নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত রুমানা
বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে কদিন আগে আইসিসির বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি দলের ক্যাপ মাথায় তোলেন রুমানা আহমেদ। আট বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এই সম্মান পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। তাঁর এবারের লক্ষ্য আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে জায়গা করে নেওয়া, পাশাপাশি অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর স্থান দখল করা। কিন্তু লক্ষ্য পূরণের ভবিষ্যৎ যাত্রা নিয়ে চিন্তিত রুমানা। এনটিভি অনলাইনের কাছে নিজের স্বীকৃতি প্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জানালেন সেই শঙ্কার কথা।
নিশ্চিতভাবে ২০১৮ সালটি ছিল রুমনা আহমেদের জন্য সোনায় মোড়ানো বছর। গেল বছর ২৪টি টি- টোয়েন্টি ম্যাচে ৩০ উইকেটের পাশাপাশি তার ব্যাট থেকে আসে ২২৯ রান। বাংলাদেশের মেয়েদের এশিয়া কাপ জয়েও তার ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। টুর্নামেন্টে ছয় ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন রুমানা। পাশাপাশি মেয়েদের ওয়ানডেতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হ্যাটট্রিক করার গৌরবও রুমানার দখলে। সেই পুরস্কার হিসেবে গত বছর আইসিসির বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন ২৭ বছর বয়সী এই নারী ক্রিকেটার।
গত রোববার আইসিসির পাঠানো স্বীকৃতির সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছেন রুমানা। নিজের এই অর্জনের অনুভূতি নিয়ে এনটিভি অনলাইনকে রুমানা বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত। আসলে এই পুরস্কারের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। কারণ এত দ্রুত এটা আমি আশা করিনি। ভেবেছিলাম, এই প্রাপ্তির জন্য আমাকে আরো অপেক্ষা বা পরিশ্রম করতে হতে পারে।’
আইসিসির এই সম্মানকে আগামীর প্রেরণা হিসেবে নিচ্ছেন রুমানা। আগামীর বছর টি-টোয়েন্টির সঙ্গে ওয়ানডের বর্ষসেরা একাদশে জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্ন বুনছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের শঙ্কায় তিনি। কারণ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নিয়মিত খেলার প্রয়োজন। সেই সুযোগ তেমন পাচ্ছে না বাংলাদেশের মেয়েরা। নতুন বছরের তিন মাস পার হতে চলল। এখনো কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচের মুখ দেখেনি সালমা-রুমানারা। অথচ ২০১৮ সালে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব, বিশ্বকাপ, দ্বিপক্ষীয় সিরিজসহ মোট ২৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিল তারা।
ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেলে নিজেদের পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা অধিনায়কের মুখে। তাঁর ভাষায়, এই সম্মান আমার লক্ষ্যকে আরো উপরের দিকে নিবে। এখন আমার টার্গেট ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি দুটাতেই বর্ষসেরা একাদশের অংশ হওয়ার। আসলে ক্রিকেটে উন্নতির তো শেষ নেই। আমি অলরাউন্ডার হিসেবে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে উঠার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু এখন আমি আমার দল নিয়ে বেশি চিন্তিত। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়েও চিন্তিত। আমরা এই বছর এখনো খেলার সুযোগ পাইনি। আমি আমার দল নিয়ে গর্ববোধ করি। আমরা যদি নিয়মিত খেলার সুযোগ পাই তাহলে আমাদের এই দল থেকে আরো তিন-চারজন রুমানা বের হয়ে আসত। আমরা আরো গর্ব করতে পারতাম। কিন্তু খেলার অভাবে আমরা দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি।’
পুরুষদের পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারীদের ক্রিকেট। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে বেশি বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ চাচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তাদের প্রতিনিধি রুমানার মতে, ‘নারী ক্রিকেটের উন্নতির জন্য আমাদের আরো বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা খুব দরকার। আমি গত বছর অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে ছয় নম্বরে ছিলাম। কিন্তু এভাবে ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেলে সেটা আর থাকবে না। আমাদের খেলার সুযোগ নেই, এতে অন্যরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যারা ৮-৯ তে ছিল তারা এখন আমার চেয়েও এগিয়ে। খেলা না হলে আমি আমার লেভেলটা বুঝবো কী করে?’
তা ছাড়া দেশের প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছে নিয়ে আগামী প্রজন্মকেও ঘরবন্দি না থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বাংলাদেশ নারী দলের সঙ্গে প্রায় এক দশক কাটানো রুমানা। আগামী প্রজন্মের প্রতি অধিনায়কের বার্তা, ‘আগামীদের জন্য এটাই বলব যে, কষ্ট করলে কেষ্ট মিলবে। এখন নারীদের ক্রিকেট অনেক দূর এগিয়েছে, আরো যাবে। আমি আশা করব, খেলার ইচ্ছে নিয়ে যারা ঘরে বন্দি হয়ে আছেন তারা বেরিয়ে আসেন। আমরা আপনাদের অপেক্ষাতেই আছি।’