অর্থনীতি
কোরবানির চামড়ার ভাগিদার কারা?
রপ্তানি ও নিজস্ব প্রয়োজনে বছরজুড়ে যে চামড়ার প্রয়োজন হয়, তার বড় অংশই আসে কোরবানির পশু থেকে। এ সময়ে কোরবানির চামড়া সংগ্রহে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যেমন সচল হয়ে ওঠে, ঠিক তেমনি সরকারি ব্যাংকগুলোও এ সময়ে চামড়া সংগ্রহে ঋণ দিয়ে থাকে। সেটা সরকারের নির্দেশে না হলেও শুধু সরকারি ব্যাংকগুলো এ ঋণ দেওয়ায় সরকারের সমর্থন রয়েছে বলেই মনে হয়। যদিও কম সুদের এ ঋণের অর্থ বড় করপোরেটরা সহজে পরিশোধও করতে চান না। আবার যাঁরা চামড়া কিনতে বছরের পর বছর ঋণ পেয়ে থাকেন, তাঁরা বা তাঁদের প্রতিনিধিদের কখনই চামড়া কিনতে দেখা যায় না। এর পরও তাঁরা পরিবেশদূষণ থেকে শুরু করে বিশেষ ব্যাংকঋণ সব সুবিধা পেয়ে থাকেন। এতসব সুবিধার পরও এবারের ঈদে গরিবের ভাগ, মসজিদ-মাদ্রাসার ভাগ কেন কম পড়ল? কোরবানির চামড়া কম টাকায় কিনে কাকে ঠকালেন ব্যবসায়ীরা?
কারো চামড়া লুট হয়ে গেছে, কেউ অর্ধেক দামে ছেড়ে দিয়েছেন। চামড়ার অর্থ নিজের পকেটে ঢুকবে না, এ জন্যও কোনো ধনী এ নিয়ে কোনো মাথা ঘামাননি। সরকার বা বিরোধী দলের বা সচেতন কাউকে এ নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়নি। অথচ কারো একটু উদ্যোগ পারত চামড়ার সুবিধাভোগীদের হাতে দ্বিগুণ অর্থ তুলে দিতে। বছরজুড়ে এ চামড়ার অর্থের আশায় যাঁরা অপেক্ষা করছিলেন।
ঈদে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার নির্ধারিত দর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা গতবারের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম। তবে এ দামেও চামড়া বেচাকেনা হয়নি। সর্বনিম্ন ৩০ টাকা দরেও চামড়া কিনেছেন অনেক আড়তদার। প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা, বকরির ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে আড়তে ৪ থেকে ৬ বর্গফুটের প্রতিটি চামড়া ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে, কোরবানি ঈদের পশুর চামড়া কিনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েছেন। আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা নিজেরা কিছুটা বেশি দরে চামড়া কিনলেও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনেছেন পূর্বনির্ধারিত দরে। অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত দরও দেওয়া হয়নি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আড়তে আড়তে ঘুরে ভালো দাম না পেয়ে শেষ পর্যন্ত লোকসানে চামড়া বিক্রি করেছেন। অনেককেই চামড়া নিয়ে কান্নাকাটি করতে দেখা গেছে। এটাই হলো সরেজমিনে দেখা ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া চিত্র।
আমাদের পরিবারে এবার কোরবানিতে ৪৬ হাজার টাকায় একটি গরু কেনা হয়েছিল। সে গরুর চামড়া বিক্রি করা হয়েছে এক হাজার ৭০০ টাকায়। তবে গত বছরের কোরবানির ঈদে প্রায় ৪০ হাজার টাকায় গরু কিনে দুই হাজার ৫০০ টাকায় চামড়া বিক্রি করা হয়েছিল। গতবার যাঁরা চামড়ার অর্থ পেয়েছিলেন, তাঁরা এবারও এসেছিলেন, তবে অর্থ কম হওয়ায় সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন প্রশ্ন হলো, এই যে তাঁদের বঞ্চিত করা হলো, এর দায়ভার কি কেউ নেবে না? কেউ প্রশ্নও তুলল না এ নিয়ে? কারণ, যাঁরা এর ভাগিদার, তাঁদের পক্ষে কেউ কথা বলার নেই। কম দামে চামড়া কেনায় সামনে কি চামড়াজাত পণ্যের দাম কিছুটা কমার আশা করা যেতে পারে না। তবে কোনোদিনই তা কমবে না? কারণ, দেশে চামড়ার ব্যবসার সঙ্গে যেসব বড় করপোরেট জড়িত আছে, তাদের শুধু চাই আর চাই।
লেখক : স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক বণিক বার্তা।