আইনের শাসন
৪৪ বছরে কতটুকু এগোলো বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পর এ যাবত সাড়ে ছয়শোরও বেশি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বলা হয়, যে দেশের মানুষ যত বেশি আইন ভাঙে, সে দেশে তত বেশি আইন লাগে। আবার আইনে বেশি ফাঁকফোকর থাকলে সেই ফাঁক পূরণের জন্যও আইন লাগে। কিন্তু এই যে এত এত আইন, তাতে দেশে আইনের শাসন কতটা নিশ্চিত হয়েছে?
এক সময় রাজা-বাদশারা নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি ভাবতেন। ঈশ্বর যেমন সব আইনের ঊর্ধ্বে, তেমনি রাজা-বাদশারাও নিজেদের সব আইনের ঊর্ধ্বে মনে করতেন এবং খেয়াল খুশিমতো শাসন করতেন।
রাজা যখন খেয়াল খুশি মতো রাষ্ট্র বা রাজ্য চালান, তখন সেখানে রাজা ও প্রজায়, সরকার ও জনগণে ফারাক তৈরি হয় আসমান-জমিন। তখন সরকার ও জনগণের সম্পর্কের ভিত্তি হয় করুণা, দয়া, ভয় ইত্যাদি।
কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র পরিচালনায় এই তত্ত্বে বিশ্বাস করে না। আধুনিক রাষ্ট্রের মূল কথা আইনের শাসন। অর্থাৎ যেখানে শাসক ও শাসিতর জন্য আইন অভিন্ন। একজন অতি সাধারণ নাগরিক চুরি করলে যে শাস্তি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চুরি করলেও সেই শাস্তি। এখানে আইন অভিন্ন এবং ব্যক্তিবিশেষে আইনের প্রয়োগ ও সাজায় তারতম্য হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।
একজন ক্ষমতাহীন মানুষ বছরের পর বছর বিনা বিচারে কারাভোগ করবেন, আরেকজন দিনের পর দিন অপরাধ করেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াবেন, সেটি আইনের শাসন অনুমোদন করে না। যদি কোনো রাষ্ট্রে এমনটি চলতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সেখানে আইন ও শাসন দুটোই আছে; কিন্তু এ দুটির সমন্বয় অর্থাৎ আইনের শাসন নেই। সেখানে আইন চলে শাসকের মর্জিতে।
ব্রিটেনে সপ্তদশ শতাব্দীতে রাজার সাথে পার্লামেন্টের বিরোধের ফলে ১৬৮৮ সালে গৌরবময় বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং ১৬৮৯ সালে রাইটস অব বিল বা অধিকারের আইন প্রণীত হয়, যার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে, রাজা স্বয়ং আইন ও পার্লামেন্টের অধীনে থাকবেন। এভাবে রাজার ঐশ্বরিক অধিকার বা ডিভাইন রাইটের বদলে রুল অব ল বা আইনের শাসনের শুভ উদ্বোধন হয়।
২.
‘রুল অব ল’ বা আইনের শাসনের সহজ অর্থই হলো আইনের দ্বারা শাসন। অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হবে আইনের বিধিবিধান দ্বারা। কোনো ব্যক্তি, ব্যক্তিবর্গ, দল বা প্রশাসনের বিশেষ কোনো অংশের ইচ্ছা কিংবা বন্দুকের নল অথবা বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের পরামর্শে নয়।
সাধারণত যখন বন্দুকের নলের অর্থাৎ সামরিক শাসন চলে, তখন দেশে আইনের শাসন থাকে না। যখন দেশে একনায়কতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা চালু থাকে, তখনো আইনের শাসন থাকে না। যখন কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের পরামর্শে অথবা নিয়ন্ত্রণে সরকার পরিচালিত, সেখানেও আইনের শাসন নিশ্চিত হওয়া অনিশ্চিত। তার মানে যখন রাজনৈতিক বা গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকে, তখন আইনের শাসন নিশ্চিত হয়? এ প্রশ্নের উত্তরও সব সময় ‘হ্যাঁ’নয়। কেননা, তথাকথিত অনেক গণতান্ত্রিক সরকারের আমলেও দেখা গেছে, দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত হয়নি। বরং রাষ্ট্র তথা সরকার পরিচালিত হয়েছে ব্যক্তি, আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায়।অর্থাৎ আইনের শাসনের জন্য গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনই শেষ কথা নয়। মূল কথা রাষ্ট্র পরিচালকদের ইচ্ছা। একজন একনায়কতান্ত্রিক সরকারপ্রধানও চাইলে দেশে আইনের শাসন দিতে পারেন। একজন সামরিক শাসকও হয়তো পারেন। আবার একটি গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকারও চূড়ান্ত পর্যায়ে ফ্যাসিস্ট হতে পারে।
৩.
