পোর্ট এলিজাবেথে বাংলাদেশের হতাশার দিন
পোর্ট এলিজাবেথে দিনের শুরুটা হয় দারুণ। কাইল ভেরেইনাকে ফিরিয়ে দ্রুতই উইকেট উপহার দেন খালেদ আহমেদ। স্পিন ঘূর্ণিতে আলো দেখান তাইজুল ইসলামও। কিন্তু বাংলাদেশের এই দুই বোলারকে টেক্কা দিয়ে উইকেটে থিতু হয়ে যান কেশব মহারাজ। লম্বা সময় ব্যাটিং করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শক্ত পুঁজি এনে দেন মহারাজ।
বিপরীতে দিনের আজই প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে হতাশা দেখল বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে ১২২ রান তুলতেই ৫ টপ অর্ডার ব্যাটারকে হারিয়ে ফেলল সফরকারীরা। প্রোটিয়াদের রানের চাপ ও দ্রুত উইকেট হারানোর হতাশা নিয়ে টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষ করল মুমিনুল হকের দল।
নিজেদের ইনিংসের শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। হারায় মাহমুদুলের উইকেট। তবে শুরুর ধাক্কা সামাল দিতে লড়াই করেন তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনে মিলে গড়েন ৭৯ রানের জুটি। এই জুটিতে কিছুটা স্বস্তি দেখেছিল বাংলাদেশ। তামিম ও শান্ত ফিরে গেলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর ব্যাটিং নেমে দ্রুত আউট হন মুমিনুল ও লিটন দাস।
৫ উইকেট হারানোর হতাশা নিয়ে দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
আজ প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দিন শেষে ৫ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১৩৯ রান তোলে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস থেকে ৩১৪ রান পিছিয়ে থেকে আগামীকাল রোববার টেস্টের তৃতীয় দিন শুরু করবে বাংলাদেশ।
দিন শেষে উইকেটে ছিলেন ইয়াসির আলী রাব্বি (৮) ও মুশফিকুর রহিম(৩০)।
ওপেনিংয়ে নেমে ৫৮ বল খেলে ৪৭ রানের ইনিংস উপহার তামিম। তাঁর সঙ্গে ৩৩ রানের ইনিংস খেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আউট হওয়া মাহমুদুল রানের খাতাও খুলতে পারেননি। মুমিনুল হক করেন ৬ রান। আর লিটনের ব্যাট থেকে আসে ১১রান।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে টেস্টের দিনের দ্বিতীয় সেশনে এসে প্রথম ইনিংসে ৪৫৩ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৪ রান করেছেন কেশব মহারাজ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০ রান করেছেন ডিন এলগার।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ১৩৫ রান দিয়ে ছয় উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। এই নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে দশমবার এক ইনিংসে ৫-এর বেশি উইকেট নেওয়ার স্বাদ পেলেন তাইজুল। এর মধ্যে দেশের বাইরে ৫ উইকেট নিলেন তৃতীয়বার। তাঁর সঙ্গে খালেদ আহমেদ নিয়েছেন তিনটি উইকেট।
৫ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ২৭৮ রান নিয়ে আজ দিন শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দিনের শুরুতে কাইল ভেরাইনার স্টাম্প ভেঙে উইকেট উপহার দেন খালেদ আহমেদ। ৪৮ বলে ২২ রান করে থামেন ভেরেইনা। তবে দিনের শুরুতে উইকেট হারালেও রানের চাকা বেশ সচল ছিল স্বাগতিকদের। কেশব মহারাজ ও মুল্ডার মিলে কিছুক্ষণ টানেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ৩৩ রানে মুল্ডারের প্রতিরোধ ভাঙেন তাইজুল ইসলাম।
কিন্তু তাতেও রানের গতি কমেনি পোটিয়াদের। কেশব মহারাজ ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং চালান। তাতে বড় স্কোর পেয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় সেশনে গিয়ে মহরাজের প্রতিরোধ ভাঙেন তাইজুল। বাংলাদেশি স্পিনারকে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন মহারাজ। তবুও আউট হওয়ার আগে ৯৫ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলেন মহারাজ। তিনি ফিরলে টেলএন্ডারদের ওপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ৪৫৩ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এর আগে গতকাল শুক্রবার টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে মাত্র এক উইকেট নিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনে নিয়েছে দুটি উইকেট। আর, শেষ সেশনে নিয়েছে দুটি উইকেট। গতকালই তাদের দলীয় রান প্রায় তিনশর কাছাকাছি করে নেয় ডিন এলগারের দল। আজ সেটা আরও বাড়িয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে মাঠে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই লক্ষ্যে বেশ সফল প্রোটিয়ারা। এবার প্রোটিয়াদের নাম বাংলাদেশ টপকাতে পারে কি না সেটাই দেখার অপেক্ষা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস : ১৩৬.২ ওভারে ৪৫৩ (এলগার ৭০, এরউইয়া ২৪, পিটারসেন ৬৪, বাভুমা ৬৭, রিকেলটন ৪২, ভেরাইনা ২২, মুল্ডার ৩৩, মহারাজ ৮৪, সিমন ২৯, উইলিয়ামস ১৩, অলিভার ০; তাইজুল ১৫০-১০-১৩৫-৬, ইবাদত ২৮-৩-১২১-০, মিরাজ ২৬.২-৪-৮৫-১, খালেদ ২৯-৬-১০০-৩ )।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৪১ ওভারে ১৩৯/৫ (মাহমুদুল ০, তামিম ৪৭, শান্ত ৩৩, মুমিনুল ৬, মুশফিক ৩০*, লিটন ১১, ইয়াসির ৮*; মহারাজ ১১-২-৪২-০, অলিভার ৯-৪-১৭-২, উইলিয়ামস ৮-২-৩০-০, সিমন ৭-১-৩১-০, মুল্ডার ৬-৩-১৫-৩)।