মিয়ানমারে অভিযানে হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা

সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার অভিযান চালিয়ে এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করেছে। জাতিসংঘের দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের আলাদা দুটি সংস্থার ওই দুই সিনিয়র সদস্য মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রয়টার্সকে তাঁরা বলেছেন, এ পর্যন্ত শত শত রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। একজন বলেছেন,‘এটি সম্ভবত কমই বলা হচ্ছে। আমরা হাজার হাজার খুঁজে পেতে পারি।’
কিন্তু রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ ও শিশুদের হত্যাসহ বেসামরিক নাগরিকের বিরুদ্ধে নৃশংসতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমার সরকার।
তবে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জ তাই দাবি করেছেন, বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানে ১০০-এর কম রোহিঙ্গা জঙ্গি নিহত হয়েছে।
অভিযানকালে এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে, জাতিসংঘের ওই দুই কর্মকর্তার এমন মন্তব্যের বিষয়ে জ তাই বলেন,‘আমাদের পরিসংখ্যানের চেয়ে এ সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের ঘটনার মূলে গিয়ে তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
গত বছরের অক্টোবর থেকে উত্তর রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে জাতিগতভাবে নির্মূল করতে দেশটির সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। অভিযানকালে সেনবাহিনী ও পুলিশ রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রামে আগুন দিয়ে বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়। এ সময় রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েদের ধর্ষণসহ শিশু হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
গত সোমবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের নারী ও মেয়েদের ধর্ষণ করেছে। তাদের ওপর যৌন সহিংসতাও চালানো হয়েছে। এইচআরডব্লিউ জানায়, গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশটির মংডু জেলার ৯টি গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশের সদস্যরা আগ্রাসীভাবে দেহতল্লাশি, রোহিঙ্গা নারী ও তরুণীদে ধর্ষণ, গণধর্ষণসহ যৌন হামলায় অংশ নেয়।
এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় ৬৬ হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বর্তমানে সেই সংখ্যা ৬৯ হাজারে দাঁড়িয়েছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে।
এর আগে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত মানুষ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল এবং ২০১৩ সালে দুই সন্তান নীতির দ্বারা রোহিঙ্গাদের আঘাত করা হয়েছিল।