এখনই থামতে চান না রোনালদো, নজর হাজার গোলে
বাম প্রান্ত থেকে নুনো মেন্ডেসের পাঠানো ক্রস পায়ের পাতার টোকায় জালে জড়িয়ে দিলেন। এরপরই কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে ছুটে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে দুই হাতে মুখ চেপে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এই গোলের মাধ্যমে যে কীর্তি তিনি গড়েছেন, তাতে সেই অশ্রু মোটেও দুঃখের নয়, তা আবেগ ও আনন্দের।
লিসবনে উয়েফা নেশন্স লিগের ম্যাচে আজ শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতে শুভসূচনা করেছে পর্তুগাল। দলের দ্বিতীয় গোলটি করে পেশাদার ক্যারিয়ারের (ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে) ৯০০ গোলের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রোনালদো। অনন্য অর্জনের পর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি পর্তুগিজ মহাতারকা।
পেশাদার ফুটবলে রোনালদো প্রথম গোলটি করেন ২০০২ সালের ৭ অক্টোবর ১৭ বছর আট মাস তিন দিন বয়সে স্পোর্টিং লিসবনের জার্সিতে। সেদিন ফুটবল বিশ্বের নজর কাড়তে পারেনি সেই ছেলেটি। অথচ কে জানত, গোল দুটিই দীর্ঘ এক সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ারের শুরু।
৪০ ছুঁই ছুঁই বয়সে ৯০০ গোলের মাইলফলকে পৌঁছে রোনালদো জানালেন পরিশ্রমের কথা। অকপটে বললেন, পরিশ্রম তাকে কোথায় নিয়ে এসেছে। রোনালদো বলেন, ‘৯০০ গোল! সবাই বিষয়টি দেখবে এভাবে যে, রোনালদো আরও একটি মাইলফলক ছুঁয়েছে। কিন্তু আমি জানি, এখানে পৌঁছাতে দিনের পর দিন কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে আমার। এটি আমার ক্যারিয়ারের অনন্য এক প্রাপ্তি।’
২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে ২৮৩ ম্যাচে ১১৮ গোল করেন রোনালদো। এর মধ্যে ২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে টানা তিনটি প্রিমিয়ার লিগ জেতেন। এই সময়ে তিনি পান প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বাদ। এরপর তাকে আর আটকে রাখতে পারেননি স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। ২০০৯ সালে তৎকালীন দলবদলের বাজারে রেকর্ড ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডে (৯৪ মিলিয়ন ইউরো) তাকে কিনে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। সেখানে গোলের ফোয়ারা ছুটিয়ে মাদ্রিদ জায়ান্টদের এনে দিতে থাকেন একের পর এক শিরোপা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আরেক মহাতারকা লিওনেল মেসির সঙ্গে এমন এক প্রতিযোগিতায় মাতেন, যাতে বুঁদ হয় গোটা ফুটবল বিশ্ব।
দীর্ঘ ৯ বছর লস ব্লাঙ্কোসদের জার্সি গায়ে চাপিয়ে ৪৩৮ ম্যাচে করেন ৪৫০ গোল, সঙ্গে ১২০ অ্যাসিস্ট। চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, তিনটি করে ক্লাব বিশ্বকাপ ও উয়েফা সুপার কাপ, দুটি করে লা লিগা, স্প্যানিশ সুপার কাপ ও কোপা দেল রে, চারটি ব্যালন ডি’ অর, দুটি ফিফা দ্য বেস্ট পুরস্কার, তিনটি উয়েফার ইউরোপের বর্ষসেরার পুরস্কার, তিনটি ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শ্যু, তিনটি পিচিচি ট্রফি- কী নেই তার ক্যাবিনেটে!
২০১৮ সালে মাদ্রিদ ছেড়ে যখন ইতালিতে পাড়ি জমাচ্ছেন, তার মধ্যেই মহাতারকায় পরিণত হয়েছেন রোনালদো। রিয়াল ছাড়ার পর অনেকেরই ভাবনা ছিল যে, এখান থেকেই তার শেষের শুরু। অথচ ক্যারিয়ারের সূচনালগ্নে ৯৪ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে ভেড়ানো রোনালদোকে সেই শেষলগ্নে রিয়াল ছাড়ল ১১২ মিলিয়ন ইউরোতে।
জুভেন্টাসে যোগ দিয়েও রোনালদো ধরে রাখলেন গোলের ধারা। তুরিনের বুড়িদের হয়ে দুটি সিরি আ এবং একটি করে সুপার কোপা ও কোপা ইতালিয়া জিতে তিন বছরে আরও ১০১ গোল করেন সিআরসেভেন। ২০২১ সালে জুভেন্টাস ছেড়ে ম্যান ইউনাইটেডে ফেরেন। দ্বিতীয় দফায় ৫৪ ম্যাচে ২৭ গোল করেন রেড ডেভিলদের জার্সিতে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরবের ক্লাব আল-নাসেরে যোগ দিয়ে এখন পর্যন্ত ৬৮টি গোল করেছেন রোনালদো।
তবে, ৯০০ ছুঁয়েই থামতে চান না বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই প্রতিভা। নিজেকে আরও উচ্চতায় তুলতে চান তিনি। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রতি সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সতীর্থ রিও ফার্ডিনান্ডকে রোনালদো বলেন, ‘আমি এক হাজার গোলের মাইলফলক স্পর্শ করতে চাই। বছর দুয়েক খেলতে পারলে সেই মাইলফলক স্পর্শ করতে পারব বলে মনে করি।’