নিঃস্ব জীবন থেকে সাফল্যের চূড়ায় লুকাকু

একটা টাকা ছিল না তাঁর বাবার কাছে, শুধু গরীব ছিলেন না বরং রোমেলু লুকাকু নিজের পরিবারকে বলেছিলেন একদম 'নিঃস্ব, শূন্য'। 'সারা সপ্তাহ চলার মতো টাকা ছিল না আমাদের। আমরা শুধু গরিব ছিলাম না, ছিলাম নিঃস্ব।'
যে বাসাটায় থাকতেন ঠিকঠাক বিদ্যুৎ সরবরাহ পেতেন না। পাবেন কীভাবে? বাবার কাছে মাস শেষে ইলেক্ট্রিক বিল দেয়ার টাকাটাই থাকতো না। মাকে দেখতেন দুধের সঙ্গে পানি মিশিয়ে পরিমাণটা বাড়াতে, যেন আরও দুইটা বেলা বেশি খাওয়া যায়।
যে অ্যাপার্টামেন্টে থাকতেন, সেখানে ছিল ইঁদুরের উৎপাত। ঠিকঠাক ফুটবলটাও খেলতে পারতেন না। একটা জেদ নিয়ে চামড়ার গোলকটাতে লাথি দিতেন, একদিন অনেক বড় হবেন। দুঃখ ঘোঁচাবেন মায়ের, স্বচ্ছলতা আনবেন সংসারে।
বাবা নিজেও ছিলেন পেশাদার ফুটবলার। তবে, সন্তান আর পরিবারের জন্য সময়টা দিতে পারেননি ফুটবলকে। নিজের দেশ কঙ্গো হলেও একটা সময় বেলজিয়ামেই ঘাঁটি গড়ে লুকাকুর পরিবার।
মেঘাচ্ছন্ন কালো আকাশ একটা সময় সরেই, সূর্য হাসে ঝলমলিয়ে। লুকাকুর জীবনেও হেসেছে সূর্য। বেলজিয়ামের জার্সিতে কঙ্গোর কালো ছেলেটা এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা (৪০ গোল)। বেনার্ড ভুরহুফের ৩০ গোল ছাড়িয়েছেন সে অনেক আগেই। এখন প্রতিদিন শুধু ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নিজেকেই।
চূড়ায় বসার অভ্যেস যেন পেয়ে বসেছে লুকাকুকে। আজ তিউনিসিয়ার বিপক্ষে দুই গোল নিজেকে হয়ে গেছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে সবেচেয়ে বেশি গোল করা বেলজিয়ান ফুটবলার। পাঁচ গোল নিয়ে মার্ক উইলমোটসও রয়েছেন তাঁর সঙ্গে। যে ফর্মে আছেন তাতে একদম শীর্ষস্থানটা নিজের করে নিতে লাগবেনা বেশিদিন, আর তো দরকার একটা গোল।
একটা সময় পর্যন্ত জীবন অনেক কিছুই দেয়নি লুকাকুকে। আজ যখন দেয়া শুরু করেছে জীবন, ফুটবলার বাবার স্বপ্নটাকে বাস্তবের মাটিতে টেনে নামানোর পরেও লুকাকুর কষ্ট থেকেই যায়। কষ্টটা অবশ্য আফসোসের।
নানা শুধু দেখেছেন তাঁর মেয়েটা লুকাকুর বাবার ঘরে কষ্টই করে যাচ্ছেন। কিন্তু সুখের সময়টা যখন এসেছে, নানাজান পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। মেয়ের সুখটা আর দেখে যাওয়া হয়নি তাঁর।
লুকাকুর আফসোসটাও এখানেই, 'আজ চাইলেও তাঁকে ফোন করে বলতে পারিনা দেখে যাও তোমার মেয়েটা সুখে আছে। আমাদের ঘরে আজ কোন ইঁদুর নেই। আমরা এখন আর মেঝেতে ঘুমাইনা। আমরা খুব ভাল আছি।'