‘স্কুইড গেম: সিজন টু’র জনপ্রিয় যেসব চরিত্র
একসঙ্গে সাতটি পর্বে মুক্তি পেলো বহুল প্রতীক্ষিত কোরিয়ান ধারাবাহিক স্কুইড গেমের দ্বিতীয় কিস্তিটি। গত বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) নেটফ্লিক্সে একসঙ্গে সাতটি পর্বে মুক্তি পায় ধারাবাহিক স্কুইড গেমের দ্বিতীয় কিস্তিটি।
হোয়াং ডুং-হিয়কের পরিচালনায় খেলাকে ঘিরে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে প্রতিটি চরিত্রের সুখ-দুঃখ, হতাশা ও আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ জটিল মনস্তত্ত্ব। প্রথম কিস্তির মতো এবারেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে থ্রিলার সিরিজটির বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রগুলো। চলুন, সেগুলোর মধ্য থেকে সর্বাধিক জনপ্রিয় আটটি চরিত্রের নানা দিক সম্বন্ধে পর্যালোচনা করা যাক।
স্কুইড গেম সিজন ২-এর শীর্ষ আটটি চরিত্র
সংগি-হন: প্লেয়ার ৪৫৬| লি ঝুং-জে
বিজয়ী হিসেবে বেঁচে থাকা একমাত্র ব্যক্তি সং গি-হন তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে খুঁজে চলেছে বেনামী ‘রিক্রুটার’কে। উদ্দেশ্য একটাই, আর তা হচ্ছে অমানবিক স্কুইড গেমকে ধ্বংস করা। দ্বিতীয় সিজনে তার এক বিস্ময়কর এবং অনুপ্রেরণাদায়ক রূপান্তর দেখা গেছে। আর তা হচ্ছে- এক সময়ের ঋণগ্রস্ত জুয়ারি থেকে পাল্টে গিয়ে আবেগপ্রবণ ও নৈতিক দ্বন্দ্বে জর্জরিত ব্যক্তির আগমন। ইল-নাম (প্লেয়ার ০০১)’কে রক্ষা করা থেকে শুরু করে পুরো সিস্টেমের বিরুদ্ধে তার একাকী ভূমিকা প্রধান চরিত্র হিসেবে ন্যায্যতা পেয়েছে। কোমলতা ও অটল সংকল্পের নিবিষ্ট মেলবন্ধনের চিত্রায়নের জন্য থ্রিলারপ্রেমিরা আলাদাভাবে মনে রাখবেন লি ঝুং-জে’কে।
কিম ঝুন-হি: প্লেয়ার ২২২| ঝো ইউ-রি
পেছনের গল্পটা না জানা গেলেও গর্ভবতী অবস্থায় টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া কিম ঝুন-হি বেশ শক্তিশালী একটি চরিত্র। সহ প্রতিযোগী লি মাইয়ং-গি’র পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি তার নৈতিক অবস্থানকে বিশেষায়িত করে। এছাড়াও কিম ইয়ং-মি’র ভাগ্য নির্ধারণের দৃশ্যগুলোতে কিম ঝুন-হি’র বাস্তববাদী চিন্তা চরিত্রটিতে নতুন পর্যায় যোগ করে। তার শান্ত আচরণ এবং পক্ষপাতহীনতা তাকে স্বতন্ত্রতার পাশাপাশি দিয়েছে মর্যাদা। গল্পে অন্যান্য প্রতিযোগীদের মতো পর্দার বাইরে থেকে দর্শকরাও তার এই স্বকীয়তাকে গভীরভাবে অনুভব করেছে।
ছো হিয়ন-জু: প্লেয়ার ১২০| পার্ক সং-হুন
অস্ত্রপোচারের মাধ্যমে শারীরিক পরিবর্তনের খরচ যোগাতে খেলায় অংশ নেয় ট্রান্সজেন্ডার ছো হিয়ন-জু। তার অংশগ্রহণের আরও একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে তার মতো জীবনধারণ করা মানুষগুলোকে অনুপ্রাণিত করা। তার এই মহানুভব দিকটি প্রকাশিত হয় প্রতিযোগিতার ‘গ্লাস ব্রিজ’ নামের শ্বাসরুদ্ধকর পর্বটিতে। যখন তার স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে যে, সে শুধু নিজের জন্য এখানে আসেনি। তার আবেগঘন মুহূর্তগুলো গেমের নিষ্ঠুরতা ও বিশৃঙ্খলার মাঝে এক চিলতে মানবিক পরশ হিসেবে কাজ করেছে। সেই সঙ্গে তার সাহসিকতা তাকে করে তুলেছে সিজনের সবচেয়ে প্রভাবশালী।
ঝাং জিয়ম-ঝা: প্লেয়ার ১৪৯| খাং এ-শিম
ছেলে ইয়ং-সিককে ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত করতে মা ঝাং জিয়ম-ঝায়ের প্রবেশ ঘটে এই প্রাণঘাতী খেলায়। কিন্তু টুর্নামেন্টে প্রবেশের পর তার ছেলেকেও সে একজন প্রতিযোগী রূপে দেখতে পায়। সবচেয়ে মর্মান্তিক রেড লাইট গ্রিন লাইট রাউন্ডে তার আকস্মিক ধাক্কা ও অনুশোচনা সত্ত্বেও সে অদম্য স্পৃহা নিয়ে সামনে অগ্রসর হয়। হৃদয়ের গহীনে লুকিয়ে থাকা প্রজ্জ্বলন ও ভিয়েতনাম যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ভিন্ন মাত্রা লেপন করেছে এই চরিত্রের ওপর। কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ও ছো হিয়ন-জুয়ের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব চিহ্নিত করেছে তার বৈশিষ্ট্যের চড়াই-উৎড়াইগুলোকে। সব মিলিয়ে ঝাং জিয়ম-ঝা একাই পুরো নির্দয় উপাখ্যানকে টেনে নিয়ে গেছেন ফ্যামিলি ড্রামার রজ্জুতে বেঁধে।
থ্যানোস: প্লেয়ার ২৩০| ছোই সিউং-হিয়ন
বেগুনি চুল, অদ্ভূত র্যাপার, এবং সবকিছু থোরাই কেয়ার করা থ্যানোসের মত চরিত্রটির পুরো সিরিজে আর কারো সঙ্গেই মিল পাওয়া যাবে না। বিস্ময়কর হলেও এই বিড়ম্বনাপূর্ণ চরিত্রটি পুরো প্রতিযোগিতাকে বিনোদনে ভরিয়ে রেখেছিল। অকারণেই মারামারি উস্কে দেওয়া থ্যানোসের বৈশিষ্ট্যের প্রধান দিক। বিশেষ করে রেড লাইট গ্রিন লাইট পর্বে বিপরীত পক্ষে থাকা প্রতিযোগীদের সঙ্গে তার নাশকতামূলক ঘটনা তাকে রীতিমত খলনায়কের তকমা দিয়েছে। তবে তার আকষর্ণীয় দিক হচ্ছে তার গতিবিধি নিয়ে কেউই আগে থেকে প্রস্তুত থাকে না। বিরক্তির উদ্রেক ঘটালেও যুগপৎ ভাবে রেখে যায় হাস্যরসের খোরাক। সবকিছুর সঙ্গে ক্লাইমেক্স অংশে মূল ষড়যন্ত্রে তার অবস্থান এবং চূড়ান্ত পরিণতি এক অনন্য মাত্রা দিয়েছে থ্যানোসকে।
দ্যা ফ্রন্ট ম্যান: প্লেয়ার ০০১| লি বাইয়ং-হন
কাহিনীর প্রয়োজনেই নিজের নামের পেছনের রহস্যটা প্রথম সিজনে একদম শীর্ষে রেখেছিল দ্যা ফ্রন্ট ম্যান। অতঃপর প্রয়াত ওহ ইল-নামের পথ ধরে আবির্ভাব ঘটে হোয়াং ইন-হো’র। দ্বিতীয় সিজনে ওহ ইয়ং-ইল নামে গোপনে প্লেয়ার ০০১ হিসেবে সে প্রবেশ করে গেম-এ। সং গি-হনকে নজরদারিতে রেখে এবং তাকে চরম শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রচন্ড ধূর্ততার পরিচয় দেয় ইয়াং-ইল। একজন সাধারণ খেলোয়াড়ের আড়ালে চতুর নটরাজের দ্বৈততাটি পিলে চমকে দেওয়ার অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল চরিত্রটিকে। এই রহস্যময়তা এবং কৌশল দর্শকদের সিরিজের প্রতি আকৃষ্ট রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
পার্ক ইয়ং-সিক: প্লেয়ার ০০৭| ইয়াং ডুং-ঘেয়ন
সিরিজে ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মানসিক দুর্বলতার প্রতীক বলা যেতে পারে পার্ক ইয়ং-সিক চরিত্রটিকে। ঋণের দায় থেকে বাঁচার জন্য অংশ নেওয়া খেলায় বৃদ্ধ মা কে দেখে হতভম্ব হয়ে যায় সে। অথচ গেমের পরিস্থিতি তাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষে পরিণত করে। ভেতরে ভেতরে নিজের সঙ্গে নিজের প্রত্যহ দ্বন্দ্ব চললেও গেমের রাউন্ডগুলো উতড়ে যাওয়ার তাগিদ সে এড়াতে পারেনি। পার্ক ইয়ং-সিকের সেই আত্ম-দ্বন্দ্ব ধীরে ধীরে রূপ নেয় আত্ম-সচেতনতায়। আর এই বৈশিষ্ট্যটিই তাকে অত্যন্ত বাস্তবমুখী করে পরিবেশন করেছে দর্শকদের চোখে। ভুলে ভরা জীবন হলেও তা থেকে সে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে কিনা সেটাই ঠিক করে দেয় তার আসল পরিচয়- এই শক্তিশালী বার্তাটিই নিহিত রয়েছে এই চরিত্রের মাঝে।
লি মাইয়ং-গি: প্লেয়ার ৩৩৩| ইম শি-ওয়ান
ইউটিউবার হিসেবে এমজি কয়েনের প্রচারের সময় বেশ কিছু প্রতিযোগীদের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয় লি মাইয়ং-গি। স্বভাবতই শুরুটা খুব একটা ভালো ছিলো না চরিত্রটির। এর ওপর তার সন্তানের মা কিম ঝুন-হির সঙ্গে তার অযাচিত সম্পর্ক প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে লি মাইয়ং-গিয়ের নৈতিক অবস্থানকে। এছাড়াও মিঙ্গলের সময় তার বিতর্কিত ক্রিয়াকলাপ সহ-প্রতিযোগী কিম ইয়ং-মি-কে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তবে পরবর্তীতে তার সিদ্ধান্তে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় বেঁচে যায়। বিশেষ করে মিন-সু’কে রক্ষা করাটা ছিলো তার জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। তাছাড়া প্রথম দিকে কিম ঝুন-হি’র প্রতি তার উপেক্ষা থাকলেও পরে তা উদ্বেগে রূপ নেয়। শেষমেষ সন্দেহাতীত না হলেও তার ভেতরে ছিলো ভালো-মন্দের যুগপৎ সহাবস্থান, যা চিরায়ত মানসিকতার সঙ্গে স্পষ্টভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সর্বশেষ, নেটফ্লিক্স স্কুইড গেম সিজন ২ এর এই আটটি চরিত্র সম্মিলিতভাবে সাস্পেন্স সিরিজটির অনন্য বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করেছে। সিজন ১- এর মতো এবারেও প্রতিটি পর্বে আলাদাভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে লি ঝুং-জে-এর সং গি-হন। নাজুক অবস্থায় দৃঢ়চিত্তের প্রতিমূর্তি হিসেবে ছিলো কিম ঝুন-হি চরিত্রটি, অপরদিকে ছো হিয়ন-জু-এর সাহসিকতা ছিলো চমকপ্রদ।
ঝাং জিয়ম-ঝা একাই ডিস্টোপিয়ান সিরিজটিতে দিয়েছেন ফ্যামিলি ড্রামার অনুভূতি। নেতিবাচক হলেও থ্যানোসের উপস্থিতি সমন্বিত দৃশ্যগুলো ছিলো বিনোদনে ভরপুর। সর্বোপরি, হোয়াং ইন-হোর বহুরূপী আবির্ভাব, পার্ক ইয়ং-সিকের আত্ম-উপলব্ধি এবং সহযোগীদের ব্যাপারে লি মাইয়ং-গি-এর অস্পষ্ট অবস্থান রীতিমত দর্শকদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে খেলেছে।