এখন প্রশ্ন হলো আইনের শাসনের মানে যদি হয় আইনের দ্বারা পরিচালিত শাসন, তাহলে ধরে নিতে হবে সারা পৃথিবীতেই আইনের শাসন রয়েছে। কেননা সব রাষ্ট্রই কোনো না কোনো আইনের ভিত্তিতে চলে। সামরিক ও স্বৈরশাসকরাও কোনো না কোনো আইন মেনে রাষ্ট্র চালান। তাহলে আইনের শাসনের মানে আইন দ্বারা পরিচালিত শাসন কী অর্থ বহন করে?
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। এই ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এরই মধ্যে স্রেফ অনলাইনে নিজের মতামত ব্যক্ত করার অপরাধে অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। অনেকে এখনো কারাগারে আছেন। প্রশ্ন হলো এটিও তো আইন এবং আইন মেনেই তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করেছে।
বিশেষ ক্ষমতা আইন বা সন্ত্রাস দমন আইনের মতো আইনগুলোও ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। কেননা এসব আইন দিয়ে সরকার মূলত বিরোধীপক্ষকে দমন করে। কিন্তু এগুলোও আইন এবং এই আইনের প্রয়োগ যখন হয়, তখন তো বলতেই হবে যে, দেশে আইনের শাসন রয়েছে।
বাস্তবতা হলো, আইন থাকলে বা আইনের প্রয়োগে হলেই তাকে আইনের শাসন বলে না। প্রথমত দেখতে হবে, সেই আইন কতটা গণতান্ত্রিক। সেই আইন কোন প্রক্রিয়ায় পাস হয়েছে।বিলের পক্ষে-বিপক্ষে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছে কি না। দ্বিতীয়ত সেই আইন প্রয়োগ হচ্ছে কার বিরুদ্ধে? একই আইন সরকারী ও বিরোধীপক্ষের ওপর সমানভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি না।
দেশে এ যাবত যে সাড়ে ছয়শোরও বেশি আইন প্রণীত হয়েছে, তার মধ্যে কয়টা আইন জনবান্ধব আর কয়টা আইন জনবিরোধী বা বিরোধীপক্ষকে দমনের হাতিয়ার, সেটির একটি তালিকা করলে দেখা যাবে, দেশে আইনের শাসন বলতে যা আছে, তা এক সময়ের রাজা-বাদশাদের ঈশ্বরতত্ত্বের মতোই।
প্রখ্যাত আইনজ্ঞ এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য স্যার উইলিয়াম আইভর জেনিংস (১৯০৩-১৯৬৫)বলেছেন, ‘আইনের শাসন বলতে এমন এক গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা তথা সাংবিধানিক সরকারকে বোঝায় যেখানে সরকারের সমালোচনা শুধু অনুমোদিতই নয়, বরং একটি উত্তম গুণ; যেখানে রাজনীতি শুধু গ্রহণযোগ্যই নয়, বরং তাকে উৎসাহিত করা হয়।’এখন জেনিংসের এই বক্তব্য বিশ্লেষণ করে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও বাংলাদেশের জনগণ কী ধরনের আইনের শাসন ভোগ করছে।
৪.
