আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে হেঁটে, মেট্রোরেলে ছুটছেন মুসল্লিরা
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ জমায়েতে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে দলে দলে যোগ দিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। মধ্যরাত থেকে ইজতেমা ময়দান এলাকায় বাস চলাচল বন্ধ থাকায় হেঁটেই রওনা হয়েছেন মুসল্লিরা। তবে ঢাকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে মেট্রোরেলে করে ইজতেমা এলাকায় যাচ্ছেন অনেকে। এতে অফিস সময়ে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমেছে মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে।
মতিঝিল, প্রেসক্লাব, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট মিরপুর-১০ এর মুসল্লিরা মেট্রোরেলে উঠে উত্তরা স্টেশনে যাচ্ছেন। গতকাল মধ্য রাত থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস, চান্দনা চৌরাস্তা, বোর্ড বাজার, কলেজ গেট, বিমানবন্দর, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, কামারপাড়া ও টঙ্গী রেলস্টেশন এলাকা হয়ে ঢাকা ও গাজীপুরের আশপাশের জেলার মুসল্লিরা দলে দলে ইজতেমা ময়দান এলাকায় আসছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসল্লিদের স্রোত বাড়ছে।
বিশ্ব মুসলিম উম্মাহার সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) শেষ হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। জানা গেছে, এদিন সকাল ৯টার থেকে সাড়ে ৯টার দিকে তাবলিগ জামায়াতের মুরব্বি মাওলানা মো. জুবায়ের হাসান মোনাজাত পরিচালনা করার কথা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। সবাই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে রওনা দিয়েছেন। ভোগড়া বাইপাস থেকে ইজতেমা মাঠের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। এই পুরো পথ হেঁটেই মুসল্লিরা রওনা হয়েছেন ইজতেমা মাঠের উদ্দেশে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে।
জাকারিয়া নামে এক মুসল্লি বলেন, ভোর রাত ৪টায় পিকআপ ভ্যানে করে কালিয়াকৈর থেকে থেকে রওনা হয়ে ভোগড়া বাইপাসে এলাকায় আসেন সাড়ে ৬টায়। কিছু সময় পরিবহণের জন্য অপেক্ষা করেন। পরিবহণ না পেয়ে অন্যান্য মুসল্লিদের মতো হাঁটা শুরু করেন। পুরো পথ তিনি হেঁটেই যাবেন।
আখেরি মোনাজাতের দিন আজ রোববার ফজরের নামাজের পর থেকেই শুরু হয় হেদায়েতি বয়ান। হেদায়েতি বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। এরপর কিছু সময় নসিহতমূলক আলোচনা করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা।
ইজতেমা ময়দানের মুসল্লিদের যাতায়াত সহজ করতে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা থেকে গাজীপুরের তিনটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশ। মোনাজাত শেষে রোববার দুপুর ২টার পর সড়কগুলো আবার খুলে দেওয়া হবে।
সড়ক তিনটি হলো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস, টঙ্গী-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কের মিরের বাজার থেকে টঙ্গীর স্টেশন রোড পর্যন্ত এবং রাজধানী ঢাকার কামারপাড়া মোড় থেকে টঙ্গীর মন্নুগেট সড়ক। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব সড়কে ইজতেমার মুসল্লি বহনকারী যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি চলতে পারবে না। তবে জরুরি প্রয়োজনের গাড়ি যেমন অ্যাম্বুলেন্স, গণমাধ্যমকর্মী বা বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
এ বছরও দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। তাবলিগের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিরোধী পক্ষ মাওলানা জুবায়ের ইজতেমা করছেন ২, ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি। এর চার দিন বিরতির পর সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা করবেন ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি।
গত শুক্রবার শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এদিন ফজর নামাজের পর আম বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা আহমদ বাটলা। আর তা বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা নুরুর রহমান। পরে বিভিন্ন সময় ভাগ করে তাবলীগ জামায়াতের আলেমরা বয়ান করেন। শনিবারও একইভাবে বয়ান হয়। এদিন যৌতুক ছাড়া বিয়ের একটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বের ইজতেমায় গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত বার্ধক্য ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে কয়েকজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।