যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে ইন্দোনেশিয়ার কাছে ক্ষমা চাইল নেদারল্যান্ডস
ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ডাচ সেনাবাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত সহিংসতার প্রমাণ পাওয়ার পর দেশটির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট।
ঐতিহাসিক পর্যালোচনায় ১৯৪৫-৪৯ সালের ইন্দোনেশীয় যুদ্ধে পদ্ধতিগত ও অত্যধিক সহিংসতা চালানোর তথ্য পাওয়ায় স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করেন ডাচ প্রধানমন্ত্রী। খবর ডয়চে ভেলের।
নেদারল্যান্ডস সরকারের দীর্ঘদিনের ধারণা ছিল—দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের উপনিবেশ পুনরুদ্ধারে সেনারা কিছু বিচ্ছিন্ন সহিংসতা চালিয়েছিল। তবে, সম্প্রতি চালানো তিনটি গবেষণার একেবারে এর বিপরীত চিত্র পাওয়া গেছে। চার বছরের বেশি সময় ধরে চালানো ওই গবেষণার পরিসমাপ্তিতে বলা হয়েছে, সূত্রের মাধ্যমে দেখা গেছে যে, তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিজ পদ্ধতিগতভাবে সহিংসতা চালিয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘ডাচ সেনাবাহিনীর এ মাত্রারিতিক্ত সহিংসতা শুধু ছড়িয়ে দেওয়াই হয়নি, প্রায় ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত ঘটানোও হয়েছে। এটি রাজনৈতিক, সামরিক ও আইনি—প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্ষমাও করা হয়েছিল।’
গবেষকেরা বলেছেন, গবেষণায় দেখা গেছে—এসবের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেদারল্যান্ডস পক্ষের রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তা, বেসামরিক কর্মচারী, বিচারক ও অন্যরাই দায়ী, যাঁরা মাত্রাতিরিক্ত সহিংসতা চালানোর পদ্ধতিগত ব্যবহার সম্পর্কে জানতেন।
গবেষকেরা আরও বলেছেন, ‘এসব ঘটনায় ক্ষমা করার, ন্যায্যতা দেওয়ার এবং গোপন করার সর্বোপরি বিচারহীনভাবে ছেড়ে দেওয়ার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ইচ্ছা ছিল। এগুলোর সবকিছুই ঘটেছে একটি উচ্চ লক্ষ্য নিয়ে, তা হলো যুদ্ধে জয়।’
পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ‘সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড, দুর্ব্যবহার ও নির্যাতন, অমানবিক পরিস্থিতিতে আটক রাখা, আবাসিক পল্লি ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, সম্পত্তি ও খাদ্য চুরি ও ধ্বংস, অপরিকল্পিত বিমান হামলা এবং কামানের গোলাবর্ষণসহ প্রায়ই নির্বিচার গণগ্রেপ্তার এবং গণভাবে বন্দি করা।’
গবেষকেরা বলেছেন, গবেষণায় এসব অপরাধ ও ভুক্তভোগীদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় সম্ভব ছিল না। এর আগে ১৯৬৯ সালে এক বর্ষীয়ান ডাচ প্রথম এ যুদ্ধাপরাধ প্রকাশ করেছিলেন।
দশকের পর দশক ধরে ডাচ সরকার দাবি করে আসছিল যে, বিচ্ছিন্ন কিছু হামলা ছাড়া সাধারণভাবে সেনাবাহিনী সঠিক ব্যবহার করেছিল। তবে, গবেষকেরা এই বলে উপসংহার টেনেছেন—সরকারের এ অবস্থান আর বিশ্বাসযোগ্য নয়।
এ গবেষণা প্রকাশের পর ডাচ প্রধানমন্ত্রী নৃশংসতা স্বীকার করে শুধু ক্ষমাই চাননি, পাশাপাশি দেশটির আগের সরকারগুলোর ব্যর্থতাও মেনে নিয়েছেন।
মার্ক রুট বলেছেন, ‘ডাচদের পক্ষ থেকে পদ্ধতিগত ও ব্যাপক সহিংসতা এবং পূর্ববতী সরকারগুলোর অন্যদিকে দৃষ্টি ফেরানোর জন্য আমি ইন্দোনেশিয়ার জনগণের কাছে গভীরভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।’ তিনি আরও বলেন, এসব গবেষণার ফলাফলে মুখোমুখি হওয়া দরকার, এগুলো কঠিন, তবে পরিত্যাজ্য। এ সম্মিলিত ব্যর্থতার সম্পূর্ণ দায় নিচ্ছে সরকার।
নেদারল্যান্ডসের পক্ষ থেকে ইন্দোনেশিয়ার কাছে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। তবে, এবারই প্রথম সরকার স্বীকার করেছে যে, ওই ঘটনাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়েছিল। এর আগে ২০২০ সালের মার্চে ইন্দোনেশিয়া সফরকারে ডাচ রাজা উইলেম-আলেকজান্ডার ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন। এর আগে ২০১৬ সালে নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্ট কোয়েন্ডার্স গণহত্যার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন।