পান্ডা শুধু বাঁশ খায় কেন?

কালো-সাদার মিশেলে সুন্দর পুতুলের মতো দেখতে প্রাণী পান্ডা। বন্য অবস্থায় এই বড় আকৃতির প্রাণীর খাবারের ৯৯ শতাংশই হলো বাঁশ। মাংসসহ অন্য খাবার হজমের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পান্ডার খাদ্যাভ্যাস এমন কেন? বিজ্ঞানীরা এর উত্তর খুঁজে পেয়েছেন এর শরীরের কোষের মধ্যকার কর্মকাণ্ডে।
প্রজাতি হুমকির মুখে থাকা পান্ডা পৃথিবীর আটটি ভালুক প্রজাতি একমাত্র ব্যতিক্রম, যা মাংসাশী নয়। তবে পান্ডার পূর্বপুরুষ কিন্তু মাংস খেত। এখনো মাংসসহ অন্য খাবার হজমের ক্ষমতা আছে পান্ডার শরীরে। তবুও এরা শুধু বাঁশ খায় কেন, যা হজম কষ্টকর আর পুষ্টিগুণ নেই বললেই চলে? আর পুষ্টিগুণ কম থাকায় পান্ডাকে বেশি করেই বাঁশ খেতে হয়। চীনের গবেষকরা বলছেন, পান্ডার কোষের মধ্যকার কর্মকাণ্ড ধীর ও থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতার কারণেই এমনটি ঘটে।
চীনের একদল গবেষক পান্ডার শরীরের গঠন, স্বভাব, হজম ক্ষমতা ও খাদ্যাভ্যাস নিয়ে গবেষণা করেন। এতে নেতৃত্ব দেন চীনের বেইজিংয়ের একাডেমি অব সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট অব জুলজির শিক্ষক ফুওয়েন উয়ি। এ-সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’।
রয়টার্স জানায়, চীনের শানঝি প্রদেশের ফোপিং সংরক্ষিত প্রাকৃতিক অঞ্চলের তিনটি বন্য ও বেইজিং চিড়িয়াখানায় খাঁচায় রাখা পাঁচটি পান্ডার ওপর গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় দেখা যায়, একই সমান আকৃতির অন্য প্রাণী যতটুকু শক্তি খরচ করে, পান্ডা খরচ করে তার অর্ধেকেরও কম—মাত্র ৩৮ শতাংশ। পান্ডার কোষের মধ্যকার কার্যকর ধীর হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে গবেষকরা এর থাইরয়েড হরমোনের অতি স্বল্পতাকেই দায়ী করেন। আর ডিইউওএক্সটু নামক জিনে বিবর্তনের কারণে পান্ডার শরীরের থাইরয়েড হরমোনোর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। থাইরয়েড গ্লান্ড মেটাবলিজমের হার ও শক্তির খরচের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে।
গবেষক উয়ি বলেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, স্বভাব, মানসিকতা ও জিনগত পরিবর্তনের কারণে বৃহদাকৃতির পান্ডার কোষের মধ্যকার কর্মকাণ্ড ধীর হয়ে পড়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বড় আকৃতির পান্ডা এমন খাবার গ্রহণ করে, যা এর প্রতিদিনের কাজের জন্য যতটুকু শক্তি দরকার, ঠিক ততটুকুই জোগান দেয়। পান্ডা কাজকর্মে কতটা ধীর, এ বিষয়ে গবেষকরা বলেন, দিনের অর্ধেক সময়ই পান্ডা অলস কাটায়। এরা ঘণ্টায় গড়ে মাত্র ৬৫ ফুট (২০ মিটার) হাঁটে। কাজকর্ম বেশ কম হওয়ায় এর শক্তি প্রয়োজনও হয় কম। আর এর কোষের মধ্যকার কার্যক্রমও বেশ ধীর। গবেষকদের দাবি, অন্য ভালুক প্রজাতির তুলনায় পান্ডার মস্তিষ্ক, যকৃৎ, কিডনি তুলনামূলকভাবে ছোট। এ কারণেও শক্তি খরচ হয় কম। খাদ্য নয়, বরং ঘন লোম এর শরীরকে উষ্ণ রাখে।
চীন সরকারের বরাত দিয়ে বিশ্ব বন্য প্রাণী তহবিলের (ডব্লিউডব্লিউএফ) জানায়, পৃথিবীতে বন্য অবস্থায় মাত্র এক হাজার ৮০০ বৃহদাকৃতির পান্ডা আছে।