দুর্ঘটনার পর শহরে তেজস্ক্রিয়তার হার কতটা বেড়েছিল জানাল রাশিয়া
রাশিয়ার সেভেরদ্ভিন্সক শহরে গত ৮ আগস্ট নৌবাহিনীর একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে রকেট ইঞ্জিন বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই অঞ্চলে তেজস্ক্রিয়তার হার ১৬ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় আবহাওয়া সংস্থার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস।
গত বৃহস্পতিবারের ওই দুর্ঘটনার পর সেখানে তেজস্ক্রিয়তার হার স্বাভাবিক ছিল বলে দাবি করেছিল রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে দুর্ঘটনার পর কিছু সময়ের জন্য ওই অঞ্চলে তেজস্ক্রিয়তার হার বেড়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছিল রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সেভেরদ্ভিন্সক শহরের প্রশাসন। এদিকে পরিবেশবিষয়ক সংস্থা গ্রিনপিস জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর ওই অঞ্চলে তেজস্ক্রিয়তার হার স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ২০ গুণ বেড়ে যায়।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় আবহাওয়া সংস্থা আজ মঙ্গলবার জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর ওই অঞ্চলে তেজস্ক্রিয়তার হার স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ৪ থেকে ১৬ গুণ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল।
গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ায় নৌবাহিনীর একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে রকেট ইঞ্জিন বিস্ফোরণে পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরো তিনজন। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত পারমাণবিক প্রতিষ্ঠান রোসাটম বিষয়টি নিশ্চিত করে।
গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ রাশিয়ার নিয়নসকায় একটি রকেট ইঞ্জিনের পরীক্ষার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
রাশিয়ার গণমাধ্যমকে রোসাটম জানায়, ওই পরীক্ষাকেন্দ্রে তরল রকেট ইঞ্জিনের চালিকাশক্তি হিসেবে ‘আইসোটপ শক্তি উৎস’ নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছিল প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ও কারিগরি দল। এ পরীক্ষার সময়ই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল, ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রসহ রাশিয়ার নৌবাহিনীর সব ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার পরীক্ষা চালানো হয় নিয়নসকা কেন্দ্রে।
রোসাটম কর্তৃপক্ষ জানায়, গত বৃহস্পতিবার নিয়নসকা থেকে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার পূর্বে সেভেরদ্ভিন্সক এলাকায় এই রকেট ইঞ্জিনের পরীক্ষা চালানো হচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ করেই বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের কিছু সময়ের মধ্যেই প্রায় ৪০ মিনিটের জন্য ওই এলাকায় তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। তবে ৪০ মিনিট পরই তা আবার স্বাভাবিক মাত্রায় নেমে আসে।
জানা যায়, বিস্ফোরণের পরপরই তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষা পেতে মেডিকেল আয়োডিন কিনতে ছোটেন আরখানগেলস্ক ও সেভেরদ্ভিন্সক অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারা। এর ফলে ওই অঞ্চলের ফার্মেসিগুলোতে আয়োডিনের সংকট দেখা দিয়েছে।
এর আগে আরখানগেলস্কের একটি নিউজপোর্টালে স্থানীয় বাসিন্দাদের আয়োডিন কেনার খবর প্রকাশিত হয়েছিল।
নিউজপোর্টালটি আরো জানিয়েছিল, রাসায়নিক ও পারমাণবিক সুরক্ষা পোশাক পরে নিয়নসকা পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে আহতদের উদ্ধার করেন উদ্ধারকর্মীরা।
এর আগে ১৯৮৬ সালে ইউক্রেনে চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনার সময় আয়োডিনের মজুদের ঘটনা দেখা গিয়েছিল।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়নসকা নৌবাহিনীর পরীক্ষাকেন্দ্রে রকেট ইঞ্জিন বিস্ফোরণের পর ৪০ মিনিট ধরে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার জানায় সেভেরদ্ভিন্সক প্রশাসন। কিন্তু কিছু সময় পরে অনলাইন থেকে সে তথ্য সরিয়ে ফেলা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘এর কারণ, বিস্ফোরণটি ঘটেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে।’
অন্যদিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশের পরিবেশে কোনো ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক বা তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়নি।