বিজয়ের দিনে নাটকীয় জয় বাংলাদেশের
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয় বীর বাঙালি। বিজয় লাভের ৫৩ বছর আজ। দেশের জাতীয় উৎসবকে স্মরণীয় করে রাখার সেই সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেশবাসীকে উপহার দিল ৭ রানের নাটকীয় এক জয়।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ক্যারিবীয়দের দরকার ছিল ১০ রান, হাতে ছিল ২ উইকেট। বোলিংয়ে আসেন হাসান মাহমুদ। প্রথম বলে ১ রান দেন এই পেসার। দ্বিতীয় বলটি হয় ডট। হাসানের অফ স্ট্যাম্পের বাইরে করা তৃতীয় বলে তুলে মারতে গিয়ে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল। এর আগে ৩৫ বলে খেলেন ৬০ রানের ইনিংস। তার বিদায়েই মূলত জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। শেষ তিন বলে জয়ের জন্য ৯ রান প্রয়োজন ছিল ক্যারিবীয়দের। লেজের সারির ব্যাটাররা চেষ্টা করলেও দলকে জেতাতে পারেননি।
আজ সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নেস ভেলে স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ১৯.৫ ওভারে ১৪০ রানে থামে ক্যারিবীয়রা। বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ৪টি উইকেট নেন স্পিনার শেখ মেহেদী। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল লিটনরা।
১৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২ রান তুলতে ২ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে তাসকিন আহমেদ বোলিংয়ে এসে আউট করেন ব্রেন্ডন কিংকে। পরের ওভারে স্পিনার মাহেদী হাসান তুলে নেন নিকোলাস পুরানের উইকেট। এগিয়ে এসে অফস্পিনারকে উড়াতে চেয়ে স্টাম্পড হন পুরান।
চতুর্থ ওভারে তানজিম হাসানের বলে দুই ছক্কা, এক চারে দারুণ কিছুর আভাস দিয়েছিলেন জনসন চার্লস। পরের ওভারে শেখ মেহেদি হাসানের বলেও তিনি মারেন বাউন্ডারি। তবে তাকে বেশি দূর যেতে দেননি শেখ মেহেদি হাসান। মিড অফের ওপর দিয়ে মারার চেষ্টায় বৃত্তের মাথায় দাঁড়ানো হাসান মাহমুদের হাতে ক্যাচ দিলেন চার্লস। ১২ বলে ২০ রান করে ফেরেন তিনি।
দুর্দান্ত বোলিংয়ের ধারা অব্যাহত শেখ মেহেদি হাসানের। সপ্তম ওভারে আন্দ্রে ফ্লেচারকে ফিরিয়ে দিলেন অফ স্পিনার। অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি দূর থেকে ড্রাইভ করার চেষ্টায় ফ্লেচারের ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে যায়। উইকেটের পেছনে দারুণ ক্যাচ নেন লিটন কুমার দাস। রানের খাতাই খুলতে পারেননি ফ্লেচার। এরপর আকিলের বিদায়ে ৬১ রানে ৭ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মনে হচ্ছিল খুব সহজেই ম্যাচ জিততে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে, অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল একাই ম্যাচের গতিপথ বদলে দেন। রোমারিও শেফাডকে নিয়ে গড়েন ৬৭ রানের দারুণ এক জুটি। খেলেন একের পর এক বড় শট। তবে, শেষমেশ আর দলকে জেতাতে পারেননি তিনি।
এর আগে, ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে অহেতুক শটে বোল্ড হয়ে ফেরেন তানজিদ। বলের লাইনে যেতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার, ওই শট খেলার মতো লেংথেও ছিল না। ভাঙে ১৫ রানের শুরুর জুটি। ১১ বলে ৬ রান করেন তানজিদ। তার বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন লিটন দাস। তবে, একবলের বেশি টিকতে পারেননি লিটন। পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে সফরকারীরা। বিভীষিকার ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টোয়েন্টিতেও রানের দেখা পাচ্ছেন না লিটন।
লিটনের পর আরেক ব্যাটার আফিফ হোসেনও হতাশ করেন। দলীয় ৩০ রানের মাথায় রোস্টন চেইসের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যান ফিল্ডারের হাতে ধরা পড়েন আফিফ হোসেন। ফেরার ম্যাচে বাঁহাতি ব্যাটার করেন দুই চারে ১১ বলে ৮ রান। এরপর জাকেরকে নিয়ে দারুণ জুটি গড়েন সৌম্য। এই জুটিতে যোগ হয় ৫৭ রান। দলীয় ৮৭ রানের মাথায় রোমারিও শেফার্ড এর বল লং অনের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে পাওয়েলের হাতে ধরা পড়েন জাকের। এতে ভাঙে ৪২ বল স্থায়ী ৫৭ রানের জুটি। ২৭ বলে দুই ছক্কা ও এক চারে ২৭ রান করেন জাকের।
জাকেরের পর বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি সৌম্য। বেঁচে যাওয়ার পর আর তেমন কিছু করতে পারলেন না সৌম্য। ওবেদ ম্যাকওয়ের বলে বোল্ড হয়ে গেলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। স্লোয়ার বল বুঝতেই পারেননি সৌম্য। শট খেলে ফেলেন অনেক আগে। বল আঘাত হানে স্টাম্পের চূড়ায়। ৩২ বলে তিন ছক্কা ও দুই চারে ৪৩ রান করেন সৌম্য।
এরপর শেখ মেহেদীর সঙ্গে যোগ দিয়ে আগ্রাসী ব্যাট চালান শামীম হোসেন পাটোয়ারি। সপ্তম উইকেট জুটিতে ২৮ বলে আসে ৪৯ রান। মাত্র ১৩ বলে ১ চার, ৩ ছক্কায় ২৭ রান করেন শামীম। শেষ ওভারে আরেক ছক্কার চেষ্টায় ওবেদ ম্যাককয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে থামেন তিনি। ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টি-টোয়েন্টির পর আজই প্রথম জাতীয় দলের হয়ে নামলেন শামীম হোসেন। একবছর পর ফিরেই নিজেকে প্রমাণ কররেন তিনি।