একজন মোস্তাফা জব্বার
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/01/06/photo-1515232959.jpg)
১৯৮৭ সাল থেকে যে মানুষটি বাংলাদেশের তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের সঙ্গে জড়িত, সেই মানুষটি বাংলাদেশের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়া নিঃসন্দেহে আনন্দের সংবাদ।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে, মোস্তাফা জব্বারের হাত ধরে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারের পথ অনেকটা সহজ হলো বলে আমি মনে করি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মোস্তাফা জব্বার। আটষট্টি বছর বয়সী মোস্তাফা জব্বার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অভিযাত্রার সঙ্গে আছেন শুরু থেকেই। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন কমিটিতে দায়িত্ব পালন করে আসা জব্বার বাংলাদেশ কপিরাইট বোর্ডেরও সদস্য।
আনন্দ কম্পিউটার্সে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখেন জব্বার। পরের বছর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার যুক্ত করে নেওয়া হয়।
১৯৪৯ সালের ১২ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার চর চারতলা গ্রামে জন্ম নেওয়া মোস্তাফা জব্বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ওই সময়ই তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
১৯৮৭ সালে তিনি কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবসায় প্রবেশ করেন এবং পরের বছর ১৬ ডিসেম্বর তিনি প্রকাশ করেন বিজয় বাংলা কিবোর্ড ও সফটওয়্যার, যা এখন বহুল ব্যবহৃত। মোস্তাফা জব্বার জড়িত আছেন তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়ক লেখালেখিতেও। বাংলাদেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে থাকা আইসিটি বিষয়ক বেশ কয়েকটি বইয়ের লেখক তিনি।
তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার কথকতা, ডিজিটাল বাংলা, একুশ শতকের বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, একাত্তর ও আমার যুদ্ধ এবং উপন্যাস নক্ষত্রের অঙ্গার। লেখালেখি ছাড়াও টেলিভিশনে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে আসছেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সাবেক এই সভাপতি। বিজয় বাংলা কিবোর্ডের প্রবর্তক মোস্তাফা জব্বার আনন্দ প্রিন্টার্স এবং আনন্দ মুদ্রায়ণের প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি তিনি।
তথ্যপ্রযুক্তির এই মানুষটি যখন বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী তখন আমরা আশায় বুক বাঁধতেই পারি। তবে আরেকটি কথা অস্বীকার করার উপায় নাই যে, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তথ্য ও প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি লাভ করেছে। কিন্তু ২০২১ সালের যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে যে হারে উন্নতি হওয়া দরকার ছিল সেভাবে হয়নি। তার মধ্যে বড় সসম্যা হলো- ইন্টারনেট সহজ লভ্য হলেও তা ধীরগতি।
অবশ্য দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই তিনটি এজেন্টার কথা বলেছেন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি এই তিনটি এজেন্ডা ধরে এগোতে চান। প্রথমত ইন্টারনেট, দ্বিতীয়ত শিক্ষাকে ডিজিটালে রূপান্তর এবং তৃতীয়ত সরকারি সব কাজ ডিজিটালাইজেশন করা।
এজেন্ডার বিষয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘প্রথম এজেন্ডা হলো ইন্টারনেট। এর আবার দুটো বিষয়- দাম আয়ত্তে থাকতে হবে। আমার গ্রামের মানুষও ইন্টারনেট ব্যবহার করবে এবং তার জন্য যতটুকু সহায়তা দেওয়ার প্রয়োজন দিতে হবে। এ ছাড়া, ইন্টারনেটে গতি থাকতে হবে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমাদের মোবাইল ফোন অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারসহ সংশ্লিষ্ট আরো যেসব অপারেটর রয়েছে এবং তাদের মধ্যে যেসব সমস্যা বিদ্যমান, তা যদি সরিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি এখন ইন্টারনেট যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় থাকবে না। বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব। এক বছর অনেক সময়। ইন্টারনেট সেবা ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে এত সময় লাগার কথা নয়।’
মোস্তাফা জব্বার ইংরেজি ভাষার বিরোধী নন উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যে দেশের ৯৬ ভাগ মানুষ ইংরেজি বোঝে না। সেই ৯৬ ভাগ মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে বাংলায় কনটেন্ট নিয়ে পৌঁছাতে হয়। ফলে সেই দেশের সব কিছু বাংলায় হওয়া উচিত। আমরা একটি সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠা করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় এ দেশ পেয়েছি। ফলে বাংলার স্থান সবার ওপরে। তবে প্রয়োজনে এবং যেখানে প্রয়োজন হবে, সেখানে ইংরেজি ব্যবহারে আমার কোনো আপত্তি নেই।’ তিনিও প্রয়োজনে ইংরেজিতে কথা বলেন এবং লেখেন বলে মন্তব্য করেছেন।
দ্বিতীয় এজেন্ডা হিসেবে শিক্ষাকে ডিজিটালে রূপান্তর করার কথা উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘শিক্ষা উপকরণকে ডিজিটালে রূপান্তর করা হলে আগামী প্রজন্ম এই মাধ্যমে অভ্যস্ত হয়ে ওঠবে।’ এছাড়া, সরকারের সব কাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।’
পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশ সরকার একজন যোগ্য মানুষকেই ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণঅলয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। এক সময় এই মানুষটি ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর জন্য আন্দোলন করেছিলেন। ৩০ বছর ধরে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন। এই মোস্তাফা জব্বারই এখন নীতিনির্ধারক।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রতিনিধি, বাংলাদেশ প্রতিদিন