কুমিল্লার রথ থামিয়ে চ্যাম্পিয়ন তামিমের বরিশাল
বিপিএলের ফাইনাল মানে বরাবরই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের আধিপত্য। বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগটির টাইটেলকে অনেকটা নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছিল দলটি। এবারও ছিল শিরোপা জয়ের দুয়ারে। তবে, সেই দুয়ার থেকে এবার শূন্য হাতে ফিরলেন লিটন দাসরা। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের জয়ের রথ থামিয়ে প্রথমবার বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন তামিম ইকবালের ফরচুন বরিশাল।
একে একে তিন ফাইনালে হারার পর সোনার হরিণের দেখা পেল বরিশাল। চতুর্থবারে এসে পেল শিরোপার স্বাধ। বিপিএলের দশম আসরে কুমিল্লাকে ছয় উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন তকমা জিতল দক্ষিণাঞ্চলের দলটি। অন্যদিকে চারবার শিরোপা জেতা কুমিল্লার সামনে সুযোগ ছিল সংখ্যাটাকে পাঁচে নিয়ে যাওয়ার। সেই সঙ্গে টানা তিনটি জিতে হ্যাটট্রিক করার। সেই আশা ভেস্তে দিলেন তামিম-মিরাজরা।
দীর্ঘ সময় ধরে বিপিএল খেললেও কখনও শিরোপা জেতা হয়নি মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। তামিমের অধীনে সেই অধরা আক্ষেপও মেটে গেল দুই তারকার।
আজ শুক্রবার (১ মার্চ) কুমিল্লার দেওয়া ১৫৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ছয় বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় বরিশাল। আগে ব্যাট করা কুমিল্লা খুব বেশি সুবিধা করতে পারতে পারেনি। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাল বরিশাল।
মাঝারি লক্ষ্য তাড়ায় দারুণ শুরু এনে দেন তামিম-মিরাজ। শুরুর জুটিতে দুজন যোগ করেন ৭৬ রান। অষ্টম ওভারে তামিমকে বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন মঈন আলি। ততক্ষণে বরিশালের ভিত গড়ে ২৬ বলে ৩৯ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে অধিনায়ক ফিরে যান ড্রেসিংরুমে। আরেক ওপেনার মিরাজকেও মাঠছাড়া করেন মঈন। চার্লসের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে মিরাজ করেন ২৬ রান।
৮২ রানে দুই উইকেট হারানোর পর পরের গল্পটা লিখেন কাইল মায়ার্স ও মুশফিক। এই জুটিতে বরিশাল পৌঁছে যায় ১৪১ রানে। ৪৬ রানে মায়ার্স ও ১৩ রানে ফিরলেন মুশফিক। দুই সেট ব্যাটার ফিরলে বাকিটা পথ পাড়ি দেন রিয়াদ ও মিলার।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এর আগে জিতে আগে বোলিং বেছে নেয় বরিশাল। আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই কুমিল্লা খায় ধাক্কা। মায়ার্সের ফুলার লেন্থের বলে শট ফাইন লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারেন সুনিল নারিন। সেখানে থাকা ফিল্ডার ম্যাকয় দুর্দান্ত ক্যাচে তা লুফে নিয়ে মাঠছাড়া করেন কুমিল্লার ওপেনারকে।
টুর্নামেন্টের শুরু থেকে দলের আস্থা হয়ে ছিলেন তাওহিদ। ফাইনালে পারলেন না জ্বলে উঠতে। থিতু হওয়ার আগেই জেমস ফুলারের বলে বিদায়। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ফুলারকে থার্ড ম্যানে খেলতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ তুলে দেন তাওহিদ। ১০ বলে ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি কুমিল্লার এই ব্যাটার।
বরিশালের পরের ছোবল লিটন দাস। গত ম্যাচের জয়ের নায়ককেও নিজের শিকার বানান ফুলার। তাওহিদের মতো একই ভুল করে বসেন লিটন। থার্ড ম্যান দিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন মাহমুদউল্লাহর হাতেই। ১২ বলে কুমিল্লার অধিনাইয়ক করেন ১৫।
৪২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে যখন বিপাকে কুমিল্লা। তখন ম্যাকয় দিলেন আরেকটি ধাক্কা। এবার তুলে নিলেন জনসন চার্লসকে। আগেরবার ফাইনালে কুমিল্লার জয়ের নায়ক এবার করেন মোটে ১৫ রান। এরপর রান আউটে কাটা পড়েন কুমিল্লার আরেক বিদেশি মুখ মঈন আলি।
একের পর এক উইকেট হারানোর মিছিলে আশার আলো হয়ে জ্বলেছিলেন মাইদুল ইসলাম অঙ্কন। সতীর্থদের উইকেট হারানোর মিছিলে ছিলেন থিতু। তাকে সঙ্গ দেন স্বদেশি জাকের আলি। থিতু হওয়া এই জুটি ভাঙেন সাইফউদ্দিন। মাইদুলের স্টাম্প ভেঙে উল্লাসে মাতেন। ৩৫ বলে ৩৮ রান করেন অঙ্কন। এরপর শেষ দিকে আন্দ্রে রাসেলের ঝোড়ো ইনিংসে মোটামুটি লড়াইয়ের পুঁজি পায় কুমিল্লা। তবে জয়ের জন্য এই পুঁজি যথেষ্ট ছিল না। ক্যারিয়বীয় তারকা শেষের দিকে করেন ২৭ রান। তার সঙ্গে থাকা জাকের করেন ২০ রান।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ২০ ওভারে ১৫৪/৬ (লিটন ১৬,নারিন ৫, তাওহিদ ১৫, চার্লস ১৫, মাহিদুল ৩৮, মঈন ৩, জাকের ২০, রাসেল ২৭; মায়ার্স ৪-০-২৬-১, সাইফউদ্দিন ৪-০-৩৭-১, ফুলার ৪-০-৪৩-২, তাইজুল ৪-০-২০-০, ম্যাকয় ৪-০-২৪-১)।
ফরচুন বরিশাল : ১৯ ওভারে ১৫৭/৪ (তামিম ৩৯, মিরাজ ২৬, মায়ার্স ৪৬,রিয়াদ ৭, মিলার ৮, মুশফিক ১৩ ; মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-২, তানভির ৩-০-২৪-০, নারিন ৪-০-২১-০, বর্ষন ১-০-১৫-১, রাসেল ৩-০-৩৩-০,মঈন ৪-০-২৮-২)।
ফল : ৬ উইকেটে জয়ী ফরচুন বরিশাল।
ম্যান অব দ্য ফাইনাল : কাইল মায়ার্স