আইনের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। কেননা তার কোনো প্রাণ নেই। আইনের শক্তি নির্ভর করে এর প্রয়োগে নির্দেশ দানকারী এবং প্রয়োগকারীর ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর। ধরা যাক দেশে ঘুষবিরোধী একটি আইন হলো, যেখানে বলা হয়েছে যে, কোনো সরকারি কর্মকর্তা ঘুষ খেয়েছেন বলে প্রমাণিত হলে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।তাহলে ধরে নিতে হবে দুই বছরের মধ্যে পুরো দেশ ঘুষমুক্ত। কিন্তু দেখা গেল আইন পাসের পর একজন কর্মকর্তাও এই অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেন না। কারণ যিনি বা যারা ঘুষখোর ধরার কাজ করবেন, তারাও ঘুষ খান। আবার যে দেশের খোদ অর্থমন্ত্রীও ঘুষকে বলেন ‘স্পিড মানি’, সে দেশে কোনোদিনই যে ঘুষ বন্ধ হবে না, তা চোখ বন্ধ করে বলা যায়। আর ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ না হলে আইনের শাসন অমাবস্যার চাঁদ হয়েই থাকবে।
৫.
রাষ্ট্র হিসেবে উন্নতির পথে বাংলাদেশের মূল চ্যালেঞ্জগুলো কী? অধিক জনসংখ্যা? দারিদ্র্য? কৃষি জমি কমে যাওয়া? বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংকট? তথ্যপ্রযুক্তি? রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও সংঘাত নাকি যুদ্ধাপরাধের বিচার? হয়তো এর অনেকগুলো অথবা সবই।কিন্তু যদি এককভাবে কোনো কারণকে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ধরা হয়, অবশ্যই তার নাম ‘আইনের শাসন’। কারণ আইনের শাসন না থাকলে দেশের কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় না। ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের লুটপাটে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থে যখন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন হয় তখন পিছিয়ে পড়ে দেশ। সুতরাং যদি আইনের শাসন থাকে, তখন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বাধ্য হয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে। কারণ তখন তাকে জবাবদিহি করতে হয়। অর্থাৎ আইনের শাসনের মূল শর্ত জবাবদিহিতা।সরকার যেমন আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, তেমনি প্রত্যেক নাগরিকেরও দায়িত্ব আইন মেনে চলা। এটি এক পক্ষীয় কোনো বিষয় নয়।
আইনের শাসনের একটা বড় শর্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। অর্থাৎ বিচার বিভাগ সম্পূর্ণরূপে প্রশাসন ও সরকারে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের প্রভাবমুক্ত হবে এবং রাষ্ট্রের সব কর্মকর্তা ও নাগরিক অবস্থান নির্বিশেষে আদালদের কাছে দায়ী থাকবে। কিন্তু কাগজে কলমে বিচার বিভাগ আলাদা হলেও এটি কতটা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, সেই প্রশ্নের সুরাহা হয়নি। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়েও বিতর্ক আছে। সেখানেও দলবাজির প্রশ্ন আছে। অনেক সময় কোনো কোনো বিচারকের যোগ্যতা এবং নৈতিক পরিচ্ছন্নতাও প্রশ্নিবিদ্ধ হয়।
আইনের শাসনের আরেকটি শর্ত সাংবিধানিক ক্ষমতা। অর্থাৎ সংবিধানই জনগণের মৌলিক ও নাগরিক অধিকার সুনিশ্চিত করবে এবং কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের ইচ্ছামাফিক সংবিধান বাতিল, স্থগিত বা পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু দেখা গেছে, বাংলাদেশে রাষ্ট্র গঠনের পর এ যাবত যে ১৬ বার সংবিধান সংশোধন হয়েছে, তার বেশির ভাগই হয়েছে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি ও দলের সুবিধা বিবেচনায় এবং কখনো কখনো বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়েও সামরিক শাসকরা সংবিধান সংশোধন করে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা দখলকে নিষ্কণ্টক করার চেষ্টা করেছেন। তার মানে, যে সংবিধান রাষ্ট্রে আইনের শাসন নিশ্চিত করবে, সেই সংবিধান নিজেই বারবার ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে ক্ষমতাসীনদের দ্বারা।
