হ্যামিল্টনে যা কিছু পেল বাংলাদেশ
চার দিনেই শেষ হয়ে গেল হ্যামিল্টন টেস্ট। স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের কাছে এক ইনিংস ও ৫২ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪২৯ রানের বড় স্কোর করা সত্ত্বেও প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতায় বড় ব্যবধানের পরাজয় হতাশ করেছে বাংলাদেশ দলকে। তবে হতাশার মধ্যেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছেন বাংলাদেশের তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার এবং এই টেস্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাঁদের দারুণ পারফরম্যান্স পরাজয় রুখতে না পারলেও সিরিজের বাদবাকি ম্যাচগুলোর জন্য নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাস সঞ্চারিত করবে দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে।
শুরুটা করেন তামিম ইকবাল। সেডন পার্কে টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেওয়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেন বাংলাদেশের এই ড্যাশিং ওপেনার। কিউইদের মাটিতে এবারের সফরে ওয়ানডে সিরিজে হাসেনি তাঁর ব্যাট। তবে টেস্ট শুরু হতেই চিরচেনা রূপে আবির্ভূত হন এই ওপেনার। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের বিপক্ষে একের পর এক স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছুটিয়ে ১০০ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। ক্যারিয়ারে নবম টেস্ট শতরান করা বাঁহাতি ওপেনারের ১২৮ বলের ইনিংসটা থেমেছে ২১ চার ও একটি ছক্কায় ১২৬ রান করে। দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি পেতে পারতেন তিনি। স্বভাবসুলভ ব্যাটিংয়ে ৮৬ বলে তাঁর ৭৪ রানের ইনিংসটা সাজানো ছিল ১২ চার ও এক ছক্কায়। তবে সাউদির বাউন্সারে সেঞ্চুরি থেকে ২৬ রান দূরে থাকতেই থেমে যায় তাঁর ইনিংস।
হ্যামিল্টনে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছেন বাংলাদেশ দলের আরেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার। প্রথম ইনিংসে মাত্র এক রান করে আউট হওয়া ব্যাটসম্যান এই টেস্টে বল হাতে বাংলাদেশের সফলতম বোলার। মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে ২১ ওভারে ৬৮ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরিয়ান টম ল্যাথাম ও রস টেইলরের উইকেট দুটি। তবে মূল কাজটা করেছেন নিজের আসল দায়িত্ব পালনে এসে। টেস্টে ৯৪ বলে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরি করে বসেছেন তামিম ইকবালের পাশে। চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করা সৌম্য ১৭১ বলে ২১টি চার ও পাঁচটি ছক্কায় ১৪৯ রান তুলে থেমেছেন ট্রেন্ট বোল্টের বলে বোল্ড হয়ে। পঞ্চম উইকেটে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ২৩৫ রান তুলে বাংলাদেশের ইনিংসকে দিয়েছেন ভদ্রোচিত চেহারা। আগের পাঁচটি টেস্টে একবারও অর্ধশতক না পাওয়া সৌম্যর পরের টেস্টে দলে সুযোগ পাওয়া সুতোর ওপর ঝুলছিল। তবে অসাধারণ সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের ইনিংসের পাশাপাশি নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের আকাশে জমে ওঠা কালো মেঘটা সরিয়ে দিতে পেরেছেন আপাতত।
এই ম্যাচেই ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। দলের দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৬ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে তামিম আউট হওয়ার পর সৌম্য সরকারের সঙ্গে হাল ধরেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। অধিনায়কোচিত এক ইনিংস খেলে ২২৯ বলে ২১টি দৃষ্টিনন্দন চার ও তিনটি ছক্কায় সাজানো ১৪৬ রানের ইনিংস খেলে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়েছেন তিনি। দুর্দান্ত সব শট আর চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে খেলা রিয়াদের ইনিংসটা বাংলাদেশকে বড় লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছে আজ। পাশাপাশি আগামী ম্যাচে ভালো করার জন্য দলের বাকি সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে তাঁর ইনিংসটা।