বাংলাদেশের স্বপ্ন ভেঙে সমতায় সিরিজ শেষ নিউজিল্যান্ডের
বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল ইতিহাস গড়ার। নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে প্রথমবার ম্যাচ হারানোর পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বপ্ন নিয়েই মাঠে নামে বাংলাদেশ। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে আজ রোববার (৩১ ডিসেম্বর) সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামে দুদল। অল্প রানের পুঁজি নিয়েও বল হাতে লড়াই জমিয়ে তোলে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয় বৃষ্টির বাধায়। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশকে ১৭ রানে হারিয়ে সিরিজে সমতা আনে নিউজিল্যান্ড।
আগে ব্যাট করে ১৯.২ ওভারে বাংলাদেশ অলআউট হয় ১১০ রানে। জবাবে ১৪.৪ ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ৯৫ রান করে নিউজিল্যান্ড।
টি-টোয়েন্টিতে ১১১ রান মামুলি লক্ষ্য। আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ বল হাতে কিউইদের জন্য এ লক্ষ্যকেই কঠিন করে তোলে। প্রথম ওভারে ১২ রান তোলা স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ওভারে উইকেট বিলিয়ে দিতে বাধ্য করেন শেখ মেহেদি। টিম শেফার্ডকে (১) রনি তালুকদারের স্ট্যাম্পিংয়ে পরিণত করেন মেহেদি। ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় কিউইরা। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচে পরিণত করে ডেরিল মিচেলকেও ফেরান মেহেদি। ২৬ রানে দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে দলটি।
কিউইদের বিপদ আরও বাড়ান শরিফুল ইসলাম। মাত্র এক রানে গ্লেন ফিলিপসকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে তৃতীয় সাফল্য এনে দেন এই পেসার। রানআউটের শিকার হয়ে মার্ক চ্যাপম্যানও (১) ফিরে যান দ্রুতই। এক প্রান্তে নিয়মিত উইকেট পড়লেও ওপেনার ফিন অ্যালেন রান তুলে যাচ্ছিলেন। ৩১ বলে ৩৮ রান করা অ্যালেন বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগে তাকে বোল্ড করেন শরিফুল। ৪৯ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে কিউইরা।
সিরিজে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স হিসাব করলে এই ম্যাচে বোলাররা হয়তো এনে দিতে পারতেন জয়। কিন্তু, প্রতিপক্ষকে চেপে ধরলেও ধীরে ধীরে চাপের বলয় থেকে বের হয় তারা। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার ও জেমস নিশাম মিলে ৪৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। সেখানেই ভেঙে যায় বাংলাদেশের স্বপ্ন।
নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় বৃষ্টি আসলে বন্ধ হয় খেলা। ততক্ষণে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে যায় কিউইরা। নিশামের ২০ বলে ২৮ ও স্যান্টনারের ২০ বলে অপরাজিত ১৮ রান স্বাগতিকদের জয়ের পথ খুলে দেয়। এত কাছে গিয়েও বাংলাদেশ পারেনি কাঙ্খিত সিরিজ জিততে। বৃষ্টি আইনে কিউইরা পায় ১৭ রানের জয়। সিরিজ শেষ হয় ১-১ সমতায়।
বাংলাদেশের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন শরিফুল ও মেহেদি।
এর আগে ম্যাচের শুরুতে টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিংয়ে নামলেও শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দলীয় চার রানের মাথায় টিম সাউদির করা প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে এলবিডব্লিউ হন সৌম্য সরকার। মিডল স্টাম্পের ওপরের বল সুইং করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। সৌম্য ব্যাট চালালেও টাইমিং করতে পারেননি। বল তার প্যাডে আঘাত করলে নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা আউটের আবেদন করেন। আম্পায়ারও সাড়া দেন। সৌম্য রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু, আম্পায়ার্স কলে ড্রেসিংরুমের পথ ধরতে হয় তাকে।
সৌম্য আউট হওয়ার পর বেশ আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত। তবে, বছরের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমে ১৭ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। অ্যাডাম মিলনের বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন।
শান্তর বিদায়ের পর দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন ওপেনার রনি তালুকদার। দলীয় ৪১ রানে ১০ বলে ১০ রান করে বেন সিয়ার্সের বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন তিনি। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল লেগ স্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। সতীর্থ তাওহিদ হৃদয়ের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় ফিরে আসেন এই ডানহাতি ওপেনার।
দলে ফিরে নিজের জায়গা শক্ত করতে পারলেন না আফিফ হোসেন। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাত্র এক রান করা আফিফ এবার কিউই অধিনায়ক স্যান্টনারের বল এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে হাওয়ায় ক্যাচ তোলেন। উইকেট রক্ষক সহজ ক্যাচ নিয়ে তাকে ফেরান। ১৩ বলে দুই বাউন্ডারিতে ১৪ রান করেন আফিফ।
এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১১০ রানে থামে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ১৯.২ ওভারে ১১০/১০ (সৌম্য ৪, রনি ১০, শান্ত ১৭, তাওহিদ ১৬, আফিফ ১৪, শামীম ৯, মেহেদী ৪, রিশাদ ৯, শরিফুল ৪, তানভীর ৮, মুস্তাফিজুর ৩*; সাউদি ৪-০-২৫-২, মিলনে ৩.২-০-২৩-২, সিয়ার্স ৪-০-২৮-২, স্যান্টনার ৪-০-১৬-৪, শোধি ৪-০-১৬-০)
নিউজিল্যান্ড : ১৪.৪ ওভারে ৯৫/৫ (অ্যালেন ৩৮, শেফার্ড ১, মিচেল ১, ফিলিপস ১, চ্যাপম্যান ১, নিশাম ২৮*, স্যান্টনার ১৮*; তানভীর ১-০-১২-০, মেহেদি ৪-০-১৮-২, শরিফুল ৩.৪-০-১৭-২, মুস্তাফিজ ৩-০-১৩-০, রিশাদ ২-০-১৯-০, শান্ত ১-০-১৪-০)
ফল : বৃষ্টি আইনে নিউজিল্যান্ড ১৭ রানে জয়ী