দারুণ শুরুর পর আক্ষেপ নিয়ে দিন শেষ করল বাংলাদেশ
প্রথম দিনের শুরুটা যেভাবে হয়েছিল তাতে আশার চেয়ে হতাশার মেঘই বেশি দেখা গিয়েছিল। তবে সময়ের সঙ্গে চিত্র বদলেছে ডারবানে। আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দিন প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চারশত রানের নিচে থামায় বাংলাদেশ। এরপর প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেও দারুণ শুরু করেন মাহমুদুলরা। কিন্তু দিনের শেষ সময়টায় যোগ হলো চরম হতাশা। এক সেশনেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। মোট চার উইকেট হারানোর আক্ষেপ নিয়ে টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষ করল মুমিনুল হকের দল।
আজ শুক্রবার টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে চার উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৯৮ রান তুলেছে বাংলাদেশ। দিন শেষে উইকেটে অপরাজিত আছেন মাহমুদুল হাসান জয় (৪৪) ও তাসকিন আহমেদ (০)। দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ২৬৯ রানে পিছিয়ে থেকে আগামীকাল শনিবার টেস্টের তৃতীয় দিন শুরু করবে বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দুই তরুণ ওপেনার সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাটে ভালো শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু ভালো শুরুর আভাস দিয়ে শেষ পর্যন্ত চা বিরতির আগেই সাদমানকে হারায় সফরকারীরা।
ইনিংসের ১১তম ওভারে বিদায় নিয়েছেন সাদমান। সাইমন হার্মারের বল পিচ করে টার্ন না করে সোজা গিয়ে আঘাত করে স্টাম্পে। ফলে ৩৩ বলে ৯ রানে থামে সাদমানের ইনিংস।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন মাহমুদুল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু জমে ওঠার আগেই নাজমুলকে ফিরিয়ে এই জুটিও ভাঙেন হার্মার। ৮৭ বলে ৩৮ রান করে ফেরেন শান্ত। এরপর উইকেটে এসেই আউট হয়ে হতাশা বাড়ান অধিনায়ক মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। দুজনেই থিতু হতে ব্যর্থ হন। দিনের শেষ সেশনে তিন উইকেট হারানোর আক্ষেপ নিয়ে দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
এর আগে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৬৭ রানে থামায় মুমিনুল হকের দল। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯৩ রান করেছেন তেম্বা বাভুমা।
আজ লক্ষ্য ছিল—দিনের শুরুতেই গতকালের জমে যাওয়া তেম্বা বাভুমা ও কাইল ভারানের জুটি থামানো। অবশেষে সে লক্ষ্যে সফল হয় বাংলাদেশ। পেসার খালেদ আহমেদ দিনের শুরুতেই এনে দিয়েছেন জোড়া সাফল্য।
কাইল ভেরেইনাকে ফিরিয়ে দিনের শুরুতেই জুটি ভাঙেন খালেদ। খালেদের করা বল একটু সামনে পিচ করে ভেতরে ঢোকে। ভেরেইনার ডিফেন্স ফাঁকি দিয়ে বল লাগে প্যাডে। সঙ্গে সঙ্গে আঙুল তোলেন আম্পায়ার। যদিও রিভিউ নেন ভেরেইনা। তবে, লাভ হয়নি। সাজঘরে ফেরেন ভেরেইনা। আর, দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় রিভিউ। ৮১ বলে ২৮ রানে ভেঙেছে ভেরেইনার প্রতিরোধ।
ভেরেইনার পর ওইয়ানকেও থামান খালেদ। তাঁর জোড়া আঘাতে ডারবানে দ্বিতীয় দিন দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ।
দুই উইকেট হারানোর পরও উইকেটে থেকে প্রতিরোধ গড়েন বাভুমা। ব্যক্তিগত সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন তিনি। তবে সেই লক্ষ্যে তাঁকে সফল হতে দিলেন না মিরাজ। ৯৩ রানের মাথায় তাঁকে বোল্ড করেন এই অফ স্পিনার। ১৯০ বলে তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল ১২ টি বাউন্ডারি দিয়ে।
বাভুমা ফিরতেই আরেকটি উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার কেশব মহারাজকে আউট করেন ইবাদত হোসেন। ১৯ রান করা কেশবকেও বোল্ড করেন ইবাদত। এরপর শেষের দিকের ব্যাটারদের ওপর ভর করে শেষ পর্যন্ত প্রথম ইনিংসে ৩৬৭ রানের পুঁজি পায় স্বাগতিকরা।
তার আগে গতকাল টেস্টের প্রথম দিনটা খুব একটা ভালো কাটেনি বাংলাদেশের। প্রথম সেশনে কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগানোর বদলে ওই সেশনেই সবচেয়ে বেশি ভুগেছে বাংলাদেশ। এর পরের দুই সেশনে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে দিন শেষ করে সফরকারীরা। কিংসমিডে গতকাল ৪ উইকেটে ২৩৩ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
গতকাল দিনের শুরুতে সাইট স্ক্রিন জটিলতা দেখা দেয় আর শেষে দেখা দেয় আলোর স্বল্পতা। সব মিলে প্রথম দিন খেলা হয়েছে মোটে ৭৬.৫ ওভার। ১৩.১ ওভার খেলা কম হয়েছে প্রথম দিনে। তবে আজ দ্বিতীয় দিনের পুরো খেলাই মাঠে গড়িয়েছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস : ১২১ ওভারে ৩৬৭/১০ (এলগার ৬৭, এরউইয়া ৪১, পিটারসেন ১৯, রিকলটন ২১, তেম্বা ৯৩, কাইল ২৮, উইয়ান ০, কেশব ১৯, সিমন ৩৮, উইলিয়ামস ১২, অলিভার ১২; তাসকিন ২৩-৪-৬৯-০, ইবাদত ২৯-১০-৮৬-২, মিরাজ ৪০-৮-৯৪-৩ , খালেদ ২৫-৩-৯২-৪, মুমিনুল ৪-০-১৭-০)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৪৯ ওভারে ৯৮/৪ (সাদমান ৯, মাহমুদুল ৪৪*, নাজমুল ৩৮, মুমিনুল ০, মুশফিক ৭, তাসকিন ০*; হার্মার ২০-৭-৪২-৪, উইলিয়ামস ৫-০-১৫-০, অলিভার ৪-১-৯-০, কেশব ১৯-১০-২৪-০, এলগার ১-০-৮-০)।