ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশের ইতিহাস
কথায় বলে, "শেষ ভালো যার, সব ভালো তার!" বছরের শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজটা ঠিক সেভাবেই শেষ করল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ওয়ানডে সিরিজের ভরাডুবি ভুলে টি-টোয়েন্টি রাঙাল নিজেদের রঙে। এই ফরম্যাটের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে ক্যারিবীয় সফর শেষ করল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে গড়ে ফেলল ইতিহাস। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে এই প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার ইতিহাস গড়ল লাল সবুজের দল।
টানা দুই জয়ে সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তাদের হোয়াইটওয়াশ করার হাতছানি। এমন সুযোগ হাতছাড়া করেনি বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাল বাংলাদেশ। সেটাও আবার ৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে। বড় জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতে দেশে ফিরছে লিটন দাসের দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এই সফরে তিনটি সিরিজ খেলল বাংলাদেশ। যার মধ্যে একটি ড্র, বাকি দুটি দুদল জিতল সমান একটি করে।
আজ শুক্রবার সকালে (২০ ডিসেম্বর) আগে ব্যাট করে জাকের আলির ব্যাটিং ঝড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৯০ রানের কঠিন লক্ষ্য ছুড়ে দেয় সফরকারী বাংলাদেশ। এই রান তাড়ায় নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রানের খাতা খোলার আগেই হারিয়ে ফেলে উইকেট। এই সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে তাসকিন আহমেদের পেসে পরাস্থ হন ব্রেন্ডন কিং। আজও দেখা মিলল একই দৃশ্যের। তাসকিনের এলবির ফাঁদে পড়ে শূন্যতে বিদায় নেন কিং।
পরের শিকার মেহেদি হাসানের। জাস্টিন গ্রিভসকে ৬ রানে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠান মেহেদি। দলীয় ৭ রানে জোড়া উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই বিপদ কাটাতে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন জনসন চার্লস ও নিকোলাস পুরান। দুজনকেই বিদায় করেন বাংলাদেশি বোলাররা। দলীয় রান ৪৫ থেকে ৪৬ যেতেই তারা হারায় আরো তিনটি উইকেট। পঞ্চাশ রানের নিছে ৫টি উইকেট হারিয়ে বিপাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। চাপ বাড়ে আরো দ্বিগুণ। সেই চাপ মাথায় নিয়ে লড়াই করেন রোমারিও শেফার্ড। কিন্তু বড় রান তাড়ায় তার একার লড়াই যথেষ্ঠ ছিল না। তিনি ৩৩ রানে তানজিম সাকিবের বলে আউট হয়ে ফিরলে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভারে ১০৯ রানে থামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ২১ রান দিয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। দুটি উইকেট করে নেন মেহেদি হাসান ও তাসকিন আহমেদ। তানজিম ও হাসান মাহমুদের শিকার একটি করে।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে সাত উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১৮৯ রান তোলে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭২ রান করেন জাকের আলি অনিক।
এদিন সিরিজের পরিসংখ্যানটা ৩-০ করে নেবার মিশনে শেষ ম্যাচেও ব্যাটিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। কারণ, আগের দুই ম্যাচেও আগে ব্যাটিং নিয়ে সাফল্য এসেছিল বাংলাদেশের। আজও একই পথে হাঁটলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস।
কিংসটাউনের আর্নোস ভেল স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে লিটন দাসের সঙ্গে শেষ টি-টোয়েন্টিতে শুরুটা করেন পারভেজ হোসেন ইমন। দীর্ঘদিন পর ফেরার চাপকে পেছনে ফেলে শুরুর ভিতটা গড়ে দেন পারভেজ। তবে দলীয় ৪৪ রান পার হলে দুজনেই ফিরে যান সাঝঘরে। প্রথমে ফেরেন টানা ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকা লিটন। রোমারিও শেফার্ডের বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন লিটন (১৪)। এরপর দলীয় ৫৪ রানে বিদায় নেন পারভেজ। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে আলজারি জোসেফের বলে ফ্লিক করে ছক্কা মারতে গিয়ে সিলসের হাতে ধরা পড়েন এই ওপেনার। দুই ছক্কা আর চার বাউন্ডারিতে ২১ বলে ৩৯ রান করে থামে তার ইনিংস।
এরপর বাংলাদেশ হারায় তানজিদ তামিমকে। ইনিংসের অষ্টম ওভারে মোতিকে ছক্কা মেরে দারুণ শুরু ক করে ওই ওভারেই ৯ রানে ফেরেন তিনি। তানজিদ ফেরার ধাক্কা মিরাজের ব্যাটে কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। তিনিই বাংলাদেশকে ১০০'র ঘর পার করান। দলীয় শতরান পার হবার পর টিকেনি তার ইনিংস। ব্যক্তিগত ২৯ রানে রস্টন চেজের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন মিরাজ।
বাংলাদেশের পরের উইকেটটি যায় চরম নাটকীয় রান আউটে। চেজের বলে সাড়া না দিয়ে রান নিতে ছুটেন জাকের হোসেন। পরে জাকের শামিমের প্রান্তে এলে মনে হয় জাকের আউট। তবে না, এখানেও নাটকীয়তা। আম্পায়ার রিপ্লেতে দেখেন, শামীমের আগেই জাকের ক্রিজে ব্যাট রেখেছেন। ফলে জাকের নয় সাজঘরে ফেরেন শামীম। অবশ্য জাকের থাকায় মন্দ হয়নি বাংলাদেশের। শেষ দিকে টেলএন্ডারদের নিয়ে তিনিই গড়ে দেন বাংলাদেশের ভিত। তার ব্যাটে চড়ে এই সিরিজের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা জাকের ৩৬ বলে চার হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। ৪১ বলে ৭২ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে থামেন তিনি। যা সাজানো ছিল ৬টি ছক্কা ও তিনটি চারে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বল হাতে ৩০ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন রোমারিও। সমান একটি করে নেন চেজ, মোটি ও আলজারি জোসেফ।