ভালোবাসার টানেই দেশে ফিরব আবার : রোজিনা
‘ঢাকায় এসে মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা জীবনে কোনোদিন ভুলতে পারব না। ইচ্ছে করছিল থেকে যেতে, কিন্তু উপায় নেই। আমার স্বামী লন্ডনে একা। যেহেতু আমাদের ছেলেমেয়ে নেই, তার জন্য একা থাকাটা কষ্টকর। তাই যেতেই হচ্ছে। তবে আগামী কোরবানির ঈদের আগে আবারো আসার ইচ্ছা আছে।’ এভাবেই ঢাকা ছাড়ার আগে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন ঢাকাই সিনেমার স্বর্ণযুগের চিত্রনায়িকা রোজিনা।
গত ২৪ জুন বৃহস্পতিবার রোজিনা ফিরে যান লন্ডনে। এর আগে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি বলেন, ‘একসময় তো শুটিং করেই সময় কাটত। আর এখন বছরে অন্তত একবার চেষ্টা করি দেশে এসে শুটিং করতে। গত বছর একটা টেলিফিল্ম করেছিলাম। এ বছর আমার অভিনীত চলচ্চিত্র থেকে জনপ্রিয় ছয়টি গান নিয়ে নির্মাণ করেছি মিউজিক ভিডিও। এত বছর পরও যখন মানুষ এসে আমার সঙ্গে ছবি তুলতে চায়, কথা বলে, মনে হয় আগের দিনে ফিরে গেছি। নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে নিজের বয়সটা ভুলে যাই।’
আবার কবে আসবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রোজিনা বলেন, ‘এক বছর পর আসার কথা; কিন্তু চিন্তা করছি আগামী কোরবানির ঈদে আবার আসতে চাই। এখানের মানুষের জন্য মন কাঁদে। আর এই কয়েক দিন যে গানের শুটিং করেছি, তাতে পুরোনো লোকগুলোর সঙ্গে আবারো নতুন করে দেখা হয়েছে। কাজ করেছি, ভুলে গিয়েছিলাম আমার বয়সটা। সব সময় মনে হয়, মরণটা যেন দেশে হয়। এখানের মানুষ এত ভালোবাসতে পারে, কেউ না এলে চিন্তা করতে পারবে না।
আশি ও নব্বইয়ের দশকে ছবির পরিবেশ সম্পর্কে রোজিনা বলেন, ‘আমরা তখন কাজকে প্রার্থনা মনে করতাম। আমরা এফডিসিতে প্রার্থনা করতে যেতাম। একটা ভালো কাজ শেষ করে যখন মানুষের কাছ থেকে উৎসাহ পেতাম, তখন মনে হতো প্রার্থনা কাজে লেগেছে। সৃষ্টিকর্তা খুশি হয়েছেন। আর আউটডোর শুটিংটা আমাদের কাছে ছিল পিকনিকের মতো। ধরেন আমরা ১৫ দিনের জন্য কোথাও শুটিং করতে গেছি। সাত দিন পর কেউ চলে আসবে, আমাদের মন খারাপ হয়ে যেত। সবাইকে বলে সেই লোকটাকেও রেখে দিতাম। টাকার প্রয়োজন আমাদেরও ছিল, কিন্তু শুধু টাকার জন্য আমরা কখনো কাজ করিনি। সমাজের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরার জন্যই আমরা ছবি করতাম। একটা গল্প নিয়ে কথা হলে আমরাই সিলেক্ট করতাম, এই ছবিতে কার অভিনয় করা দরকার, কে ভালো করবে।’
এখন বাংলাদেশের ছবি দেখেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে রোজিনা বলেন, ‘এখন আর ছবি দেখা হয় না। তবে শুনেছি, এখনকার ছবি আগের মতো দর্শক দেখে না। গল্পও নাকি বিভিন্ন দেশের ছবির গল্প থেকে চুরি করে বানানো। আবার ইদানীং নাকি নতুন কিছু ছেলে ভালো কাজ করছে। আমার বিশ্বাস, আবারো জেগে উঠবে চলচ্চিত্র। লন্ডনে নিজের কাজে অনেক ব্যস্ত সময় কাটাই। যেহেতু আমার সন্তান নেই, তাই বছরের একটা সময় দেশের মাটিতে ভাই ও বোনের বাচ্চাদের সঙ্গে কাটিয়ে যাই। দেশে এলেই পুরোনো দিনের কথা মনে হয়। তাই একটি করে অনুষ্ঠান নির্মাণ করি। কাজটি করে নিজের বয়সটা কমিয়ে নিয়ে যাই, আবার নতুন করে কাজ শুরু করি।’
ভালো ছবি নির্মাণে কী করা উচিত—জানতে চাইলে রোজিনা বলেন, ‘আমার মনে হয়, কিছু বাজে ছবির জন্য এখন ভালো ছবিও দর্শক দেখছে না। তবে এই দায়ভার আমাদেরই নিতে হবে। আমাদের সময় যখন দর্শক দেখত, সেটার সব কৃতিত্ব আমাদের ওপর পড়ত। ব্যর্থতার দায়ভারও আমরা নিতাম। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের গল্প নিয়ে যদি সবাই ছবি বানায়, তাহলে এ দেশের ছবির অবস্থার উন্নতি হবে।’
জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা রোজিনা অভিনীত সিনেমার বিভিন্ন গান এখনো শ্রোতাদের হৃদয়ে রয়েছে। বর্তমানে তিনি সেসব ছবি থেকে জনপ্রিয় গানের রিমেক করছেন। আর এটি দেখানো হবে চ্যানেল আইয়ের ‘আমার স্মৃতি’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে। এতে রোজিনার সঙ্গে অংশ নিয়েছেন তিনজন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক। তাঁরা হলেন ওমর সানী, অমিত হাসান ও জায়েদ খান।
মায়া বড়ির বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে রোজিনার মিডিয়ায় পথচলা শুরু হয়েছিল। বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করেন ১৯৭৬ সালে ‘জানোয়ার’ ছবিতে পার্শ্ব অভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। পরে তিনি এফ কবীর পরিচালিত ‘রাজমহল’ সিনেমার মাধ্যমে একক নায়িকা হিসেবে কাজের সুযোগ পান।
এ ছবিটি সফল হয় এবং তিনি হাতে বেশ কিছু ছবি পান। সু-অভিনয় ও গ্ল্যামার দিয়ে তিনি প্রথম শ্রেণির নায়িকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৮০ সালে রোজিনা ‘কসাই’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে ‘জীবনধারা’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান রোজিনা।