখে মুখেও এটি শোনা যাচ্ছে কে বা কারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আমি এখানে কারোও নাম উল্লেখ করতে চাই না, আমি দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি সম্মান রেখে পদক্ষেপ নেব। সেই আইনই বলে দেবে কে বা কারা এই ব্যাক্তিগত ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে আমার সম্মান নষ্ট করেছে, কে বা কারা এই ভয়ংকর অপরাধে জড়িত।’’

এ ঘটনায় শরিফুল রাজের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার উদ্দেশে এই অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘‘শরীফুল রাজের আইডি থেকে ভিডিওগুলো আপ করা হয়েছে এবং রাজ তার ব্যক্তিগত আইডি থেকে দুঃখ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছে। শুধু দুঃখ প্রকাশেই কেন ঘটনা শেষ করতে চাইছ রাজ? এই যে তোমাকে জড়িয়ে কয়েকটা মেয়ের সম্মান নষ্ট হলো, তাদের ব্যক্তিগত ও ক্যারিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলল সবাই, পরিবারের সামনে হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে, এত সিলি সিলি ক্যাপশন দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ ভিডিওগুলোকেও আপত্তিকর বানানো হলো, এই দায়ভার কী তোমার না? কারণ তুমিই তো বলেছ তোমার আইডি হ্যাক করা হয়েছে। তোমার দায়িত্বশীলতার জায়গায় তুমি কী করেছ? কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছ না? কেন এর পিছনের মূল হোতাকে খুঁজে বের করছ না? যদিও দেশে এসেই আমি এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিব, তবুও রাজ আমি তোমার কাছ থেকে এতটুকু দায়িত্বশীল মনোভাব আশা করেছিলাম সত্যি।’’

দর্শকের মনে কাজ নিয়েই থেকে যেতে চায় জানিয়ে তিশা লেখেন, ‘‘আসলে তানজিনা তিশা তার কাজ দিয়েই দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছে এবং কাজ নিয়েই এই পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে আছে দর্শকের মনে কাজ নিয়েই থেকে যেতে চায়। তাই দর্শকদের কাছে অনুরোধ, আপনাদের তানজিন তিশাকে কাজের মাধ্যমেই বাঁচিয়ে রাখুন।’’