শাহরুখের ‘ডানকি’ বনাম প্রভাসের ‘সালার’: মুক্তি পাচ্ছে বড়দিনে
বলিউড তারকা শাহরুখের ‘ডানকি’ বনাম তেলেগু তারকা প্রভাসের ‘সালার’ শাহরুখ খান, ৯০-এর দশক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বলিউড সিনেমার আকাশে সবচেয়ে আলোকিত তারকার নাম। বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই ৬০-এর কোঠায়ও ব্র্যান্ড এসআরকে অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো স্থান পাচ্ছে সর্বোচ্চ উপার্জনকারী সিনেমার তালিকায়। অন্যদিকে প্রভাস ২১ শতকের দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী তারকা। তামিলনাড়ুতে জন্মগ্রহণকারী তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এই তারকা বর্তমানে গোটা ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী অভিনেতাদের একজন। আসছে বড় দিনে ভারতীয় সিনেমার এই দুই অধিপতি মুখোমুখি হতে যাচ্ছে; অবশ্যই তাদের অভিনয়ের যুদ্ধে। একদিকে শারুখের বহুল প্রত্যাশিত ‘ডানকি’, অন্যদিকে সিজফায়ার শিরোনামে প্রভাসের ‘সালার’-এর প্রথম পার্ট।
স্বভাবতই হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে মিডিয়াসহ শাহরুখ-প্রভাসের সারা দুনিয়াজোড়া ভক্তদের মধ্যে। কে কার থেকে কতটা এগিয়ে থাকবে- এমন জল্পনা-কল্পনার খোরাক যোগানো ছবি দু’টির বিস্তারিত নিয়েই আজকের নিবন্ধ। চলুন, জেনে নেওয়া যাক ‘ডানকি’ ও ‘সালার’ চলচ্চিত্রের বিস্তারিত।
শাহরুখ খানের ‘ডানকি’
কেমন গল্প থাকছে ‘ডানকি’ সিনেমায়
চলচ্চিত্রটির শিরোনামটি এসেছে মুলত ডানকি ফ্লাইট থেকে। সাধারণত এক দেশে থেকে একাধিক অবৈধ ট্রাঞ্জিটের মাধ্যমে অন্য দেশে প্রবেশের পদ্ধতি বোঝাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ডানকি ফ্লাইট বা ডানকি রুট। এই পথে প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোতে প্রবেশ করে।
এমনি এক ভারতীয় তরুণের জীবন কাহিনী ফুটে উঠবে এই সিনেমায়। মজার মজার সব ঘটনার মধ্য দিয়ে আবর্তিত হবে নানান জটিলতায় ভরা এই অবৈধ যাত্রা। পরিশেষে সে কি নিজের গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে, না কি ফিরে আসবে নিজের দেশে- তারই জবাব মিলবে এই রম্য উপস্থাপনায়।
‘ডানকি’ নির্মাণের নেপথ্যের কলাকুশলীরা
২০২০ সালের শেষের দিকে গুজব উঠে যে, বলিউড বাদশাকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানাতে যাচ্ছেন প্রথিতযশা চলচ্চিত্রকার রাজকুমার হিরানি। ২০২১ সালের আগস্ট নাগাদ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল ছবির চিত্রনাট্য। অতঃপর পরের বছর ১৯ এপ্রিলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর বিষয়টি আর গুজব থাকে না।