আইনের শাসনের একটি অন্যতম প্রধান শর্ত ব্যক্তির নিরাপত্তা।‘প্রত্যেক নাগরিকের ঘরে ঘরে নিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়’- এ রকম বক্তব্য সরকারের পক্ষ থেকে এসেছে। বাস্তবতা বিবেচনায় হয়তো এটি সঠিক কথা। কারণ ১৬ কোটি মানুষের বিপরীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক লাখ সদস্যের পক্ষে অবশ্যই এটি সম্ভব নয় যে, তারা প্রত্যেক নাগরিকের ঘরে ঘরে গিয়ে নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু যখন এই কথা কোনো দায়িত্ববান ব্যক্তি বলেন, তখন এর দ্বারা জনগণের প্রতি তার অবজ্ঞা, অশ্রদ্ধা এবং সর্বোপরি নিজের অসহায়ত্বই প্রকাশ পায়। জনগণ তখন এই ব্যক্তিদের ওপর আস্থা হারায়। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক তার করের পয়সায় পরিচালিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ভরসা রাখতে চায়। বিপদে পড়লে তাদের সহায়তা পেতে চায়।
কিন্তু এখন যদি একটি গণভোট নেওয়া হয় যে, বিপদে পড়লে আপনি প্রথম কাকে ফোন করেন? এর জবাবে হয়তো ২০ শতাংশ মানুষও বলবে না যে, তারা বিপদে পড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফোন করে। কারণ যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মূল কাজ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান, নাগরিককে বিপদ থেকে মুক্ত করা, তারা এখন রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত। জনগণকে বিপদমুক্ত করার বদলে উল্টো জনগণকে নানাভাবে হয়রানি করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এরই মধ্যে বেশ ‘সুনাম’ অর্জন করেছে। সুতরাং যে দেশে নাগরিকের নিরাপত্তা নেই, সেখানে আইনের শাসন নেই।
আইনের শাসন থাকলে সেখানে নিরপরাধ নাগরিকের ভয় থাকে না। কিন্তু এখন পুরো রাষ্ট্রে এমন ভয়ের সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে যে,ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলা তো দূরে থাক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কেউ কিছু লেখার আগে পাঁচবার ভাবে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা এখন অনলাইন ব্যবহারকারীদের জন্য একটি মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এর নাম আইনের শাসন নয়।
৬.
১৯৫৯ সালে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অন জাস্টিসে (International Congress on Justice) আইনের শাসনের পরিপূর্ণতার জন্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সামাজিক কল্যাণ ও শিক্ষা নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। যেখানে বলা হয়, সরকারের ক্ষমতার উৎস ও শাসনের ভিত্তি হবে এমন আইন যা সংসদে পর্যাপ্ত বিতর্ক ও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সর্বাধিক যুক্তিসঙ্গত ও গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রণীত হয় এবং যেখানে বিলের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেওয়ার বিষয়ে সংসদ সদস্যদের অবাধ স্বাধীনতা থাকে। কিন্তু আমরা আমাদের দেশের আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার দিকে তাকালে দেখব, এখানে বেশির ভাগ আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোট দেওয়ার বাইরে কিছু করার থাকে না। বিশেষ গুরুত্বূপর্ণ বিল নিয়েও ওই অর্থে কোনো বিতর্ক হয় না। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদও একটা অন্তরায়। আবার বিল নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে যে পরিমাণ চুলচেরা বিশ্লেষণ হওয়ার কথা, বেশির ভাগ সময়ই তা পরিলক্ষিত হয় না। সুতরাং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যে কার্যকর সংসদ এবং যোগ্য সংসদ সদস্য প্রয়োজন, সেই অভাব মোচন তো দূরে থাক, বরং এ ক্ষেত্রে উন্নতির কোনো লক্ষণও নেই।
লেখক : যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর