জাতীয় দলে ফিরতে আশাবাদী আশরাফুল

বয়স ৩৬ বছর হয়ে গেলেও জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। প্রায় আট বছর আগে ২০১৩ সালের এপ্রিলে দেশের হয়ে শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি।
ইউএনবি আয়োজিত ‘লাইট অ্যান্ড লেন্স’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সম্প্রতি আশারাফুল বলেন, ‘আমি ঘরোয়া মৌসুমের শুরুতে দুর্দান্ত শুরুর অপেক্ষায় রয়েছি যাতে জাতীয় দলের নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি।’
আশরাফুল ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সময় ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার জন্য পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষে ক্রিকেটে ফিরে এলেও এখনো জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারেননি। তিনি ২০২০ সালে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর হয়ে খেলার সুযোগ পেলেও হতাশ করেন।
অবশ্য টেস্ট ক্রিকেটের অভিষেক ম্যাচে সর্বকনিষ্ঠ এ সেঞ্চুরিয়ান ঘরোয়া ক্রিকেটে আরো একবার নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে চান। প্রায় দুই মাস ধরে কোনো ঘরোয়া ক্রিকেটের আয়োজন নেই। আগামী মার্চ থেকে বিসিবি এই আয়োজন শুরু করতে পারে। এ ব্যাপারে আশরাফুল বলেন, ‘আগে নিজেকে তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছি। শুরুতে আমি ফিটনেস প্রশিক্ষণ দিয়ে শুরু করব এবং সেই সঙ্গে আমার পারফরম্যান্সের দিকে নজর দেব।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটের একসময়কার পোস্টার বয় খ্যাত আশরাফুল বেশ কিছু রেকর্ডের মালিক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের হয়ে অনেক বড় বড় জয়ে আমি অবদান রেখেছি। ওই জয়গুলো নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। আমি এখনো জাতীয় দলে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছি। আমি জানি এটা অনেক কঠিন, তবে আমি আমার সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব।’

বাংলাদেশ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পরে টানা ৪৭ ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি। সেই খরা কাটে ২০০৪ সালে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে আশরাফুলের করা ৩২ বলে ৫১ রানে ভর করে জয় পায় বাংলাদেশ। আর ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর ম্যাচে মুখ্য ভূমিকা ছিল তাঁর। ওই ম্যাচে দেশের হয়ে সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি।
আশরাফুল তাঁর ৬১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ছয়টি সেঞ্চুরি করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৯০ রানের ইনিংস রয়েছে। ২০১২ সালে বিপিএলে দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর খ্যাতি পড়তির দিকে যেতে শুরু করে। অপরাধ স্বীকার করে নিলেও পরে ক্রিকেটের সব সংস্করণ থেকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। পরে ২০১৮ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরে এলেও জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘আমি আরো তিন-চার বছর ক্রিকেট খেলতে চাই। এখন আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে নজর দিচ্ছি। আমি যদি ঘরোয়া লিগগুলোতে ভালো করতে পারি তবে নির্বাচকরা আমাকে জাতীয় দলে খেলানোর কথা ভাবতে পারবেন।’
বাংলাদেশ এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে দারুণ সাফল্য পাচ্ছে। টাইগাররা আরো বেশি বেশি ম্যাচ খেলতে পারলে টেস্টে একই ধরনের সাফল্য পাবে বলে মনে করেন তিনি, ‘একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের ক্ষেত্রে আমরা একটি শক্তিশালী দল হয়ে উঠেছি। কোভিড-১৯ মহামারিতে তিনটি ম্যাচ খেলে সবকটিতেই জিতেছি আমরা। আইসিসি বিশ্বকাপ সুপার লিগ পয়েন্ট টেবিলের আমরা এখন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছি। প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নিতে পারলে টেস্ট ক্রিকেটেও আমরা একই অবস্থানে যেতে পারি। আমি মনে করি আরো বেশি বেশি টেস্ট খেলতে পারলে টেস্টেও আমরা এমন সাফল্য পেতে পারি।’
খেলা থেকে অবসর নেওয়ার পর নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘অল্প বয়সেই আমি ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলাম এবং সারা জীবনই আমি ক্রিকেট নিয়ে আছি। তাই, খেলোয়াড়ি জীবনের শেষেও আমার ক্রিকেটের সঙ্গে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে।’