পরিচালক হিরানিসহ গল্পের স্ক্রিপ্ট লেখনে অংশ নিয়েছেন অভিজাত জোশী এবং কণিকা ধিলোন। দৃশ্য ধারণের জন্য সিনেমাটোগ্রাফার অমিত রায়কে প্রথমে বেছে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে তার জায়গায় চূড়ান্ত ভাবে স্থলাভিষিক্ত হন সিকে মুরলীধরন। আর এর মাধ্যমে তিনি লাগে রাহো মুন্না ভাই (২০০৬), থ্রি ইডিয়েট্স (২০০৯) এবং পিকে (২০১৪) এর পর হিরানির সঙ্গে চতুর্থবারের মতো একসঙ্গে হলেন।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় মূল ফটোগ্রাফি। ২০২২ সালের জুলাই মাসে বুদাপেস্ট এবং লন্ডনে চিত্রগ্রহণ হয় টানা এক মাস। অক্টোবরে মুম্বাইতে শাহরুখ খানের একটি দুর্ধর্ষ বাইকের সিকোয়েন্স শুটিং হয়। নভেম্বরে সৌদি আরবের জেদ্দা ও নিওমে শ্যুটিং চলে টানা ১২ দিন। ২০২৩-এর জানুয়ারী মাসে মুম্বাইতে পানির নীচের দূর্দান্ত একটি শটে অংশ নেন এরআরকে।
সিনেমার সঙ্গীত আয়োজন করেছেন স্বনামধন্য সঙ্গীত কম্পোজার প্রীতম চক্রবর্তি।
রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট এবং জিও স্টুডিও নির্মিত ছবিটির প্রযোজনায় ছিলেন স্বয়ং হিরানি, জ্যোতি দেশপান্ডে ও শাহরুখ-সহধর্মিনীয় গৌরী খান।
ডানকি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক নন-থিয়েট্রিকাল ডিস্ট্রিবিউশন স্বত্ব বাবদ আয় করেছে ২৩০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি টাকায় ৩০৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকারও বেশি)। দেশের ভেতরে নন-থিয়েট্রিকাল প্রচার স্বত্ব থেকে এসেছে ১৫৫ কোটি রুপি (বাংলাদেশি টাকায় ২০৫ কোটি ২৪ লাখ টাকারও বেশি)। এই স্বত্বটি নিয়েছিল জিয়োসিনেমা।
শাহরুখের ‘ডানকি’তে আর কারা থাকছেন
ছবির কাস্টিং ডিরেক্টর ছিলেন মুকেশ ছাবরা। ‘ডানকি’-এর মাধ্যমে প্রথমবারের মত শাহরুখের নায়িকা হিসেবে দেখা যাবে তাপসী পান্নুকে। ২০২২ সালের অক্টোবরে কাস্টিং-এ যোগদান করেন বোমান ইরানি, দিয়া মির্জা, সতীশ শাহ, এবং ভিকি কৌশাল। অন্যান্যদের মধ্যে আরও দেখা যাবে ধর্মেন্দ্র ও পরীক্ষিত সাহনিকে।
প্রভাসের ‘সালার পার্ট-১ সিজফায়ার’
‘সালার’ সিনেমার কাহিনী
মৃত বন্ধুকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষাকে রীতিমত মিশন হিসেবে নিয়ে অভিযানে নেমে পড়ে একজন গ্যাং লিডার। রূদ্ধঃশ্বাস এই অভিযানে ভয়াবহ সব অপরাধী চক্রের সঙ্গে মরণপণ লড়াইয়ের পটভূমি নিয়ে অগ্রসর হবে ‘সালার’-এর গল্প।
‘সালার’ চলচ্চিত্রের নির্মাণ ও বাজেট
২০২০-এর ২ ডিসেম্বর শিরোনাম প্রকাশের মাধ্যমে উন্মোচিত হয় সিনেমাটির নির্মাণ পরিকল্পনা। মুল কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হয় হায়দ্রাবাদে ২০২১-এর ১৬ জানুয়ারী। তারও কিছু দিন পর ২৯ জানুয়ারী তেলেঙ্গানার গোদাবরীখানি শহরের কাছে কয়লা খনিতে শুরু হয় শ্যুটিং।
২০২২ সালের মার্চ নাগাদ শ্যুটিং-এর মাত্র ৩০ শতাংশ শেষ হয়েছিল। একই বছর প্রভাসের রাধে শ্যাম এবং নীলের কেজিএফ চ্যাপ্টার ২ মুক্তির কারণে চিত্রগ্রহণ সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে মার্চে স্পেনে ছুটি কাটাতে যেয়ে প্রভাস হাঁটুতে ব্যাথা পান, যার কারণে শ্যুটিং আরও বিলম্বিত হয়েছিল। সব মিলিয়ে জুন মাসে আবার নতুন উদ্যমে শুরু হয় শ্যুটিং।