ব্যাটিং দুর্দশায় বাংলাদেশের চরম হতাশার দিন
ব্যাটিং দুর্দশায় পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের তৃতীয় দিনই পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর ওপর আবার ব্যাটিংয়ে নেমে পাহাড়সম লিড বাড়িয়ে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। যা টপকাতে হলে ইতিহাস গড়তে হবে বাংলাদেশকে।
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশকে ৪১৩ রানের লক্ষ্য দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই রান রাড়া করে জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হবে বাংলাদেশকে। কেননা টেস্টে এত রান তাড়া করে এর আগে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। দুইশর বেশি রানই একবার তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেটাও ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
আজ রোববার টেস্টের তৃতীয় দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৭৬ রান করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সব মিলে তাদের লিড দাঁড়িয়েছে ৪১২ রানে।
এই রান তাড়া করতে নেমে আজই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। গেল ইনিংসে ব্যর্থ হওয়া জয় এই ইনিংসেও ফিরেছেন শূন্য করে। নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরেছেন ৭ রানে। তামিম ইকবাল ফিরেছেন ১৩ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে তিন উইকেটে ২৭ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। জয়ের জন্য এখনো ৩৮৬ রান দরকার মুমিনুলদের।
স্বাভাবিকভাবে এই রান তোলা খুব কঠিন। তাছাড়া অন্ততপক্ষে ম্যাচ বাঁচাতে হলেও আরো দুইদিন টিকে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। জয় কিংবা ম্যাচ বাঁচানো দুটিই যে বাংলাদেশের জন্য চরম কঠিন সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের তৃতীয় দিন প্রথম ইনিংসে মাত্র ২১৭ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। তাতে ২৩৬ রানের লিড পায় প্রোটিয়ারা। স্বাগতিকরা চাইলে বাংলাদেশকে ফলোঅনে ব্যাট করতে পাঠাতে পারত। কিন্তু বাংলাদেশকে ফলোঅনে না পাঠিয়ে ফের ব্যাটিংয়ে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা।
নিজেদের লিড বাড়িয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করাতে নামায় ডিন এলগারের দল। যা তাড়া করতে রীতিমতো হারের শঙ্কায় পড়েছে প্রোটিয়ারা।
আজ ৫ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১৩৯ রান নিয়ে টেস্টের তৃতীয় দিন শুরু করে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনে লড়াইয়ে নেমে কিছুটা আশা দেখান মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলী রাব্বি। এই জুটি ফিরলে বাংলাদেশের সব আশা শেষ হয়ে যায়। ব্যাটিং ব্যর্থতায় মাত্র ২১৭ রানেই অলআউট হয়ে যায় মুমিনুল হকের দল।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ফলোঅনও এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলোঅন এড়াতে আরো ৩৭ রান করতে হতো সফরকারীদের। কিন্তু সেটা করতে পারল না মুমিনুল হকের দল।
আজ ব্যাটিংয়ে নেমে কিছুটা ভালো করেন আগের দিন থিতু হওয়া মুশফিক ও ইয়াসির। কিন্তু জমে ওঠার আগেই জুটি ভাঙেন কেশব মহারাজ।
প্রোটিয়া তারকার করা ডেলিভারিতে ফ্লিক করার চেষ্টা করেন ইয়াসির। কিন্তু ডেলিভারি ব্যাটের কানায় লেগে সহজ ক্যাচ যায় বোলারের কাছেই। মহারাজ সেটা লুফে নিয়ে ইয়াসিরকে সাজঘরের পথ দেখান। ৮৭ বলে ৪৬ রান করে ফেরেন ইয়াসির, ভাঙে ৭০ রানের জুটি।
ইয়াসির ফেরার পর প্রতিপক্ষকে উইকেট উপহার দেন মুশফিক। ম্যাচের এত কঠিন পরিস্থিতি দেখেও তিনি খেলে ফেললেন আত্মঘাতী শট। সাইমন হার্মারের ফুল লেংথ বলে রিভার্স সুইপ করার চেষ্টা করেন মুশফিক। ব্যাটের নিচ দিয়ে বল গিয়ে লাগে স্টাম্পে। ১৩৬ বলে ৫১ রানে আউট মুশফিক। মুশফিকের আউটের সঙ্গে সঙ্গে আশাও শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের।
এর আগে ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে ৪৫৩ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৪ রান করেছেন কেশব মহারাজ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০ রান করেছেন ডিন এলগার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ৪৫৩
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: (আগের দিন ১৩৯/৫) ৭৪.২ ওভারে ২১৭ (মুশফিক ৫১, ইয়াসির ৪৬, মিরাজ ১১, তাইজুল ৫, খালেদ ০*, ইবাদত ০; অলিভিয়ের ১৫-৪-৩৯-২, উইলিয়ামস ১২-২-৫১-০, হার্মার ১০.২-১-৩৯-৩, মহারাজ ২৪-৬-৫৭-২, মুল্ডার ১৩-৭-২৫-৩)।
দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস: ৩৯.৫ ওভারে ১৭৬/৬ (ডি.)(এলগার ২৬, এরউইয়া ৪১, পিটারসেন ১৪, বাভুমা , রিকেলটন ১২, ভেরেইনা ৩৯*, মুল্ডার ৬; ইবাদত ৫-০-২৯-০, খালেদ ১০-০-৩৮-১, তাইজুল ১৫-২-৬৭-৩, মিরাজ ৯.৫-৩-৩৪-২)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৯.১ ওভারে ২৭/৩ (তামিম ১৩, জয় ০, শান্ত ৭, মুমিনুল ৫; মহারাজ ৫-১-১৮-২, সিমন ৪.১-১-৮-১)।