ডেথ ওভারে দুর্দান্ত মুস্তাফিজ
সতীর্থরা তাঁকে আদর করে ডাকেন ‘দ্য ফিজ’। নামটা বাংলাদেশ দলের কারো দেওয়া নয়, আইপিএল-২০১৬ মৌসুমে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে খেলার সময় অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের দেওয়া নামটি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পায়। তবে এই নামকরণ আর পরিচয় এসেছে মূলত টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ডেথ ওভারে অনন্য সাধারণ বোলিং নৈপুণ্য দেখানোর জন্য। বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচে আরো একবার ‘দ্য ফিজ’ হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিস্ময় জাগানিয়া আগমনের পর ইনজুরি আর প্রত্যাশার চাপ সামলে মুস্তাফিজের ক্যারিয়ার চলছিল ভালোমন্দের মিশেলে। আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে গত আসরটা ঠিক মনের মতো হয়নি। তবে ইনজুরি থেকে ফিরে গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ফর্মে ফেরার ইংগিত দিয়েছিলেন। ১৮ ম্যাচ থেকে ২৯ উইকেট নিয়ে ওডিআইতে গত বছর সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকার ছয়ে থেকে বছরটা শেষ করেন মুস্তাফিজ। তবে ২১.৭১ গড় আর ওভারপ্রতি মাত্র ৪.২০ রান দিয়ে নিজের স্বকীয়তা ঠিকই ধরে রাখেন তিনি।
গত বছর নিদাহাস ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে প্রচণ্ড চাপের মুখে এসে অষ্টাদশ ওভারে অসাধারণ বোলিং করেছিলেন। এশিয়া কাপে আফগানদের বিপক্ষে ‘মাস্ট উইন’ ম্যাচে শেষ ওভারে তাঁর জাদুতেই দুর্দান্ত জয় পায় বাংলাদেশ। কিন্তু আগের মতো চিরচেনা মুস্তাফিজ যেন কিছুটা আড়ালেই চলে গিয়েছিলেন। তবে আজ বিপিএলে আবার সেই ‘ফিজের’ দেখা পেল ক্রিকেটপ্রেমীরা।
শেষ তিন ওভারে পাঁচ উইকেট হাতে নিয়ে মাত্র ২২ রান প্রয়োজন ছিল প্রতিপক্ষ রংপুর রাইডার্সের। উইকেটে সেট ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো। অধিনায়ক মিরাজের তুনের সেরা তীর মুস্তাফিজ অষ্টাদশ ওভারে বোলিংয়ে এসে দিলেন মাত্র ৪ রান। উদানার করা ১৯তম ওভার শেষে জয়ের জন্য মাত্র ১০ রান প্রয়োজন পড়ে রাইডারদের। কিন্তু ‘দ্য ফিজ’ তাঁর কাটারের ঝাঁপি খুলে বসলেন আসল সময়ে এসে। জাদু দেখিয়ে শেষ ওভারে ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে প্রায় অসাধ্য এক জয় উপহার দিলেন তিনি। আসরে দ্বিতীয় জয়ের আনন্দে রাজশাহীর অধিনায়ক মিরাজ ততক্ষণে কাঁধে উঠে গেছেন কাটার মাস্টারের।
এমন পারফরম্যান্সের পর হাসি ফুটেছে মুস্তাফিজের মুখে। অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজ, সৌম্য সরকার, ম্যাচসেরা জাকির হাসানসহ দলের সবাই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ফিজকে। এই হাসি যেন দীর্ঘায়িত হয় বিপিএলজুড়েই, তেমনটাই চাইবে রাজশাহী কিংস দল। আর বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের ভক্তরা চাইবেন সবসময় এমন জাদুই দেখাক ‘দ্য ফিজ।’