আন্তর্জাতিক
ভোট, যুদ্ধ ও খরায় আফগানরা
তালেবানের দেশ হিসেবেই পরিচিত আফগানিস্তান। দেশটিতে আছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের থাবাও। অক্টোবরের সর্বশেষ সংসদীয় নির্বাচনে সহিংসতার মধ্যেই চলে ভোট গ্রহণ। যার বেশিরভাগ হামলার দায় নিয়েছে তালেবান। নির্বাচনী এই সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় দুইশ মানুষ। যাদের বাইরে প্রাণ হারাতে হয়েছে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ১০ প্রার্থীকেও। ভোট গ্রহণে ভোটারদের সাড়া খানিকটা থাকলেও তালেবানি হামলায় সেটি কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়ে।
তিন বছরের দীর্ঘ বিরতিতে এবার ২০১৫ সালের নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হলো গত ২০ অক্টোবর। তবুও পরিস্থিতি অশান্তই থেকে গেছে আফগানদের জন্য। যুদ্ধ পরিস্থিতির কোনো আশু সমাধান দেখছেন না বিশ্লেষকরা। ক্ষমতার অফুরন্ত এই লড়াইয়ে দেশটিতে এগিয়ে থাকছে তালেবান। যদিও মার্কিন প্রভাব থেকেই গেছে।
তালেবান ও আইএসের হামলায় বেশ চাপে রয়েছে আফগান সরকার। বরাবরের মতো হামলার পরে দায়ও স্বীকার করছে তারা (তালেবান ও আইএস)। এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে থাকা বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছেই।
আফগানিস্তানের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। যেখানে গেল কয়েক মাসের নানা হামলায় শতাধিক মানুষ হতাহত হয়েছেন। এতে দেশটির নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে হতাশা। পাশাপাশি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও উঠে এসেছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তালেবানকে শর্তহীন আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট গনি। তবে এ নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি তালেবান। আলোচনার প্রস্তাবকে ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেছিল তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবান মাঠে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থায় আছে বলে তারা আলোচনায় বসতে রাজি হচ্ছে না। ২০০১ সালের পর সবচেয়ে বেশি আফগান জেলার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তালেবানের হাতে।
জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির জনপ্রিয়তা ক্রমেই কমছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে আফগান সরকারের দুর্নীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গড়ে ওঠা জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের কারণে।
কাবুল ও ওয়াশিংটনের অভিযোগ, আফগানিস্তানে হামলার জন্য দায়ী জঙ্গিরা পাকিস্তানে নিরাপদে আস্তানা গড়তে পারে। তবে সব সময় তা অস্বীকার করে এসেছে পাকিস্তান। কাবুল ও ইসলামাবাদ সব সময় একে অপরের বিরুদ্ধে তাদের দেশের জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে থাকে।
এদিকে, দেশটিতে কঠোর ইসলামিক আইন চালু করতে চায় তালেবান। তবে গেল বছর আফগানিস্তান নিয়ে আক্রমণাত্মক পরিকল্পনা নেওয়ায় তার বিপরীতে হামলার ধার বাড়িয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
অন্যদিকে, আফগানিস্তান নিয়ে মার্কিন নীতিতে এসেছে পরিবর্তন। নতুন পরিকল্পনায়, আফগানিস্তানে আরো মার্কিন সেনা মোতায়েনের চিন্তা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার কাজ করবেন মার্কিন সেনারা। এ ছাড়া প্রয়োজন সাপেক্ষে মার্কিন উপস্থিতি থাকার কথাও জানিয়েছেন ট্রাম্প। যার মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে আবারও মার্কিন আধিপত্য জোরালো হলো।
যুদ্ধ পরিস্থিতির চেয়েও কষ্টে আছে আফগানরা। তীব্র খরায় মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন দেশটির উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের আড়াই লাখের বেশি। হেরাতসহ বিভিন্ন শহরের উপকণ্ঠে তাঁবু গেড়ে ঠাঁই নিয়েছেন তাঁরা।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সহায়তা সমন্বয় দপ্তর বলছে, বাস্তুচ্যুত এসব মানুষ দিনে মাত্র একবেলা খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছেন। শীত মৌসুমে এই অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় দেড় লাখ শিশুর জরুরি খাদ্য সহায়তা দরকার, যাদের অধিকাংশই দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের।
যুদ্ধ আর খরায় আফগানরা কেমন আছেন, তা কারোরই বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়। প্রতিদিন হামলা আর বিস্ফোরণের নিশ্চয়তা নিয়ে আফগানরা এগিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। তবুও দেশটিতে শান্তি নিশ্চিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কার্যকর ভূমিকা পালন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসুক আফগানিস্তান। এটাই সবার কাম্য।
লেখক : সংবাদকর্মী